ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ১১ মে ২০২৪, ২৮ বৈশাখ ১৪৩১

আইসিটি এক্সপোর উদ্বোধনী দিনে উপচেপড়া ভিড়

লাইভ টকিং রোবোটের অভ্যর্থনা, মাথার ওপর ফ্লাইং ড্রোন

প্রকাশিত: ০৫:৩১, ৪ মার্চ ২০১৬

লাইভ টকিং রোবোটের অভ্যর্থনা, মাথার ওপর ফ্লাইং ড্রোন

স্টাফ রিপোর্টার ॥ শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ^বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের তৈরি লাইভ টকিং রোবোট ‘রিবো’ অভ্যর্থনা জানাচ্ছে দর্শনার্থীদের। মাথার ওপর চক্কর দিচ্ছে বুয়েট শিক্ষার্থীদের তৈরি ফ্লাইং ড্রোন। এমন দৃশ্য রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে (বিআইসিসি) আয়োজিত তিন দিনব্যাপী বাংলাদেশ আইসিটি এক্সপো-২০১৬ তে। বৃহস্পতিবার প্রথম দিনেই এই এক্সপোতে ছিল প্রযুক্তি প্রেমীদের উপচে পড়া ভিড়। সকাল ১০টায় মেলার দ্বার উন্মুক্ত হয়। প্রতিদিন রাত ৮টা পর্যন্ত মেলা খোলা থাকবে। চলবে শনিবার পর্যন্ত। মেলায় প্রবেশের জন্য কোন ফি নেই। প্রবেশ করেই বিনামূল্যে ব্যবহার করা যাচ্ছে উচ্চ গতির ইন্টারনেট। সকাল থেকে মেলা চললেও বিকাল ৩টায় মেলার উদ্বোধন করেন পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। মেলায় ২০টির বেশি আন্তর্জাতিক ব্র্যান্ডের পাশাপাশি দেশীয় শতাধিক তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান, সংগঠন ও ২০টির বেশি মন্ত্রণালয়, বিভাগ ও অধিদফতর অংশ নিয়েছে। ৫৯টি প্যাভেলিয়ন ও ৭০টি ছোট-বড় স্টল রয়েছে। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, আইসিটির অন্যতম লক্ষ্য হলো এই খাতের উদ্যোক্তা তৈরি করা। গত বছর বাংলাদেশ পাঁচ লাখ ল্যাপটপ, তিন কোটি মোবাইল, ৬০ লাখ স্মার্টফোন আমদানি করেছে। এ ক্ষেত্রে আমদানির পরিবর্তে উৎপাদন ও এ্যাসেম্বলিং করতে হবে। এতে কর্মসংস্থানের সুযোগ এবং বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন হবে। ল্যাপটপ, মোবাইল ইত্যাদি উৎপাদনের লক্ষ্যে এরই মধ্যে হাইটেক পার্ক স্থাপনের কাজ শুরু হয়েছে। আগামী ২-৩ বছরের মধ্যে এগুলো এ পার্কে উৎপাদন করা সম্ভব হবে। এক্সপোকে লোকাল ম্যানুফ্যাকচারার্স, প্রোডাক্ট শো-কেসিং, ইনোভেশন, মিট উইথ ইন্টারন্যাশনাল ম্যানুফ্যাকচারার্স, ডিজিটাল লাইফস্টাইল, মেগা সেল, বিজনেস টু বিজনেস ম্যাচমেকিং ইত্যাদি নামে আইটি বিশেষায়িত অঞ্চলে ভাগ করা হয়েছে। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে আশা প্রকাশ করা হয়, সফটও্যয়ার ছাড়া যেমন হার্ডওয়্যার অচল, তেমনি হার্ডওয়্যার ছাড়া সফটওয়্যারেরও কোন মূল্য নেই। আবার এই দুটি অনুষঙ্গ থাকার পরও যদি এর ব্যবহার অথবা এটি সচল করার কোন কৌশল জানা না থাকে তবে সব প্রচেষ্টাই বুমেরাং হবে। এই সীমাবদ্ধতা অতিক্রম করতেই বাংলাদেশের তথ্য প্রযুক্তি খাত উন্নয়নের একটি সম্মিলিত প্রয়াস হচ্ছে আইসিটি এক্সপো। এটা তথ্যপ্রযুক্তির প্রাণের মেলা হয়ে উঠছে। এটাকে তথ্যপ্রযুক্তির প্যাকেজ মেলাও বলা যেতে পারে। কেননা এখানে প্রযুক্তি বিষয়ক সভা সেমিনারের পাশাপাশি যেমন থাকছে এই খাতে বিনিয়োগ সম্ভাবনা তুলে ধরার প্রচেষ্টা, তেমনি হার্ডওয়্যার ও সফটওয়্যার খাতের সমন্বিত উন্নয়নের জন্যও রয়েছে সুনির্দিষ্ট উদ্যোগ। স্বীকৃতি প্রদানের মাধ্যমে থাকছে প্রযুক্তি পণ্য সেবায় ভবিষ্যত প্রজন্মের উদ্ভাবনকে আরও বিস্তৃত করার প্রচেষ্টা। তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক বলেন, মেলার মাধ্যমে প্রযুক্তি সেবা বিষয়ে জনসচেতনতা সৃষ্টি, তথ্যপ্রযুক্তি খাতে বিনিয়োগ ও বাণিজ্যবান্ধব পরিবেশ তৈরি, তরুণদের অংশগ্র্রহণ বাড়ানো, কর্মসংস্থান সৃষ্টি, বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের পথ ও উদ্যোক্তা তৈরি এ প্রদর্শনীর উদ্দেশ্য। মেলায় শিশুদের জন্য চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা রয়েছে। বিভিন্ন গ্রুপে বিভক্ত হয়ে স্কুলশিক্ষার্থীরা এতে অংশ নিতে পারছে। তাদের জন্য রয়েছে গেমিং কনটেস্ট। যে কেউ ডিজিটাল চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা ও কুইজ কনটেস্টে অংশ নিতে পারছে। সেলফি কনটেস্টে অংশ নিয়ে দর্শনার্থীরা আকর্ষণীয় পুরস্কারও জিতে নিতে পারবে। মেলা চলাকালে স্থানীয় পর্যায়ে উৎপাদনের সম্ভাবনা ও চ্যালেঞ্জ, ক্লাউড কম্পিউটিং, শিক্ষায় তথ্যপ্রযুক্তি, ই-স্বাস্থ্যসেবা, ই-গবর্নেন্স, আইটি এনাবল্ড ও ট্রেড কমার্সের সম্ভাবনা, তথ্য প্রযুক্তিতে মানবসম্পদের উন্নয়ন, ক্রস বর্ডার সাইবার ক্রাইম, ডিজিটাল নিরাপত্তা, ইন্টারেন্ট অব থিংস নামে মোট ১৪টি বিষয়ে সেমিনার অনুষ্ঠিত হবে। যুক্তরাষ্ট্র, চীন, মালয়েশিয়া, ফিলিপিন্স, ভারত, সিঙ্গাপুরসহ ১০টির বেশি দেশের তথ্যপ্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ, প্রকৌশলী, প্রোগ্রামাররা সেমিনারে প্রবন্ধ পাঠ ও আলোচনায় অংশ নিচ্ছেন। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি ইমরান আহমেদ, বিএস সভাপতি মাহফুজুল আরিফ, বেসিস সভাপতি শামীম আহসান, এক্সপোর আহ্বায়ক নজরুল ইসলাম মিলন, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি সচিব শ্যাম সুন্দর শিকদার, ডেলের দক্ষিণ এশিয়ার জেনারেল ম্যানেজার হরিজিৎ সিং, স্পন্সর মাইক্রোসফট বাংলাদেশের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সোনিয়া বশির কবির প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
×