ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

রুখে দাঁড়িয়ে ফাইনালে

প্রকাশিত: ০৩:৫০, ৫ মার্চ ২০১৬

রুখে দাঁড়িয়ে ফাইনালে

টি-টোয়েন্টি ম্যাচে বাংলাদেশের ইতিহাস যথেষ্ট গৌরবময় নয়। বরং টাইগাররা দুর্দান্ত সাফল্য দেখানোর ক্ষেত্রে পিছিয়েই ছিল এতদিন। এই প্রথম তারা দলবদ্ধভাবে দারুণ ঝলসে উঠেছে। শুরুতে ভারতের মতো শক্তিশালী দলের বিপক্ষে হেরেও রুখে দাঁড়িয়েছে তারা এবং বিশ্বকে জানিয়ে দিয়েছে যে সীমিত ওভারের ম্যাচেই শুধু নয়, কুড়ি ওভারের ম্যাচেও তারা মোটেই ‘কুঁড়ি’ নয়, শত পাপড়ি মেলতে শুরু করেছে। বুধবার পাকিস্তানকে যেভাবে হারালো মাশরাফিবাহিনী তাতে দেশবাসী পরম স্বস্তি বোধ করেছে। মার্চ হলো স্বাধীনতার মাস, বাঙালীর আবেগমথিত মাস। সেই মাসের শুরুতে একাত্তরের পরাজিত শক্তি পাকিস্তানের ক্ষমতাবান ক্রিকেট যোদ্ধাদের দারুণভাবে হারিয়ে দিয়ে বাংলাদেশ অক্ষুণœ রাখতে সমর্থ হলো জয়ের ধারা। এ এক অনির্বচনীয় সুখ! পাকিস্তানকে হারিয়ে বাংলাদেশ ফাইনালে উঠে গেছে, প্রতিদ্বন্দ্বিতা থেকে ছিটকে পড়েছে বিরুদ্ধ শক্তি। এর মধ্য দিয়ে এক ধরনের চ্যাম্পিয়নই হয়ে গেছে বাংলাদেশ। কারণ দেশের মানুষের আবেগের যথাযথ মূল্য দিতে পেরেছে বাংলার বাঘেরা। এ এক পরম প্রাপ্তি। ফাইনালে আমরা জিতি আর নাই জিতি, সত্যিকারের জিত আমাদের হয়েই গেছে পাকিস্তান দলকে ফাইনাল থেকে ছিটকে দেয়ার ভেতর দিয়ে। শাবাশ বাংলাদেশ। আর কতবার আনন্দাশ্রুতে ভাসাবে তুমি! বুধবারের ম্যাচে শেষ তিন ওভারে টাইগারদের প্রয়োজন ছিল ২৬; যে কোন দলের জন্যই ১৮ বলে ২৬ রান তোলা প্রায় অসম্ভব একটি ব্যাপার পাকিস্তানের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে। তাই পাঁচ বল বাকি থাকতেই জয়ের লক্ষ্যমাত্রা ছুঁয়ে ফেলে বাংলাদেশ দেখিয়ে দিল তার মানসিক শক্তির জোর। এই প্রথম টি-টোয়েন্টিতে কোন অতিরিক্ত রান দেয়নি বাংলাদেশ। মনে পড়ে এক বছর আগের কথা। সফরকারী পাকিস্তান ক্রিকেট দলকে ধরাশায়ী করে সিরিজ জিতে স্বাগতিক বাংলাদেশ ক্রিকেট বিশ্বকে চিনিয়ে দিয়েছিল তাদের শক্তিমত্তা। এক ম্যাচ বাকি থাকতেই অর্জিত হয়েছিল ওই অসাধারণ বিজয়। আবেগ-উচ্ছ্বাসে ভেসে গিয়ে দেশের সকল ক্রিকেটপ্রেমীরই হৃদয়ে ধ্বনিত হয়েছিলÑ শাবাশ বাংলাদেশ! ফিল্ডিং-বোলিং-ব্যাটিংÑ প্রত্যেকটি অঙ্গনে বাংলাদেশ দল সেবার ক্রিকেটীয় বুদ্ধি ও ক্ষমতার পরিচয় রেখেছিল। আর এক বছর বাদে সেই পাকিস্তানকেই আবার বিড়াল বানাল বাঘের দল! বাইরের দুনিয়া বাংলাদেশকে যে কয়টি ইতিবাচক অর্জনের জন্য চিনছে তার ভেতর প্রথম সারিতে রয়েছে ক্রিকেট। মেধা ও প্রতিভা যদি ঈশ্বর প্রদত্ত বলে মেনেও নিই, তারপরও থাকে তার চর্চা, অনুশীলন ও সাধনার বিষয়টি। আমরা আগেও বলেছি বাঙালীর ক্রিকেটমেধা চাপা পড়ে ছিল পাকিস্তান নামক অভব্য, বাঙালীবিদ্বেষী রাষ্ট্রের কাছে। স্বাধীনতার সুন্দরতম ফসলের একটি আমাদের ক্রিকেট। আমাদের ছেলেরা বিশ্ব ক্রিকেটে নিজেদের জাদু দেখানোর সুযোগ পেয়েছে। ক্রিকেট অনিশ্চয়তার খেলা- এমন কথা বরাবরই বলা হয়ে থাকে। হ্যাঁ, অনিশ্চয়তা আছে বটে। সেটি ব্যতিক্রম হিসেবেই চিহ্নিত। অঘটন বার বার ঘটে না। ক্রিকেট শক্তির ধারাবাহিকতা বজায় থাকলে এই অঘটনের মাত্রা শূন্যের কাছাকাছি নেমে আসে। সীমিত ওভারের ম্যাচে এই উপমহাদেশ, তথা গোটা ক্রিকেট বিশ্বেরই দুই সুপার পাওয়ার পাকিস্তান ও ভারতের বিরুদ্ধে বিগত বছরগুলোয় সিরিজ জয়ের মাধ্যমে দুনিয়াকে বুঝিয়ে দেয়া হয়েছে বর্তমানে ক্রিকেটে নতুন পরাশক্তির নাম বাংলাদেশ। এশিয়া কাপে পাকিস্তান বধ হয়েছে, ভারত বধও সম্ভবপর। তাদের বিপক্ষে কাল ফাইনাল খেলছে বাংলাদেশ। ফাইনালটা জিতে নতুন ইতিহাস সৃষ্টি করুক বাংলাদেশ- এটাই এ মুহূর্তে দেশবাসীর চাওয়া।
×