ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

ক্ষতি আমানতকারীরই

প্রকাশিত: ০৩:৪২, ১৩ মার্চ ২০১৬

 ক্ষতি আমানতকারীরই

আমানতকারীদের জন্য কোন সুসংবাদ পাওয়া যাচ্ছে না। বরং একের পর এক ক্ষতিরই আশঙ্কা! এক মাসের ব্যবধানে আবারও মেয়াদী আমানতের সুদ হার কমাল রাষ্ট্র মালিকানাধীন বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো। মেয়াদী আমানতের সুদ হার দশমিক ৫০ শতাংশ থেকে সর্বোচ্চ ১ শতাংশ পর্যন্ত কমিয়েছে। এখন মেয়াদী আমানতে আমানতকারীরা রাষ্ট্র মালিকানাধীন ব্যাংকগুলো থেকে সর্বোচ্চ ৬ দশমিক ৫০ শতাংশ সুদ পাবেন। গত বছরও দফায় দফায় সুদের হার কমানো হয়েছিল। তবে লক্ষণীয় হলো বিগত বছরের মতো এবারও আমানতের সুদ হার কমানো হলেও ঋণের সুদ হার অপরিবর্তিতই রাখা হয়েছে। অর্থনীতির সূত্র অনুসারে আমানতের সুদ হারের পাশাপাশি যদি ঋণের সুদ হারও কমানো না হয়, তাহলে খুব বেশি সুফল পাওয়া যায় না। আমাদের আশঙ্কা আমানতের সুদের হার কমানোয় এখন ক্ষতিগ্রস্ত হবেন সাধারণ আমানতকারীরাই। এবার আমানতের সুদ হার কমানোর কারণ কি? সংশ্লিষ্টরা বলছেন, মূল্যস্ফীতি কমায় এবং বিনিয়োগের সুযোগ কম থাকায় আমানতের সুদের হার কমানোর সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে বিনিয়োগের সুযোগ সৃষ্টির জন্য কোন ইতিবাচক উদ্যোগ কি গ্রহণ করা হয়েছে? বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ তথ্য মতে, শিল্প খাতে মেয়াদী ঋণে ১৫ থেকে ১৮ শতাংশ পর্যন্ত সুদ আদায় করছে ব্যাংকগুলো। অথচ এর সঙ্গে সার্ভিস চার্জ আদায় করা হচ্ছে কিছুটা বেপরোয়াভাবে। ঋণের সুদ হারের পাশাপাশি ঋণ প্রক্রিয়াকরণ ফি বাবদ ব্যাংকগুলো বিভিন্ন ধরনের চার্জ নিচ্ছে। এছাড়া মেয়াদ পূর্তির আগে ঋণ সমন্বয় করতে চাইলে কোন কোন ব্যাংক এ বাবদ অতিরিক্ত ৩ থেকে ৪ শতাংশ চার্জ আদায় করছে। যার ফলে সামগ্রিকভাবে উদ্যোক্তাদের ২০ থেকে ২২ শতাংশ হারে সুদ গুনতে হচ্ছে। আমরা আগেও বলেছি, এই হারে সুদ নিয়ে যারা শিল্প প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছেন তাদের ব্যবসা-বাণিজ্য সবচেয়ে বেশি ঝুঁকির মধ্যে পড়েছে। শুধু তাই নয়, ব্যাংকে বেড়ে যাচ্ছে খেলাপী ঋণ। এমন অবস্থায় গড়ে উঠতে পারছে না নতুন শিল্প-কারখানা। আবার যেসব শিল্প প্রতিষ্ঠান নির্মাণের উদ্যোগ কিছুটা এগিয়েছিল তাও মাঝপথে থেমে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে ব্যাংকের উচ্চ সুদের কারণে। তাহলে নতুন বিনিয়োগ হবে কিভাবে? প্রসঙ্গত, এর আগে আমরা দেখেছি সব ধরনের সঞ্চয়পত্রে সুদের হার কমানোর সরকারী সিদ্ধান্ত গৃহীত হতে। সাধারণ মানুষের বুকের ভেতর হাতুড়ির বাড়ি পিটিয়েছে পাঁচ বছর মেয়াদী সঞ্চয়পত্রের সুদ হার হ্রাস। একথা সবারই জানা যে, সঞ্চয়পত্র হলো স্বল্প আয়ের মানুষের নির্ভরতার জায়গা। এই আমানত তাকে নিরাপত্তা দেয়। মানুষ রাষ্ট্র তথা সরকারের কাছ থেকেই এই অর্থনৈতিক নিরাপত্তা প্রত্যাশা করে। এই একটি খাতে সাধারণ মানুষ চোখ বন্ধ করে বিনিয়োগ করে। শেয়ারবাজারে ধস নামার বাস্তবতায় দেশের নিম্ন আয়ের মানুষ প্রধানত সঞ্চয়পত্র খাতের মাধ্যমেই বিনিয়োগ করে থাকে। তাই মেয়াদী সঞ্চয় হোক, কিংবা সঞ্চয়পত্র হোক, সাধারণ মানুষের বিকল্প উৎসের আয় হ্রাসের প্রক্রিয়া সমর্থনযোগ্য নয়। সুদের হার কমায় আমানতকারীরাই ক্ষতির সম্মুখীন হবেন। তাই আমরা আশা করব নতুন সিদ্ধান্তটি সরকার পুনর্বিবেচনা করবে। সেই সঙ্গে একথাও বলা দরকার, ব্যাংকগুলোকে তাদের পরিচালন খরচ কমানো ও অপচয় রোধে উদ্যোগী হতে হবে। খেলাপী ঋণ আদায়েও প্রত্যাশিত গতি চাই।
×