ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ১১ মে ২০২৪, ২৮ বৈশাখ ১৪৩১

এখনও এগিয়ে বগুড়া

সার্কের সাংস্কৃতিক রাজধানী ঘোষণা অক্টোবরে

প্রকাশিত: ০৬:৩৫, ১৭ মার্চ ২০১৬

সার্কের সাংস্কৃতিক রাজধানী ঘোষণা অক্টোবরে

সমুদ্র হক ॥ দক্ষিণ এশিয়া আঞ্চলিক সহযোগিতা সমিতির (সার্ক) সাংস্কৃতিক রাজধানী (কালচারাল ক্যাপিটাল) ঘোষণার সময় পিছিয়েছে। সব কিছু ঠিক থাকলে এ বছরের অক্টোবর নাগাদ বাংলাদেশের তিন জেলা শহরের মধ্যে একটিকে বেছে নিয়ে এক বছরের জন্য সাংস্কৃতিক রাজধানী ঘোষণা করবে সার্কের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান সার্ক কালচারাল সেন্টার। তিন শহর হলো বগুড়া কুষ্টিয়া ও কুমিল্লা। সূত্র জানায়, তিনটি জেলার সার্বিক অবস্থার সরেজমিনে পরিদর্শন জরিপ ও বিশ্লেষণ করে এখন পর্যন্ত উত্তরাঞ্চলের মধ্যনগরী প্রাচীন পুন্ড্রু বর্ধনভুক্তির রাজধানীখ্যাত বগুড়ার মহাস্থানগড় (যার আরেক নাম পুন্ড্রুনগরী) কালচারাল রাজধানী হিসেবে নির্বাচিত হয়ে আছে। রাজধানী ঢাকা থেকে যাতায়াতের সুব্যবস্থা, উন্নত পথঘাট, আবাসন ও মিলনায়তন এসব দিক বিবেচনায় আড়াই হাজার বছরের প্রাচীন নগরী বগুড়ার মহাস্থানগড়কেই বেছে নেয়া হয়েছে। উল্লেখ্য, গত বছর থেকে সার্কের কালচারাল ক্যাপিটাল ঘোষণার রেওয়াজ শুরু হয়েছে। সার্কের প্রথম কালচারাল রাজধানী ঘোষণা করা হয় সার্কের সর্বশেষ ৮ম অন্তর্ভুক্তি দেশ আফগানিস্তানের ঐতিহাসিক নগরী বামিয়ানকে। গত বছরের জানুয়ারি মাস থেকে বামিয়ান নগরী সংস্কৃতির সাজে সেজেছে। গত বছর ডিসেম্বরে এক বছর পূর্ণ হওয়ার পর চলতি বছর সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সময় বাড়ানো হয়েছে। আফগানিস্তানের ওই নগরীতে অষ্ট দেশীয় সাংস্কৃতিক কার্যক্রম শেষ হওয়ার সঙ্গেই বাংলাদেশের নাম ঘোষিত হবে। সূত্র জানায়, ঘোষণার সঙ্গেই বাংলাদেশ দ্রুত কর্মসূচী গ্রহণ করে বাস্তবায়িত করবে। সেই প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। এরই মধ্যে দেশের সর্ব উত্তরের পঞ্চগড় জেলার বাংলাবান্ধা ট্রানজিট পয়েন্টকে স্থল বন্দরে রূপান্তর করে সার্কভুক্ত চারটি দেশের যাত্রী ও যানবাহল চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করা হয়েছে। বাংলাবান্ধা সীমান্তের ওপারে ভারতীয় অংশের দশ কিলোমটিার পরই পশ্চিমবঙ্গের শিলিগুড়ি। একই পয়েন্ট থেকে নেপাল ও ভুটানের দূরত্ব যথাক্রমে ৪০ ও ১শ’ ৩০ কিলোমিটার। বাংলাদেশ সাংস্কৃতিক রাজধানী থাকাকালীন চার দেশের সড়ক যোগাযোগ খুবই সহজ হবে। কারণ সড়কপথে বগুড়া থেকে ওই তিন দেশের দূরত্ব কম। তবে শ্রীলঙ্কা পাকিস্তান আফগানিস্তান ও মালদ্বীপের লোকজনকে উড়াল পথেই আসতে হবে। বগুড়া সার্ক কালচারাল ক্যাপিটাল হওয়ার সম্ভাবনা শতভাগ, তা নিশ্চিত করেছেন সার্ক কালচারাল সেন্টারের পরিচালক বসন্তে কুতুয়েল্লা ও উপ-পরিচালক সুন্দরিয়া দেবী রেড্ডিগো। দুই সদস্যের এই প্রতিনিধি গত বছর জুলাই মাসের শেষে বগুড়া কুষ্টিয়া ও কুমিল্লা পরিদর্শন করেন। বগুড়ার মহাস্থানগড়ের যে স্থানে গত শতকের ’৯০-এর দশকে শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট প্রেমাদাসা (প্রয়াত) সফর করেন সেই স্থান ঘুরে ঘুরে দেখেন তারা। সুন্দরীয়া দেবী মন্তব্য করেন ‘বগুড়া ইজ সুইটেবল ফর কালচারাল সিটি এ্যান্ড ইট উইল গেট হানড্রেড পারসেন্ট প্রাইওরিটি ইন অল রেসপেক্ট ...’। উল্লেখ্য, সার্ক কালচারাল সেন্টার শ্রীলঙ্কায় অবস্থিত। তারাই কালচারাল ক্যাপিটাল ঘোষণা করে। সার্ক সংস্কৃতি রাজধানী ঘোষণার সঙ্গেই সেই নগরী এক বছরের জন্য মুখরিত হয়ে থাকে সংস্কৃতির সকল কর্মকা-ের কার্যক্রমে। একাধিক সূত্র জানায়, সার্কের সাংস্কৃতি রাজধানী নিয়ে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়। এই মন্ত্রণালয়ের অধীনে সকল প্রতিষ্ঠান এখন ব্যস্ত। বিশেষ করে প্রতœতত্ত্ব অধিদফতর, শিল্পকলা একাডেমি এবং এর সঙ্গে সম্পৃক্ত সকল প্রতিষ্ঠান বছরজুড়ে আয়োজনের ডালা ভরাতে ও ৮ দেশের মিলনমেলা সাজাতে মাঠে নেমেছে। সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে আয়োজন সফল করার অংশীদারিত্ব নিতে হয়েছে পররাষ্ট্র ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে। সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের সূত্র জানায়, প্রাচীন বঙ্গীয় বদ্বীপের বাংলাদেশের কোন নগরীকে সার্ক কালচারাল ক্যাপিটাল ঘোষণায় দেশে দেশে মানুষে মানুষে অপার মেলবন্ধনের অপূর্ব সুযোগ এসেছে। আমাদের শিল্প-সাহিত্য সংস্কৃতি কত সমৃদ্ধ ইতিহাসের কত গভীরে গ্রোথিত তা দেখে যাবে সার্কভুক্ত দেশের মানুষের সঙ্গে বিশ্বের মানুষ। এই কার্যক্রমে পর্যটনেরও অনেক বড় বিকাশ ঘটবে। মানুষে মানুষে মিলন বন্ধনে পর্যটন শিল্পের অগ্রযাত্রায় শরিক হয় প্রতœতত্ত্ব অধিদফতর। মেলবন্ধনের কয়েকটি প্রকল্প বাস্তবায়নে এগিয়ে এসেছে সাউথ এশিয়া ট্যুরিজম ইনফ্রাস্ট্রাকচার ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্ট। সূত্র জানায়, ১৫ মিলিয়ন ডলার ব্যয়ে প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হবে। এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক ১২ মিলিয়ন ডলার ঋণ দিতে রাজি হয়েছে। বাকি ৩ মিলিয়ন ডলার দিয়েছে সরকার। পরিকল্পনাটি বাস্তবায়িত হলে পর্যটন শিল্পের উন্নয়নের সঙ্গে এলাকার উন্নয়ন হয়ে নবযুগের সূচনা করবে।
×