ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

ফাঁসিই বহাল

প্রকাশিত: ০৩:৪৪, ১০ মার্চ ২০১৬

ফাঁসিই বহাল

একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধের মাধ্যমে একজন নরহত্যাকারী হয়ে নিজেকে সে পরিণত করেছিল যুদ্ধাপরাধী হিসেবে। একটি দেশ ও একটি জাতির বিরুদ্ধে দখলদার পাকিস্তানী হানাদার বাহিনীর সহায়ক হিসেবে হত্যা, লুটপাটসহ নারকীয় বিভিন্ন কর্মকা-ে জড়িত থাকাই শুধু নয়, আলবদর নামক একটি সশস্ত্র সংগঠনেরও ছিল অধিকর্তা তথা তৃতীয় প্রধান ব্যক্তি। যেখানেই মুক্তিযোদ্ধা ও স্বাধীনতাকামী বাঙালী, সেখানেই মূর্তিমান আতঙ্ক হিসেবে আবির্ভূত হতো মীর কাশেম। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে এই নরহত্যাকারী ছিল হানাদার সহযোগী জামায়াতে ইসলামীর ছাত্র সংগঠন ইসলামী ছাত্র সংঘের পূর্ব পাকিস্তান শাখার সাধারণ সম্পাদক। একই সঙ্গে আলবদরের চট্টগ্রাম শাখার প্রধান। সে নিজেই কেবল অপরাধমূলক কর্মকা-ে অংশ নিয়েছে তা নয়, একই সঙ্গে সে তার সশস্ত্র সহযোগীদেরও অপরাধ সংঘটনের নির্দেশদাতাও ছিল। বাঙালীর কাছে ছিল সে এক ঘৃণ্য নরঘাতক। মীর কাশেম, একাত্তরের যুদ্ধাপরাধী হিসেবে একটি গণধিক্কৃত নামও। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল ফাঁসিতে ঝুলিয়ে তার মৃত্যুদ- কার্যকর করার যে নির্দেশনা দিয়েছিল আপীল বিভাগ সেটাই বহাল রেখেছে। মামলা চলাকালে প্রসিকিউশন বর্তমানে ৬৪ বছর বয়সী মীর কাশেমকে আখ্যায়িত করে পাকিস্তানী খান সেনাদের সঙ্গে মানবতাবিরোধী অপরাধে লিপ্ত হওয়া ‘বাঙালী খান’ হিসেবে। ষোলো মাস আগে ট্রাইব্যুনালের রায়ে দুই অভিযোগে তার মৃত্যুদ- এবং আট অভিযোগ মিলিয়ে ৭২ বছরের কারাদ- হয়। আপীলের রায়ে তার মৃত্যুদ- বহাল রাখা হয়। একে একে মানবতাবিরোধী যুদ্ধাপরাধী, ঘাতক ও স্বাধীনতাবিরোধীদের বিচারের রায়ের মাধ্যমে জাতি ক্রমেই কলঙ্কমুক্ত হচ্ছে। এই অপরাধীদের এতদিন বিচার না হওয়াটা ছিল সত্যিকার অর্থে জাতির জন্য একটি অন্ধকারাচ্ছন্ন অধ্যায়। তাদের অপরাধ প্রমাণিত। মীর কাশেম তার অপরাধের জন্য যেমন কোন অনুতাপ প্রকাশ করেনি। তেমনি বাংলাদেশের স্বাধীনতাকে স্বীকার করেনি। মুক্তিযুদ্ধ ছিল তার কাছে পাকিস্তানবিরোধী তৎপরতা। পাকিস্তান রক্ষার জন্য পাকি হানাদারদের পদলেহন করে বাঙালী নিধনে মত্ত হয়েছিল একদা ইসলামী ছাত্র সংঘ সম্পাদক ও আলবদরের নেতা কাশেম। মীর কাশেমের নির্দেশে চট্টগ্রামের মহামায়া হোটেলকে ডালিম হোটেলে রূপান্তরিত করে টর্চার সেলে পরিণত করা হয়েছিল। চট্টগ্রামে হেন অপরাধ নেই যা, তার নির্দেশে তার বাহিনী সংঘটিত করেনি। স্বাধীনতার পর আত্মগোপনে থাকা মীর কাশেম জিয়াউর রহমানের পৃষ্ঠপোষকতায় প্রকাশ্যে আসে এবং ইসলামী ছাত্র সংঘকে ইসলামী ছাত্র শিবিরে রূপান্তরিত করে তার প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি হয়। ১৯৮৫ সাল থেকে জামায়াতের পঞ্চম শীর্ষ নেতার আসন নেয়। আলবদর থেকে পরিণত হয় ধনকুবেরে, জামায়াতের আর্থিক ভিত্তি মজবুত করার কাজে ছিল সক্রিয়। ইতিহাস তাকে ক্ষমা করেনি। জাতি হিসেবে বাঙালীও ক্ষমা করেনি, করবে না। ইতিহাসের দায় তাকে মেটাতেই হবে। একাত্তরের জল্লাদরা যতই হম্বিতম্বি করুক না কেন, আইনের দ- তাদের পেতেই হচ্ছে। তার মৃত্যুদণ্ড বহালের রায়ে শহীদ পরিবারসহ দেশের মানুষ স্বস্তির নিশ্বাস ফেলেছে। দ-াদেশের প্রতিবাদে আগের মতো এবারও জামায়াত হরতাল ডেকেছে তাদের ওয়েবসাইটের মাধ্যমে। এই হরতাল মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতার বিরুদ্ধে যেমন, তেমনি আদালতের বিরুদ্ধে। দেশবাসী যা রুখে দিয়েছে।
×