ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ১১ মে ২০২৪, ২৭ বৈশাখ ১৪৩১

কেবিনেট মিটিংয়ে জন্মদিনের শুভেচ্ছায় সিক্ত হলেন মুহিত

শ্রম ও পণ্যের বাজার খুঁজতে রাষ্ট্রদূতদের প্রধানমন্ত্রীর তাগিদ

প্রকাশিত: ০৫:২৫, ২৬ জানুয়ারি ২০১৬

শ্রম ও পণ্যের বাজার খুঁজতে রাষ্ট্রদূতদের প্রধানমন্ত্রীর তাগিদ

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ আন্তর্জাতিক বাজারে বাংলাদেশী শ্রম ও পণ্যের বাজার তৈরি করতে বিভিন্ন দেশে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূতদের পদক্ষেপ নেয়ার তাগিদ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সোমবার সচিবালয়ে মন্ত্রিসভার নিয়মিত বৈঠকে তিনি এ তাগিদ দেন বলে বৈঠকে উপস্থিত এক মন্ত্রী জানান। পাশাপাশি জন্মদিনে মন্ত্রিসভার বৈঠকে প্রধানমন্ত্রীসহ সহকর্মীদের শুভেচ্ছায় সিক্ত হলেন ৮৩ বছরে পা দেয়া আবুল মাল আবদুল মুহিত। প্রবীণ এই রাজনীতিবিদের প্রাণশক্তির প্রশংসা করে এক মন্ত্রী বয়স উল্টে মুহিতকে তুলনা করলেন ৩৮ বছরের তরুণের সঙ্গে। এরপর প্রধানমন্ত্রীসহ অন্য মন্ত্রীরা অর্থমন্ত্রীকে জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানিয়ে তার দীর্ঘায়ু কামনা করেন। বৈঠকে উপস্থিত এক মন্ত্রী বলেন, মন্ত্রিসভা বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বিভিন্ন দেশে নিযুক্ত বাংলাদেশের কূটনীতিকদের শুধু রাজনৈতিক বিষয় নিয়ে ভাবলে চলবে না। তাদের বাংলাদেশী শ্রমবাজার ও পণ্যের বাজার তৈরির প্রচেষ্টা চালাতে হবে। প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান নীতি এর খসড়ার ওপর আলোচনাকালে প্রধানমন্ত্রী এ কথা বলেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশের পণ্যকে আন্তর্জাতিক বাজারে তুলে ধরতে হবে। বিদেশে কিভাবে দেশীয় পণ্যের বাজার তৈরি করা যায়, সে ব্যবস্থা করতে হবে। কোন দেশে কোন পণ্যের চাহিদা আছে, কোন পণ্য কোন দেশের বাজারে বেশি চলে, সে বিষয়গুলোও খুঁজে বের করতে হবে। তিনি বলেন, কূটনীতি শুধু রাজনীতির মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখা নয়। দেশের অর্থনৈতিক বিষয়টিও মাথায় রাখতে হবে। যে দেশে পণ্য রফতানি করা যায় সেখানে পণ্য রফতানির বিষয়ে কাজ করতে হবে। আর যে দেশে জনবল রফতানি করা যায় সে দেশে জনবল রফতানির বিষয় অগ্রাধিকার দিতে হবে। খুঁজে বের করতে হবে কোন দেশে কি রফতানি করা যায়। পররাষ্ট্রনীতি অনুযায়ী ‘সবার সঙ্গে বন্ধুত্ব, কারও সঙ্গে শত্রুতা নয়’ এ নীতির ভিত্তিতে কাজ করার পাশাপাশি দেশী পণ্য বিদেশী বাজারে তুলে ধরার নির্দেশনা দেয়া হয়। সোমবার মন্ত্রিসভার বৈঠকে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতকে তার ৮৩তম জন্মদিন উপলক্ষে শুভেচ্ছা জানানো হয়। জন্মদিনের প্রসঙ্গটি প্রথমে তোলেন বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ। প্রবীণ এই রাজনীতিবিদের প্রাণশক্তির প্রশংসা করে একজন মন্ত্রী বয়স উল্টে মুহিতকে তুলনা করলেন ৩৮ বছরের তরুণের সঙ্গে। এরপর প্রধানমন্ত্রীসহ অন্য মন্ত্রীরা অর্থমন্ত্রীকে জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানিয়ে তার দীর্ঘায়ু কামনা করেন। অর্থ মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটের তথ্য অনুযায়ী, ১৯৩৪ সালের ২৫ জানুয়ারি সিলেটে জন্ম নেয়া মুহিত একাধারে একজন অর্থনীতিবিদ, কূটনীতিক, ভাষাসৈনিক ও মুক্তিযোদ্ধা। টানা সাত বছর বাংলাদেশের বাজেট ঘোষণা করার রেকর্ডও আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য মুহিতের। মন্ত্রিসভার বৈঠকে উপস্থিত একজন মন্ত্রী বলেন, বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ অর্থমন্ত্রীর জন্মদিনের প্রসঙ্গ বৈঠকে তোলেন। এরপর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অর্থমন্ত্রীকে জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানিয়ে তার দীর্ঘায়ু কামনা করেন। মন্ত্রিসভার অন্য সদস্যরাও শুভেচ্ছা জানান অর্থমন্ত্রীকে। বয়সের অঙ্ক দুটো উল্টে দিয়ে একজন মন্ত্রী বলেন, তার যে অবস্থা তাতে বয়স ৮৩ না বলে ৩৮ বছর বলাই ভাল। অনেকেই তার এ কথায় সহাস্যে সায় দেন। বৈঠকে উপস্থিত একজন প্রতিমন্ত্রী জানান, শুভেচ্ছাসিক্ত অর্থমন্ত্রীর মুখে এ সময় ছিল স্মিত হাসি। তবে তিনি নিজে কোন কথা বলেননি। ‘একজন সিনিয়র মন্ত্রী রসিকতা করে অর্থমন্ত্রীকে বলেন, জন্মদিনের খাবার কই? এ সময় আরও কয়েকজন এই রসিকতায় যোগ দেন। সিলেট জেলা মুসলিম লীগের নেতা আবু আহমদ আব্দুল হাফিজের দ্বিতীয় ছেলে মুহিত। তার মা সৈয়দ শাহার বানু চৌধুরীও রাজনীতিতে সক্রিয় ছিলেন। ১৯৫৫ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজী সাহিত্যে মাস্টার্স করার পর অক্সফোর্ড ও হার্ভার্ডে উচ্চ শিক্ষা নেন মুহিত। ১৯৫৬ সালে পাকিস্তান সিভিল সার্ভিসে যোগ দেয়ার পর তখনকার পাকিস্তান এবং পরে স্বাধীন বাংলাদেশে সরকারের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে তিনি দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৭১ সালে যখন মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলো, মুহিত তখন ওয়াশিংটন দূতাবাসে কূটনৈতিক দায়িত্বে। জুন মাসে পাকিস্তানের পক্ষ ত্যাগ করে বাংলাদেশের প্রতি আনুগত্য প্রদর্শন করেন তিনি। ১৯৭২ সালে পরিকল্পনা সচিবের দায়িত্ব পালনের পর ১৯৭৭ সালে অর্থ ও পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের বহিঃসম্পদ বিভাগে সচিব হন মুহিত। ১৯৮১ সালে চাকরি থেকে স্বেচ্ছায় অবসরে গিয়ে ‘অর্থনীতি ও উন্নয়ন বিশেষজ্ঞ হিসেবে’ কাজ শুরু করেন ফোর্ড ফাউন্ডেশন ও আইএফএডিতে। ১৯৮২-৮৩ সালে তখনকার এইচ এম এরশাদ সরকারের সময়ে প্রথমবারের মতো অর্থ ও পরিকল্পনামন্ত্রীর দায়িত্বে আসেন মুহিত। দীর্ঘদিন বিশ্ব ব্যাংক ও জাতিসংঘের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে পরামর্শক হিসেবে কাজ করার পর দেশে ফিরে আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে সক্রিয় হন মুহিত। ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলে তিনি পান অর্থমন্ত্রীর দায়িত্ব। ২০১৪ সালে আওয়ামী লীগ টানা দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় এলে অর্থ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব মুহিতের কাঁধেই রাখেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। অর্থ মন্ত্রণালয়ে দেয়া জীবনবৃত্তান্ত বলছে, মুক্তিযুদ্ধ, অর্থনৈতিক উন্নয়ন, ইতিহাস, জনপ্রশাসন এবং রাজনীতি নিয়ে ২৩টি বইও লিখেছেন মুহিত। মন্ত্রিসভার বৈঠকের পর অর্থ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীরাও মন্ত্রীকে নিয়ে তার জন্মদিন পালন করেন। প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান নীতি ॥ সোমবার প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান নীতি-২০১৬ খসড়া অনুমেদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা। এতে নিরাপদ অভিবাসন এবং অভিবাসী ও তাদের পরিবারের সদস্যদের নিরাপত্তা নিশ্চিতসহ ৬ দফা নির্দেশনা রয়েছে। বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের ব্রিফকালে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম বলেন, ২০০৬ সালে এ সম্পর্কিত বিদ্যমান সংক্ষিপ্ত নীতি সংশোধন করে অভিবাসনের ওপর আন্তর্জাতিক আইনের আলোকে এই খসড়া নীতি প্রণীত হয়েছে। তিনি বলেন, এই নীতিতে ৬টি নির্দেশনার ওপর বিশেষ গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। এতে নিরাপদ অভিবাসন উৎসাহিত, অভিবাসী শ্রমিক ও তাদের পরিবারের সদসদের নিরাপত্তা, অভিবাসী শ্রমিকদের সুযোগ-সুবিধা ও কল্যাণ নিশ্চিত করা, নারী শ্রমিকদের অভিবাসন, জাতীয় উন্নয়নের সঙ্গে অভিবাসনকে সম্পৃক্ত করা এবং শ্রমিক অভিবাসনে যথাযথ পরিকল্পনার ওপর গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। সচিব বলেন, এই নতুন নীতিতে অভিবাসী শ্রমিকদের যথাযথ কল্যাণ, সুযোগ-সুবিধা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে অর্থ, পররাষ্ট্র, স্বরাষ্ট্র, বাণিজ্য এবং বেসামরিক ও পর্যটন মন্ত্রণালয়সহ বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের জন্য সুনির্দিষ্ট নির্দেশনা রয়েছে। এ প্রসঙ্গে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, এই নীতিতে বিভিন্ন দেশে অভিবাসী নারী শ্রমিকদের নিরাপত্তায় সুনির্দিষ্ট অধ্যায় রয়েছে। এর আওতায় অভিবাসন প্রক্রিয়াকে জোরদার করতে সরকার বিদেশে যেতে আগ্রহী নারী শ্রমিক, সরকারী ও বেসরকারী সংস্থা, ট্রেড ইউনিয়ন, রিক্রুটিং এজেন্সি, নিয়োগদাতা ও সংশ্লিষ্ট আন্তর্জাতিক সংস্থার সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে সমন্বিত ও অংশগ্রহণমূলক কর্মসূচী নেবে। শফিউল আলম বলেন, বৈঠকে বাংলাদেশ ও তুরস্কের দু’দেশের সেনাবাহিনীর স্বাস্থ্যসেবা খাতে প্রশিক্ষণ ও সহযোগিতা সম্পর্কিত খসড়া প্রটোকলের অনুমোদন দেয়া হয়। এই প্রটোকল স্বাক্ষরের ফলে ভ্রাতৃপ্রতীম দুই দেশের মধ্যকার দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক আরও সুসংহত হবে। এছাড়া বৈঠকে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের ইউএন-এ্যাস্কাপের ‘ইন্টার গবর্নমেন্টাল এগ্রিমেন্ট অন ড্রাই পোর্ট’ শীর্ষক প্রস্তাবের অনুমোদন দেয়া হয়। এই উদ্যোগের ফলে বাংলাদেশকে এশিয়ান হাইওয়ে নেটওয়ার্ক এবং ট্রান্স এশিয়া রেলওয়ে নেটওয়ার্কের সঙ্গে সংযুক্ত করা সম্ভব হবে।
×