ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

মিয়ানমার-ত্রিপুরার গ্যাস

প্রকাশিত: ০৩:৪৫, ৮ মার্চ ২০১৬

মিয়ানমার-ত্রিপুরার গ্যাস

মিয়ানমার ও ত্রিপুরা থেকে গ্যাস আমদানির বিষয়টি নিঃসন্দেহে ইতিবাচক। ঢাকা চেম্বার অব কমার্স এ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই) আয়োজিত ‘৭ম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনায় শিল্প খাতে জ্বালানি ও বিদ্যুত সমস্যা ও সম্ভাবনা’ শীর্ষক এক সেমিনারে এই আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রীর জ্বালানি বিষয়ক উপদেষ্টা। তিনি এও বলেন যে, এক্ষেত্রে সরকারের পাশাপাশি বেসরকারী খাত এগিয়ে এলে সহায়তা করা হবে। স্মরণ করা যেতে পারে যে, সরকারের নীতিনির্ধারক পর্যায়ে সম্প্রতি দেশী-বিদেশী বিনিয়োগ আকৃষ্ট করার লক্ষ্যে দেশের বিভিন্ন স্থানে ১০০টি নতুন অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। তবে বিনিয়োগের জন্য অপরিহার্য হলো অবকাঠামো উন্নয়নসহ গ্যাস, বিদ্যুত ও পানি। দেশে এই তিনটিরই আপাত সমস্যা রয়েছে। পানির সমস্যা ততটা তীব্র না হলেও বিদ্যুত ও গ্যাসের সমস্যা প্রকট। কেননা, এক সময় বাংলাদেশ গ্যাসের ওপর ভাসছে বলা হলেও গত ক’বছরে নতুন গ্যাসক্ষেত্র আবিষ্কার না হওয়াসহ নতুন কূপ খনন না হওয়ায় আপাতত গ্যাসের সমস্যা তীব্র হয়ে উঠেছে। সেমিনারে জ্বালানি উপদেষ্টা অবশ্য নতুন ১০০টি কূপ খননের কথা বলেছেন আগামী পাঁচ বছরে। সেটা না হওয়া পর্যন্ত মিয়ানমার-ত্রিপুরা থেকে গ্যাস আমদানির উদ্যোগের কথা বলা হয়েছে। উল্লেখ্য, এ দুটো স্থানই গ্যাসসহ জ্বালানি ও খনিজ সম্পদে সমৃদ্ধ। মিয়ানমারের গ্যাস ইতোমধ্যে যাচ্ছে ভারত ও চীনে। ত্রিপুরার গ্যাসে উৎপাদিত হচ্ছে বিদ্যুত। বাংলাদেশের জনগণের ৭০ শতাংশ বর্তমানে বিদ্যুত সুবিধা ভোগ করছে। আগামী দু’বছরের মধ্যে ঘরে ঘরে বিদ্যুত দেয়ার কথা। তবে শিল্প খাতে এবং নতুন বিনিয়োগের ক্ষেত্রে এখনও গ্যাস ও বিদ্যুতের পর্যাপ্ত চাহিদা রয়েছে। প্রতিবেশী দেশ ও রাজ্য থেকে গ্যাস এনে আপাতত সেই জরুরী চাহিদা মেটানো যেতে পারে। সেক্ষেত্রে যদি বেসরকারী খাত এগিয়ে আসে তাহলে কাজটি ত্বরান্বিত হতে পারে। উল্লেখ্য, মিয়ানমার ও ত্রিপুরা দুটোই শিল্পের দিক থেকে পিছিয়ে আছে। সরকার যত দ্রুত কূটনৈতিক উদ্যোগ নেবে এক্ষেত্রে ততই মঙ্গল। দুটো দেশের সঙ্গেই স্থলসীমান্ত থাকায় পাইপ লাইন টানায় কোন সমস্যা হওয়ার কথা নয়। শিল্প-কারখানায় ব্যবহারের পাশাপাশি এই গ্যাস দিয়ে বিদ্যুত উৎপানও করা যেতে পারে। বর্তমানে ঘরে ঘরে ব্যবহারের জন্য যে পদ্ধতিতে অর্থাৎ পাইপ লাইনের মাধ্যমে গ্যাস দেয়া হচ্ছে তা মোটেও সাশ্রয়ী নয়, বিজ্ঞানসম্মত তো নয়ই। গ্যাসের অপচয় রোধে মিটার লাগানোসহ অবৈধ সংযোগ বন্ধে সরকার উদ্যোগ নিলেও বাস্তবে তা কার্যকর হচ্ছে না। সে অবস্থায় সিলিন্ডারের মাধ্যমে ঘরে ঘরে গ্যাস সরবরাহের কথা বলা হচ্ছে জোরেশোরে। তবে বাস্তবে অগ্রগতি খুব কম। দেশে সিলিন্ডারের সঙ্কটসহ এলপিজি গ্যাসের স্বল্পতাও রয়েছে। কয়েক বছর আগে কুয়েত থেকে জাহাজযোগে এলপিজি গ্যাস আমদানির সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। তবে নৌবন্দরে টার্মিনাল নির্মিত না হওয়ায় আটকে আছে সে পরিকল্পনা। ফলে সিলিন্ডারের গ্যাস সরবরাহের ব্যবস্থাও করা যাচ্ছে না। মিয়ানমার ও ত্রিপুরা থেকে গ্যাস আমদানির ক্ষেত্রেও যাতে অনুরূপ না ঘটে সেটি নিশ্চিত করতে হবে সরকারকে। দেশের আর্থিক উন্নয়নের গতি ত্বরান্বিত করতে হলে যে কোন গণমুখী সিদ্ধান্তের দ্রুত বাস্তবায়নের কোন বিকল্প নেই।
×