ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ১১ মে ২০২৪, ২৭ বৈশাখ ১৪৩১

বাবা-মা ও ভাইবোন হারিয়ে শিশু জারিফ এখনও হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছে

উত্তরায় গ্যাস বিস্ফোরণে দগ্ধ মা সুমাইয়াও চলে গেলেন

প্রকাশিত: ০৫:৪১, ৭ মার্চ ২০১৬

উত্তরায় গ্যাস বিস্ফোরণে  দগ্ধ মা সুমাইয়াও চলে গেলেন

নিয়াজ আহমেদ লাবু ॥ রাজধানীর উত্তরায় গ্যাসের চুলা বিস্ফোরণে দগ্ধ সুমাইয়া বেগম (৩৫) অবশেষে না ফেরার দেশে পাড়ি জমিয়েছেন। নয় দিন অসহ্য যন্ত্রণায় ছটফট করে করে রবিবার দুপুরে মোহাম্মদপুরের সিটি হাসপাতালের আইসিইউতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা গেলেন। এ নিয়ে পাঁচজনের এই সাজানো পরিবারের চারজনকেই সর্বনাশা আগুনে গ্রাস করল। সেদিনে দগ্ধ শিশুপুত্র জারিফ বিন নেওয়াজ (১১) বেঁচে থাকলেও তাকে সারাজীবন দুর্বিষহ এই যন্ত্রণা তাড়িয়ে বেড়াবে। তবে সে এখন মানসিকভাবে বিপর্যস্ত। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, সুমাইয়ার শরীরের ৯০ শতাংশ পুড়ে গিয়েছিল। শনিবার রাতে সিটি হাসপাতালে দগ্ধ সুমাইয়াকে ক্লিনিক্যালি ডেড ঘোষণা করেন চিকিৎসকরা। সুমাইয়ার দেবর মাহমুদ হাসান অভিযোগ করেন, গত রাতে চিকিৎসকদের নির্দেশে ভাবিকে (সুমাইয়া) আইসিইউতে ঢোকানো হয়। সকালে ক্লিনিক্যালি মৃত ঘোষণা করা হলেও আইসিইউ থেকে এখনও বের করা হচ্ছে না। খবর পাওয়ার পর থেকেই আমরা বলছি মৃতদেহ আমাদের কাছে ফেরত দিতে। কিন্তু হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ আইসিইউ থেকে ভাবির লাশ বের করছে না। শুক্রবার ঢামেক থেকে উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে এ হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, গত ২৬ ফেব্রুয়ারি উত্তরার ১৩ নম্বর সেক্টরের ৩ নম্বর রোডের ৮ নম্বর বাসার সাততলায় রান্নাঘরের গ্যাসলাইন বিস্ফোরণে একই পরিবারের পাঁচজন দগ্ধ হন। সেদিন রাতে মারাত্মক দগ্ধ দেড় বছরের জায়ান বিন শাহনেওয়াজ ও ১৫ বছরের শাহালিন বিন শাহনেওয়াজ ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যায়। পরদিন গত ২৭ ফেব্রুয়ারি তাদের বাবা মার্কিন দূতাবাসের মেনটেন্যান্স ইঞ্জিনিয়ার মোঃ শাহনেওয়াজের মৃত্যু হয়। দগ্ধ জারিফকে দুই ভাই ও বাবা-মার মৃত্যু সংবাদ এখনও দেয়া হয়নি। তার চাচা কামরুল হাসান বলেন, সে বার বার বলছে, বাবার কাছে যাব। মায়ের কাছে যাব। ধানম-ির সিটি হাসপাতালের ৫০৪ নম্বর কেবিনে শুয়ে এই পরিবারের একমাত্র বেঁচে যাওয়া শিশু জারিফ নানা প্রশ্নবাণে বিদ্ধ করছে স্বজনদের। জারিফের শরীরের ৬ ভাগ পুড়েছে। তার ডান পায়ের হাঁটুর নিচ থেকে পায়ের পাতা পর্যন্ত ব্যান্ডেজ। বাঁ পায়ের নিচের অংশেও ব্যান্ডেজ। তবে ডান পায়ের নিচে পুড়ে যাওয়ায় অস্ত্রোপচার করা হবে। প্রাণে বাঁচলেও হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে থাকা জারিফ মাঝে মাঝে কেঁদে ওঠে। কখনও মায়ের কাছে যেতে চায় আবার বড় ভাই শাহালিনের কথাও জিজ্ঞাসা করে। তবে বেশি জানতে চায়, ১৪ মাস বয়সের ছোট ভাই জায়ানের কথা। জারিফের চাচাত বোন মিথিলা জামান জানান, সময় যত যাচ্ছে, জারিফের স্মৃতিপটে সেদিনের কথা ভেসে উঠতে শুরু করেছে। বড় চাচা মনিরুজ্জামানের মেয়ে মিথিলাই এখন সিটি হাসপাতালে জারিফের একমাত্র সঙ্গী। নিহত শাহনেওয়াজের ফুফাত বোনের ছেলে সাকিব জানান, গত ২০ ফেব্রুয়ারি উত্তরার ফ্ল্যাটে পরিবার নিয়ে উঠেছিলেন মামা শাহনেওয়াজ। মাত্র ছয় দিনের মাথায় এমন দুর্ঘটনা ঘটবে তা কেউ কল্পনা করতে পারেনি। কে জানত আগুনে ওই পরিবারের সকলের প্রাণ কেড়ে নেবে। মৃত ইঞ্জিনিয়ার শাহনেওয়াজের ফুফাত বোন আরমিন নিশাত জানান, ভাই শাহনেওয়াজ বাড়িওয়ালাকে গ্যাস লিক হওয়ার কথা বার বার বলেছিল। আর বাড়িতে ওঠার ছয় দিনের মাথায় এই গ্যাস লিকেজের বিস্ফোরণেই তাদের মৃত্যু হয়। আগুনে পুরো পরিবারের প্রাণ কেড়ে নিল। ঘটনার পর বাড়িওয়ালা একবারের জন্যও আসেননি।
×