ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ১১ মে ২০২৪, ২৭ বৈশাখ ১৪৩১

বাংলাদেশের স্বপ্ন পূরণের যাত্রা শুরু আজ

প্রকাশিত: ০৫:৫১, ৯ মার্চ ২০১৬

বাংলাদেশের স্বপ্ন পূরণের যাত্রা শুরু আজ

মিথুন আশরাফ, ধর্মশালা থেকে ॥ ‘স্বপ্ন সেটা নয় যেটা তুমি ঘুমিয়ে দেখ। স্বপ্ন সেটা যেটা তোমায় ঘুমোতে দেয় না।’-কথাটি বলেছেন ভারতরতœ পুরস্কার পাওয়া ‘ভারতের মিসাইল ম্যান খ্যাত পরমাণু বিজ্ঞানী প্রয়াত আবুল পাকির জয়নুল আবেদিন আবদুল কালাম। যাকে এ পি জে আবদুল কালাম নামেই সবাই চেনেন। বাংলাদেশ দলের ক্রিকেটাররা এবার টি২০ ক্রিকেট বিশ্বকাপে কি রকম করে স্বপ্ন দেখছে? ঘুমিয়ে দেখছে, না তাদের ঘুম হারাম হয়ে গেছে? তা সময়ই বলবে। তবে আজ ধর্মশালায় বাংলাদেশ সময় বেলা সাড়ে তিনটায় হল্যান্ডের সঙ্গে ম্যাচ দিয়ে বিশ্বকাপের মিশন শুরু হচ্ছে বাংলাদেশের। যে মিশনে শুরুতেই বাংলাদেশের সামনে দাঁড় হচ্ছে প্রথম রাউন্ড অর্থাৎ বাছাইপর্ব পেরিয়ে যাওয়ার লড়াই। আজ হল্যান্ডের সঙ্গে ম্যাচ শেষে শুক্রবার আয়ারল্যান্ডের ও রবিবার ওমানের সঙ্গে বাছাইপর্বের ম্যাচ খেলবে বাংলাদেশ। এরপর বাছাইপর্ব উতরাতে পারলে সুপার টেনে পাকিস্তান, অস্ট্রেলিয়া, ভারত ও নিউজিল্যান্ডের সঙ্গে খেলবে বাংলাদেশ। স্বাভাবিকভাবেই বাংলাদেশের স্বপ্ন বড় হওয়ারই কথা। সেটি সেমিফাইনাল বা ফাইনালে খেলার স্বপ্ন হলেও অবাক হওয়ার কিছু নেই! এশিয়া কাপের ফাইনালে খেলার পর স্বপ্ন কী আর ছোট্ট থাকে? ভারতের মাটিতে খেলা। উপমহাদেশের উইকেট। বাছাইপর্ব অতিক্রম করলে সুপার টেনে অন্তত দুই দলকে হারাতে পারলেই তো হয়ে যায়! সেটাতে খুব সম্ভব। তবে বাংলাদেশ অধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্তুজা বলেছেন, ‘আগে প্রথম রাউন্ডের খেলা আছে। সেই রাউন্ড নিয়েই ভাবতে হবে। এরপর সামনে যা আসবে তা নিয়ে চিন্তা করতে হবে।’ এশিয়া কাপে পাকিস্তান ও শ্রীলঙ্কাকে হারিয়ে ফাইনালে খেলা নিশ্চিত করার পরত এও প্রশ্ন উঠছে, বাংলাদেশের মতো দলকে কেন প্রথম রাউন্ডে খেলতে হবে? মাশরাফি সেই জবাবও দিয়েছেন, ‘এটা তো আগে থেকে হয়েই ছিল। এশিয়া কাপ ভাল খেলছি বলে এখন প্রশ্ন আসছে। কিন্তু সেটআপ তো আগে থেকেই ছিল। এটা নিয়ে ভাবার কিছু নেই। এটা একটা প্রক্রিয়া, সেটার ভেতর দিয়ে যেতে হবেই। ভাল খেলছি, ভাল খেললে বিশ্বকাপের বাছাইয়েও ভাল করব।’ বোঝাই যাচ্ছে, প্রথম রাউন্ড পেরিয়ে যাওয়ার আশা এমনিতেই আছে বাংলাদেশের। সেখানে হল্যান্ডকে আজ হারিয়েই সেই পথে এগিয়ে যেতে হবে বাংলাদেশকে। এমনও প্রশ্ন উঠছে, বাংলাদেশ তো আবার চমক দেখিয়ে দেবে না? সেমিফাইনাল বা ফাইনালে ওঠার চমকের দিকেই ইঙ্গিত করা হচ্ছে। মাশরাফি বলেছেন, ‘না, আমরা চমক দেয়ার জন্য কিছু করব না।’ তা মাশরাফি চমক দেয়ার কোন ইচ্ছার কথা না জানাক, সবার মনের আশা এবার বাংলাদেশ চমক দেখাবে। আর সেই আশা তৈরি হয়েছে এশিয়া কাপের জন্যই। তবে প্রতিপক্ষ আজ হল্যান্ড বলে একটু সংশয়ও আছে। শুরুতেই না বাংলাদেশ হোঁচট খেয়ে যায়, সেই শঙ্কাও আছে। হল্যান্ড যে এর আগে বাংলাদেশকে ২০১২ সালে দুই ম্যাচের টি২০ সিরিজের একটি ম্যাচে হারিয়ে দিয়েছিল। আবার ধর্মশালায় যে ঠা-া, তাতে হল্যান্ডের জন্য কন্ডিশনের সঙ্গে মানিয়ে নেয়া সুবিধাই হয়েছে। সেখানে বাংলাদেশ একদিন আগে ধর্মশালায় পা রেখেছে। একদিনের অনুশীলন করেই খেলতে নামতে হচ্ছে। এশিয়া কাপে টানা ম্যাচ খেলতে হয়েছে। এজন্য একটু হলেও ক্রিকেটাররা ক্লান্ত। সেই ক্লান্তির সঙ্গে ঠা-া আবহাওয়া ম্যাচে প্রভাব ফেললে, বিপদও ঘনিয়ে আসতে পারে! যেই চিন্তা আসলে কারও মাথাতেই নেই। থাকারও কথা নয়। ইতিবাচক চিন্তা করাই যে এখন উত্তম হয়ে দাঁড়িয়েছে। পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কার মতো দল যেখানে কয়েকদিন আগেই বাংলাদেশের কাছে হেরেছে, সেখানে হল্যান্ড তো শক্তির দিক দিয়ে বাংলাদেশের চেয়ে ‘যোজন-যোজন’ দূরে। মাশরাফি এক্ষেত্রে পেশাদার মনোভাবকেই সামনে তুলে ধরেছেন। সঙ্গে দলের তরুণ ক্রিকেটারদের জন্য যে এটি একটি শিক্ষণীয় বিষয়, সেটিও এশিয়া কাপের ফাইনালের কথা তুলে বুঝিয়ে দিয়েছেন, ‘তরুণদের জন্য এটা ভাল হয়েছে যে কারিয়ারের শুরুতেই এত বড় ম্যাচে খেলা মানে তারা এখন থেকেই মানসিকতা গড়ে তুলতে পারবে। এভাবেই নিজেদের তৈরি করতে হবে যে পেশাদার ক্রিকেটারদের জীবনটা এ রকমই হয়। এটার মধ্যে আনন্দ আছে। সেটা ধরতে হবে। ফাইনালে না উঠলে হয়ত এই ফ্লেভারগুলো পেতাম না, চলে যেতাম। এখন আমার মনে হয় সবাই এটা উপভোগ করছে।’ সেই উপভোগের মন্ত্র এখন বিশ্বকাপে বাংলাদেশকে কত দূর নেয় সেটি দেখার বিষয়। বাংলাদেশ এশিয়া কাপ খেলেছে নিজেদের মাটিতে। টি২০ বিশ্বকাপ খেলবে ভারতের মাটিতে। প্রথম রাউন্ড খেলবে আবার ধর্মশালায়। যেখানে কখনই খেলেনি বাংলাদেশ। প্রথম ম্যাচে যে হল্যান্ডের সঙ্গে খেলবে মাশরাফিরা, সেই ম্যাচেই আসলে বোঝা যাবে বাংলাদেশ দল কত দূর এগিয়ে যেতে পারবে। ২০০৭ সালে প্রথমবার টি২০ বিশ্বকাপ হয়। সেই থেকে ৫টি বিশ্বকাপ হয়ে গেছে। এবার ষষ্ঠবারের মতো স্বল্প ওভারের বিশ্বকাপ হচ্ছে। প্রতিবারই বাংলাদেশ বিশ্বকাপে খেলেছে। ’০৭ সালে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ প্রাপ্তি মিলে। দ্বিতীয় রাউন্ডে ওঠে। এরপর আর কোন বিশ্বকাপেই এমন অর্জন মিলেনি। ২০১৪ সালে নিজ দেশে হওয়া বিশ্বকাপে প্রথমবারের মতো বাছাইপর্বে খেলে বাংলাদেশ। সেবার ধুঁকতে ধুঁকতে সুপার টেনে খেলে বাংলাদেশ। হংকংয়ের মতো দলের কাছে হেরে যায়। টি২০ র‌্যাঙ্কিংয়ের সেরা আট দল না হওয়াতে বাংলাদেশকে এবারও বাছাইপর্ব খেলতে হচ্ছে। তবে এবার বাংলাদেশকে নিয়ে অনেক বেশি স্বপ্ন দেখা হচ্ছে। টি২০তে দুর্বল দল যে হঠাৎ করেই ওয়ানডের মতো বদলে যাওয়া দলে পরিণত হয়েছে। সেই বদলে যাওয়ার রূপ এশিয়া কাপে মিলেছে। এবার টি২০ বিশ্বকাপেও মিলে যাওয়ার অপেক্ষা। সেই অপেক্ষার শুরু আজ হল্যান্ডের সঙ্গে ম্যাচ দিয়ে হচ্ছে। তবে হল্যান্ড অধিনায়ক পিটার বোরেন যে বলেছেন, ‘বিশ্বকাপে আমাদের প্রথম ম্যাচ বাংলাদেশের সঙ্গে। সেই ম্যাচ নিয়েই সবার আগে ভাবছি। ভাল খেলতে চাই। জয় তুলে নিতে চাই।’ সেটি তো আর বোরেন আত্মবিশ্বাস না থাকলে বলেননি। যে দলটি টি২০ বিশ্বকাপে দুইবার ইংল্যান্ডকে হারিয়ে দিয়েছে, সেই দলত বাংলাদেশকেও হারানোর আশা দেখতেই পারে! হল্যান্ডের আছে আশা, আর বাংলাদেশের কী আছে? আছে স্বপ্ন। সেমিফাইনাল বা ফাইনালে ওঠার স্বপ্নই আছে। তা হয়ত এখন কেউই মুখ ফুটে বলছেন না। আজ থেকেই সেই স্বপ্ন সফল করার পথের শুরু।
×