ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

এসো মিলি আলোর মেলায়

প্রকাশিত: ০৫:৩০, ৩০ জানুয়ারি ২০১৬

এসো মিলি আলোর মেলায়

রাজধানীতে প্রতিবছরই অমর একুশে বইমেলা অনুষ্ঠিত হয়। প্রকৃত সত্য এই যে, সারা বছরই বইমেলা থাকার কথা। বই একদিন বা এক মাসের জন্য নয়, বই হওয়া উচিত নিত্যসঙ্গী। বইমেলা হবে বসতঘরের সঙ্গী। বই একাকীত্বকে দূর করে। মনকে প্রফুল্ল রাখে। মেধা বিকাশের প্রধান সহায়ক হচ্ছে বই। শিশু, কিশোর, যুবক-যুবতী, নর-নারী সবাই বই বিহীন অচল। জ্ঞানের আলো হচ্ছে বই, আলোকিত মানুষের নাম বই। ডাক্তার, কবিরাজ, বৈজ্ঞানিক, পাইলট, শিক্ষক, আইনজীবী সব পেশাশ্রেণী বইয়ের মাধ্যমে নিজ নিজ অবস্থানে পৌঁছাতে সমর্থ হয়েছেন। মানুষ চাঁদে যাচ্ছে, মঙ্গল গ্রহে যাচ্ছে, ক্যান্সার রোগ প্রতিরোধ করছে, আকাশে বিমান উড়ছে, কম্পিউটার, ফেসবুক, ইন্টারনেট, মোবাইল, ডিস সবকিছু আবিষ্কারের মূলে যার অবদান তার নাম হচ্ছে বই। জ্ঞান অর্জন ও মেধা বিকাশের মূল শক্তি হচ্ছে বই। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের নাম হচ্ছে বইমেলা। মেধা অর্জনে বই ক্রয় করবে পাঠক এবং মেধা বিতরণে ভূমিকা রাখবে বইমেলা। বইমেলার ভূমিকার উপর নির্ভর করবে বইমেলার সার্থকতা। নামে বইমেলা হলেই চলবে না। বইমেলায় মেধা অর্জনের মতো মেধাসম্পন্ন লেখকের বইয়ের সমাহার থাকা চাই। শিশুদের মেধা বিকাশের সহায়ক এমন বই থাকতে হবে বইমেলায়। পর্যটকদের ক্ষুধা মিটাতে পর্যটন বিষয়ে ভ্রমণগাইড থাকতে হবে মেলায়। গেল বছর পর্যটন বিষয়ে নতুন ভ্রমণগাইড পাওয়া যায়নি। বিস্তারিত তথ্য সংযুক্ত ভ্রমণগাইডের ব্যাপক চাহিদা সত্ত্বেও মেলায় সেটি পাওয়া যায়নি। চলতি বছরে তা পাওয়া যাবে বলে আশা করছি। সমাজ, প্রথা, সামাজিক ও পারিবারিক রীতিনীতি, সভ্যতার ক্রমবিকাশ, কৃষি, নদ-নদী, চরবাসীর জীবনযাপন, বঙ্গবন্ধুর জীবনী এসব নিয়ে লেখা বই থাকতে হবে মেলায়। খেলাধুলা ও শিশুদের অজানা বিষয়ে জানতে বই প্রয়োজন। রাজনীতির ইতিহাস, ভারতবর্ষের ইতিহাস, বিক্রমপুরের প্রাচীন ইতিহাস, মওলানা ভাসানীর জীবনকাহিনী নিয়ে লেখা বই সংগ্রহ করে মেলায় বিক্রি করতে হবে। কলামিস্ট আব্দুল গাফ্্ফার চৌধুরী, মুনতাসীর মামুন, হুমায়ুন আজাদ, হুমায়ূন আহমেদ প্রমুখের বইয়ের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। বইয়ের অপর নাম জ্ঞান ভা-ার। বই অমানুষকে মানুষ করতে পারে। রাজতন্ত্র ও পরিবারতন্ত্রকে গণতন্ত্রে পরিণত করতে পারে। বর্তমান সভ্য পৃথিবীতে অস্ত্র অর্থহীন, ক্ষমতা অস্থায়ী, বর্বরতা ক্ষণস্থায়ী। বই স্থায়ী, সভ্যতার মূল ধারা। বই না থাকলে পৃথিবীতে কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থাকত না, শিক্ষক তৈরি হতো না। ছাত্রছাত্রী দেখা যেত না। তাই বই বিহীন বইমেলা অচল এবং ভাল বই মেলার কদর বৃদ্ধিতে সহায়ক। বাংলাদেশের বাঙালীর বাংলা একাডেমি বইমেলাকে সার্থক করতে ভূমিকা পালন করবে এটাই প্রত্যাশা। বইমেলা যদি হয় ব্যবসার জন্য তা হলে মেলা গুরুত্বহীন হয়ে পড়বে। চাহিদা হ্রাস পাবে। ক্রেতাদের উৎসাহ ও আগ্রহ কমে যাবে। হ্রাসকৃত মূল্য তথা নামমাত্র মূল্যে বই বিক্রি করতে হবে মেলায়। মূলত শ্রোতা ও পাঠকের আগ্রহ বাড়াতে মেলা। বাংলাদেশকে বিশ্বে তুলে ধরতে বাংলা একাডেমির ভূমিকা ব্যাপক। অথচ শতকরা ৯০ শতাংশ মানুষ এই প্রতিষ্ঠানটির কথা স্মরণ করে না, ভাবে না, জানে না। প্রতিষ্ঠানটির কাজ কি তাও জানার সুযোগ নেই। বিদ্যা, বুদ্ধি, জ্ঞানভা-ার ও মেধায় ভরপুর প্রতিষ্ঠানটি সারাদেশে ছড়িয়ে দিতে হবে। ঘরে ঘরে বাংলা একাডেমি তৈরি করতে হবে। বইমেলা রাজধানীভিত্তিক হলেই চলবে না। মেধা অর্জন ও মেধা বিতরণে প্রতি উপজেলায় বইমেলার আয়োজন করতে হবে। বইয়ের ওপর ভর্তুকি দেবে সরকার। প্রকাশকরা চালাকির আশ্রয় নিচ্ছে। একটি বই যেখানে পঞ্চাশ টাকা হওয়া উচিত সেখানে দু শ’ টাকা মূল্য লিখে এক শ’ টাকা কমিশন বাদ দিচ্ছে। এভাবে পঞ্চাশ টাকা অতিরিক্ত নিয়ে নিচ্ছে। কি কারণে, কি জন্য কমিশন তা জানা যায় না। বইয়ের মূল্য নির্ধারণ, কমিশন, বই প্রকাশনা এসব দেখভাল করতে অভিজ্ঞ, দক্ষ নিরপেক্ষ, দুর্নীতিমুক্ত একজন মহাপরিচালক দায়িত্ব পালন করলে দেশের মানুষ জানার মতো, জ্ঞান অর্জন করার মতো বই বাজারে ও বইমেলায় পেতে পারে। রূপকথার গল্প, কল্পকাহিনী, রাক্ষসের গল্প এসব শিশুদের হাতে তুলে দেয়া ঠিক হবে না। বৈজ্ঞানিক যুগে শিশুদের মিথ্যা- বানোয়াট কাহিনী দিয়ে সাজানো বই পড়তে দেয়া যাবে না। সুশিক্ষায় গড়ে তুলতে শিশুদের জন্য জাতির পিতার ইতিহাস, মুক্তিযুদ্ধ ও মুক্তিযোদ্ধাদের ইতিহাস, আলবদর, আল-শামস এবং যুদ্ধাপরাধীদের ইতিহাস জানার মতো বই থাকতে হবে মেলায়। বাংলাদেশের শুদ্ধ মানচিত্র, সংবিধান ও রাজনৈতিক দলের গঠনতন্ত্র, ক্ষুদ্র জনগোষ্ঠীর ইতিহাস, পর্যটন স্পট প্রভৃতি দলিল ও বই সংগ্রহে থাকতে হবে মেলায়। থরে থরে বই থাকলেই হবে না স্টলে। জ্ঞান অর্জন করার মতো বই সংগ্রহে থাকতে হবে। বইমেলার নিরাপত্তার কথাও স্মরণে থাকতে হবে। মনে রাখতে হবে বিক্রমপুরের মেধাবী কৃতী সন্তান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর ড. হুমায়ুন আজাদকে হত্যা করার জন্য আক্রমণ করা হয়েছিল। বইমেলার গুরুত্ব অপরিসীম। এখানে দেশের জ্ঞানী, গুণী ও বুদ্ধিজীবীর আগমন ঘটে। নিরাপত্তা জোরদার করার প্রতি নজর রাখতে হবে। বৃদ্ধদের প্রতি নতুন প্রজন্মের সম্মান দেখানো, আদর্শ, শিষ্টাচার, সমাজ অবদান এসব নিয়ে লেখা বই থাকতে হবে মেলায়। উচ্চবিত্ত, ডাক্তার, প্রফেসর তথা বুদ্ধিজীবীদের মধ্যে বইমেলা সীমাবদ্ধ থাকলে এর সার্থকতা হারিয়ে যাবে। সাধারণ পেশার মানুষকে বইমেলা বিষয়ে জানাতে হবে। উৎসাহ দিতে ব্যাপক প্রচার করতে হবে। সাধারণ মানুষের মধ্যে বই পড়ার আগ্রহ বাড়াতে ব্যবস্থা নিতে হবে। বইয়ের প্রতি আগ্রহ জ্ঞান অর্জনে একমাত্র সহায়ক। জ্ঞান আলো ছড়ায়। অন্ধ লোকেও সে আলোতে আলোকিত হয়। বাংলার প্রতি ঘরে ঘরে তৈরি হোক মিনি লাইব্রেরি। লাইব্রেরির সঙ্গে সম্পর্ক বইয়ের। সুতরাং বইমেলা অসংখ্য বইয়ের আলোতে হোক আলোকিত। মেছের আলী শ্রীনগর, মুন্সীগঞ্জ প্রকাশ্যে ধূমপান রোধে সহজ ব্যবস্থা সাধারণ জনগণের মাঝে ধূমপান নিরুৎসাহিত হলেও দিনে দিনে এর ব্যবহার যেন বেড়েই চলেছে। এদেশের পথে-ঘাটে ধূমপান এক অতি সাধারণ ব্যাপার। তরুণরা এ ব্যাপারে আরও বেপরোয়া। সন্তান বা নাতির বয়সী অনেক তরুণকে মুরব্বিদের সামনে অবজ্ঞাভরে ধোঁয়া ছাড়তে দেখা যায়। কিন্তু এ ব্যাপারে প্রশাসনিক তৎপরতা অতি সীমিত । প্রকাশ্যে ধূমপান রোধে আইন থাকলেও এর প্রয়োগ নেই। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অনেককেই প্রকাশ্যে ধূমপান করতে দেখা যায় । এ ধরনের গর্হিত ক্রিয়াকর্ম ধূমপান বহুলাংশে হ্রাস পেতে পারেÑ যে কোনদিন সারা বাংলাদেশের প্রায় সর্বত্র – বিশেষত শহরগুলোতে একই সময়ে দুই ঘণ্টাব্যাপী পথে-ঘাটে প্রশাসনিক ঝটিকা অভিযানÑ অর্থাৎ জরিমানা আদায় এবং আটক করার ব্যবস্থা গ্রহণ করা যেতে পারে। লক্ষণীয়, সর্বত্র একই সময়ে তা’ করতে হবে, আগে-পরে করা যাবে না। তা না হলে জানাজানি হয়ে গেলে অনেকে সতর্কতা অবলম্বন করায় অভিযান তেমন সফল হবে না। বর্ণিত কার্যক্রমের মাধ্যমে সরকারী কোষাগারে অন্তত কয়েক লাখ টাকা জমা হবে। তরুণ ও অন্যদের মধ্যে ধূমপান নিরুৎসাহিত করার লক্ষ্যে স্কুল-কলেজ তথা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি ফরমে প্রার্থী ‘ধূমপায়ী’ কিনা তা উল্লেখ করা দরকার। একই সঙ্গে বিভিন্ন প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় অংশগ্রহণ ফরমেও অনুরূপ ব্যবস্থা থাকা প্রয়োজন। চাকরি লাভেচ্ছুদের আবেদনপত্র বা ফর্মেও একই রূপ ব্যবস্থা থাকা আবশ্যক। তবে, ব্যবস্থাটি বাধ্যতামূলক করতে হবে। এতে ধূমপানে বহুলাংশে নিরুৎসাহিত হবে মর্মে আশা করা যায়। তামাকের প্রতিকূল গুণাগুণ পরিবর্তনের জন্য এর জিনগত ব্যাপক গবেষণা বাংলাদেশসহ বিশ্বের সর্বত্র হওয়া প্রয়োজন। পাশাপাশি , তামাককে ওষুধের উপাদান হিসেবে ব্যবহার করা যায় কিনা, সে ব্যাপারেও গবেষণা হওয়া দরকার। খালিক মাশরেকী শ্রীপুর, গাজীপুর খুলনা-মংলা রেলওয়ে প্রকল্প বৃহত্তর খুলনাবাসীদের দীর্ঘদিনের লালিত স্বপ্ন পরিকল্পনা খুলনা-মংলা রেলওয়ে নির্মাণের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। বিলম্বে হলেও খবরটি আনন্দের। তবে হতাশার কথা হলোÑ পরিকল্পনাটি খুলনা শহর নয় এমনকি খুলনা সদর উপজেলারও বাইরে অন্য একটা উপজেলায় ঠেলে দেয়া হচ্ছে। এটা কিভাবে খুলনা-মংলা রেলওয়ে হবে? কারণ, ফুলতলায় প্রকল্প স্থাপন করলে তো খুলনা-মংলা রেলওয়ে হবে না। এটা হয়ে যাবে ফুলতলা-মংলা রেলওয়ে। কোথায় খুলনা আর কোথায় ফুলতলা! সম্পূর্ণ অন্য উপজেলা। বৃহত্তর খুলনা বিভাগীয় শহরে খুবই নামকরা ও উচ্চস্তরের এমন একটি প্রকল্পের জন্য উপযুক্ত স্থানের কি এতই অভাব হয়ে গেল? অতীতে আমরা দেখেছি, রূপসা থেকে বাগেরহাটে রেলওয়ে ছিল। এটার নাম কোনদিনই খুলনা-বাগেরহাট রেলওয়ে হয়নি। গণমানুষের একটা চিরন্তন আবেগ ও আশা-আকাক্সক্ষা থাকে, যেখান থেকে দীর্ঘদিন তারা পারাপার হয়, চলাচল করে এবং ভাবে যে, আহা! এখান থেকেই যদি একটা ব্রিজ হতো, এখান থেকেই যদি বাস লাইন, রেললাইন হতো তাহলে কতই না আনন্দের হতো! কিন্তু তা যদি দূরে সরে যায়, তাহলে প্রকল্পের আশা-আকাক্সক্ষার বাস্তবায়নেও পূর্ণ তৃপ্তি হয় না, হতে পারে না। প্রসঙ্গত বলা যায়, রূপসা ব্রিজের কথা। গণমানুষের বিশেষ আশা-আকাক্সক্ষা ছিল যুগ যুগ ধরে, দীর্ঘদিনের ফেরি পারাপারের স্থানেই একদিন ব্রিজ নির্মিত হবে কিন্তু তা না হয়ে ব্রিজটি অবশেষে খুলনা শহরের একেবারে শেষ সীমানার বাইরে নির্মিত হয়েছে। একইভাবে আবার খুলনা-মংলা রেলওয়ে প্রকল্পটিও ঠেলে দেয়া হচ্ছে খুলনা শহর থেকে অনেক দূরে অন্য একটা উপজেলায়। রেল ব্রিজটিও ঠেলে দেয়া হচ্ছে রূপসা ব্রিজ থেকেও দেড় কিলোমিটার দূরে একেবারে গহীন গ্রামে। এভাবে নির্মাণ করলে প্রকল্পটি হয়ে যাবে ফুলতলা-মংলা রেলওয়ে নামে একটি গ্রামীণ রেলওয়ে। খুলনা-মংলা রেলওয়ে করতে হলে তা খুলনা শহর থেকেই করা আবশ্যক। মোল্লা সিদ্দিকুর রহমান খুলনা সদর, খুলনা
×