ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ১১ মে ২০২৪, ২৭ বৈশাখ ১৪৩১

জেএমবি-হুজিকে অর্থায়ন করে পাকি জঙ্গী গ্রুপ, তৎপর বাংলাদেশে

প্রকাশিত: ০৫:৩৫, ৪ এপ্রিল ২০১৬

জেএমবি-হুজিকে অর্থায়ন করে পাকি জঙ্গী গ্রুপ, তৎপর বাংলাদেশে

শংকর কুমার দে ॥ পাকিস্তান সমর্থিত জিহাদী জঙ্গী গ্রুপগুলো তৎপরতা চালাচ্ছে বাংলাদেশে। এর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে পাকিস্তানভিত্তিক লস্কর-ই-তৈয়বা (এলইটি)। এলইটির এ নেতারা জামাআ’তুল মুজাহিদীন বাংলাদেশ (জেএমবি), হরকাত-উল-জিহাদ-আল ইসলামির (হুজি) মতো বাংলাদেশের জঙ্গী সংগঠনগুলোকে অর্থায়ন করত ও প্রশিক্ষণ দিত। এ ছাড়াও লস্কর-ই-তৈয়বা বাংলাদেশে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের চরমপন্থী বানিয়ে তাদের ভারতে সন্ত্রাসী হামলার জন্য নিয়োগ দেয়ার কাজও করছে। বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) ও জামায়াতে ইসলামীর নেতাদের সঙ্গেও যোগাযোগ রাখাসহ অর্থ সহায়তা করে থাকে পাকিস্তানের গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআই। যুদ্ধাপরাধীর বিচারের রায়ের বিরুদ্ধেও পাকিস্তানের গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআই বাংলাদেশে ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে তৎপরতা চালাচ্ছে। গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদনে এ ধরনের তথ্য জানা গেছে। গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, পাকিস্তানের এলইটির প্রতিষ্ঠাতা হাফিজ সাঈদ বেশ কিছুদিন আগে গোপনে ছদ্মনামে বাংলাদেশ সীমান্তের শরণার্থী ক্যাম্পগুলো পরিদর্শনে করে গেছেন। রোহিঙ্গা শরণার্থীদের চরমপন্থী বানিয়ে সন্ত্রাসী তৎপরতায় নিয়োগের প্রচেষ্টার অংশ হিসেবেই তার এ সফর। গত নবেম্বরে ঢাকায় গ্রেফতারকৃত সাত জেএমবি জঙ্গীর মধ্যে চারজনই ছিল পাকিস্তানী। এর এক মাস পর সন্ত্রাসবিরোধী অভিযানে গ্রেফতার হয় আরও তিন পাকিস্তানী নাগরিক। গত বছর বাংলাদেশে গ্রেফতার হওয়া আন্তর্জাতিক জঙ্গী সংগঠনের চার সদস্য তদন্তকারীদের জানিয়েছেন, তারা পাকিস্তানে প্রশিক্ষণ নিয়েছেন। গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, ২০১০ সালে যুক্তরাষ্ট্র (ইউএস) ট্রেজারি ডিপার্টমেন্ট বিশেষভাবে আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসী হিসেবে এলইটির তিন অর্থদাতার নাম তালিকাভুক্ত করে। এদের মধ্যে মোহাম্মদ নাওশাদ আলম খান জাল মুদ্রা পাচারের দায়ে ২০০৮ সালে ঢাকার পুলিশের হাতে গ্রেফতার হয়েছিলেন। এসব জাল মুদ্রা ভারতে পাচার ছাড়াও বাংলাদেশের জঙ্গীদের হাতে তুলে দেয়ার ঘটনা ঘটছে। এ ছাড়াও বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) সঙ্গে পাকিস্তানী গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআইয়ের যোগসূত্র খুবই পুরানো ঘটনা। গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদনে উদাহরণ হিসেবে উল্লেখ করা হয়, ২০১২ সালে পাকিস্তানের সুপ্রীমকোর্টে শুনানির সময় আইএসআইয়ের তৎকালীন মহাপরিচালক জেনারেল আসাদ দুররানী জানিয়েছিলেন, বাংলাদেশে ডানপন্থী ও ইসলামী রাজনৈতিক দলকে নির্বাচনে প্রভাব ফেলতে অর্থ দেয়া হয়েছিল। ১৯৯১ সালের বাংলাদেশের নির্বাচনে আইএসআই বিএনপিকেও অর্থ দেয়। শেখ হাসিনার আওয়ামী লীগ ভারতের ঘনিষ্ট হওয়ায় তাকে রুখতে এই অর্থ দেয় পাকিস্তানের গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআই। বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) নেতা সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীর যুদ্ধাপরাধের দায়ে ফাঁসির পর গভীর উদ্বেগ ও ক্ষোভ প্রকাশ করেন চৌধুরী নিসার। এ ছাড়াও যুদ্ধাপরাধের বিচারে জামায়াত নেতাদের ফাঁসির রায় কার্যকর করায় পাকিস্তানের জাতীয় সংসদেও যুদ্ধাপরাধীর বিচার নিয়ে ক্ষোভ ও উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়। এর প্রতিবাদে বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানানোর ঘটনা প্রবাহের মধ্য দিয়ে আইএসআইয়ের তৎপরতার বিষয়টি জনসমক্ষে প্রকাশ পায়। অনুসন্ধানী সাংবাদিক ডেভিড বার্গম্যান বেশ কয়েকটি বিশ্বস্ত সূত্র নিশ্চিত করার উদ্ধৃতি দিয়ে লিখেছিলেন, বিএনপির এই সাবেক সংসদ সদস্য সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী যে আইএসআই রিক্রুট করেছিল। বাংলাদেশের জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সপরিবারে নিহত হওয়ার পর ১৯৭৫ সালের কোন এক সময় বিএনপির সাবেক এই সংসদ সদস্য যুদ্ধাপরাধীকে নিয়োগ করেছিল আইএসআই। এরপর তার যুদ্ধাপরাধের ফাঁসির রায় কার্যকর করার আগ পর্যন্ত বাংলাদেশে পাকিস্তানের মূল এজেন্টে পরিণত হয়ে বিএনপির পক্ষে কাজ করে যাচ্ছিলেন। গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকারকে উৎখাত করতে একের পর এক ষড়যন্ত্র করে যাচ্ছে পাকিস্তানের গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআই। পাকিস্তানভিত্তিক লস্কর-ই-তৈয়বা (এলইটি)। এলইটির এ নেতারা জামাআ’তুল মুজাহিদীন বাংলাদেশ (জেএমবি), হরকাত-উল-জিহাদ-আল ইসলামি’র (হুজি) মতো বাংলাদেশের জঙ্গী সংগঠনগুলোকে অর্থায়ন করত ও প্রশিক্ষণ দিয়ে বাংলাদেশে সন্ত্রাসী হামলার জন্য তৎপরতায় ইন্দন দেয়। বাংলাদেশে সম্প্রতি যেসব সন্ত্রাসী হামলা ঘটেছে তার জন্য এসব জঙ্গী সংগঠনই মূলত দায়ী বলে গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।
×