ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

রওশনের দুটি প্রস্তাবই প্রত্যাখ্যান

রওশনকে ‘প্রিয় সহকর্মী’ বলে চিঠি দিলেন এরশাদ

প্রকাশিত: ০৫:৪৩, ২৫ জানুয়ারি ২০১৬

রওশনকে ‘প্রিয় সহকর্মী’ বলে চিঠি দিলেন এরশাদ

স্টাফ রিপোর্টার ॥ পার্টির কো-চেয়ারম্যান নিয়োগ ও মহাসচিব পরিবর্তনের সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনার সুযোগ নেই বলে রওশনকে সাফ জানিয়ে দিলেন জাপা চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ। দলীয় এ দুটি সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনায় বিরোধীদলীয় নেতা রওশনের আহ্বান প্রত্যাখ্যান করে এ কথা জানিয়েছেন তিনি। এরশাদ বলেছেন, গৃহীত সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনার আর কোন সুযোগ নেই। শনিবার এক বিবৃতিতে এরশাদকে দলীয় স্বার্থে সিদ্ধান্ত পরিবর্তনের আহ্বান জানিয়েছিলেন রওশন। রবিবার রওশনকে দেয়া পাল্টা চিঠিতে তা প্রত্যাখ্যান করেন সাবেক সেনাপ্রধান এরশাদ। শনিবারের বিবৃতিতে পার্টিতে কো-চেয়ারম্যান নিয়োগ ও মহাসচিব পরিবর্তনের সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনার আহ্বান জানান রওশন। দলীয় ফোরামে আলোচনা ছাড়াই পার্টিতে এই পদায়ন ও রদবদলকে ‘অগণতান্ত্রিক’ বলেও মন্তব্য করেন তিনি। পাশাপাশি তিনি দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান নন বলেও বিবৃতিতে উল্লেখ করে বলেন, দলের প্রেসিডিয়ামের বৈঠকে আমাকে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান করার কোন সিদ্ধান্ত হয়নি। স্ত্রীর বিবৃতির জবাবে এরশাদ বলেন, গঠনতান্ত্রিকভাবেই কো-চেয়ারম্যান ও মহাসচিব পরিবর্তনের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। এই সিদ্ধান্তের ফলে জাতীয় পার্টিতে প্রাণচাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়েছে। পার্টি আগামীতে সাংগঠনিকভাবে আরও শক্তিশালী হবে বলেও রওশনকে আশ্বস্ত করেছেন তিনি। চিঠিতে রওশন এরশাদকে ‘সহকর্মী’ হিসেবে সম্বোধন করা হয়েছে। রওশনকে লেখা এরশাদের চিঠি ॥ “প্রিয় সহকর্মী, আমার আন্তরিক শুভেচ্ছা গ্রহণ করবেন। ‘২৩ জানুয়ারি শনিবার মিডিয়ায় প্রেরিত আপনার একটি বিবৃতির প্রতি আমার দৃষ্টি আকৃষ্ট হয়েছে। সেখানে আপনি দুটি বিষয়ের ওপর আলোকপাত করেছেন। প্রথমত, সম্প্রতি পার্টিতে জিএম কাদেরকে কো-চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব প্রদান এবং মহাসচিব পদে রদবদলের বিষয়টি পুনর্বিবেচনার আহ্বান জানিয়েছেন। দ্বিতীয়ত, বিগত মহাসচিব জিয়াউদ্দিন বাবলু, যে আপনাকে ‘ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান’ হিসেবে ঘোষণা করেছেন তা আপনি নাকচ করেছেন। দ্বিতীয় বিষয়ের ‘ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান’ বিভ্রান্তি দূর করার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ জানাই। প্রথম প্রসঙ্গের বিষয়টি আপনাকে স্পষ্ট করতে চাই। জিএম কাদেরকে পার্টির কো-চেয়ারম্যান করার ব্যাপারে আপনারও সম্মতি ছিল। কো-চেয়ারম্যান জাতীয় পার্টির কোনো গঠনতান্ত্রিক পদ নয়। পার্টির চেয়ারম্যান হিসেবে সংগঠনের প্রয়োজনে আমি কোন পদ সৃষ্টি বা কাউকে কোন বিশেষ দায়িত্ব প্রদান করতে পারি। আমি গঠনতন্ত্রের বহির্ভূত কোন সিদ্ধান্ত গ্রহণ করিনি। জাতীয় পার্টির গঠনতন্ত্রে যা রয়েছে সেটাই আমাদের পার্টির গঠনতন্ত্র। ৩৯ ধারাটি তারই অংশ। এই ধারাটি আমার সৃষ্টি করা নয়। গঠনতন্ত্র আমি নিজে প্রণয়ন করিনি। এটি একটি কমিটি দ্বারা প্রণীত এবং পার্টির জাতীয় কাউন্সিল দ্বারা অনুমোদিত। ৩৯ ধারা যদি সংশোধন বা বাতিল করতে হয় তা শুধু পরবর্তী কাউন্সিলেই হতে পারে। তার আগে গঠনতন্ত্রের কোন ধারা নিয়ে বিতর্ক সৃষ্টি করা হবে গঠনতন্ত্রের অবমাননা, পার্টির শৃঙ্খলার পরিপন্থী এবং দলীয় গণতন্ত্রের প্রতি অবজ্ঞা। মহাসচিব পদে রদবদল প্রসঙ্গে আপনাকে অবগত করতে চাই যে, জিয়াউদ্দিন বাবলুকে শৃঙ্খলা ভঙ্গের দায়ে মহাসচিবের দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি প্রদান করেছি। তিনি দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গ করে মিডিয়ার কাছে আপনাকে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ঘোষণা করেছেন। এটা ছিল দলকে বিভক্ত করার একটি ঘৃণ্য ষড়যন্ত্র। সে কারণে বাবলুকে যে ধারামতে মহাসচিব করা হয়েছিল, সেই ৩৯ ধারাতেই অব্যাহতি দেয়া হয়েছে। আপনার নিশ্চয়ই জানা আছে যে, জাতীয় পার্টি প্রতিষ্ঠার পরবর্তীতে যে ক’জন মহাসচিবের দায়িত্ব লাভ করেছেন তারা প্রথমে এই ধারামতেই নিয়োগ লাভ করেছেন। পরবর্তীতে কাউন্সিলের মাধ্যমে তারা মহাসচিব নির্বাচিত হয়েছেন। প্রথমে এই ধারার বিষয়বস্তু ৪৬ ধারার অন্তর্গত ছিল। সর্বশেষ কাউন্সিলে সংশোধনীর মাধ্যমে এটি ৩৯ ধারায় অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। যে দু-একজন প্রেসিডিয়াম সদস্য এখন ৩৯ ধারা নিয়ে বিতর্ক করছেন তারাও কিন্তু এই ৩৯ ধারা মোতাবেক প্রেসিডিয়াম সদস্য হিসেবে অন্তর্ভুক্ত হয়েছেন। বলা প্রয়োজন যে, অধিকাংশ প্রেসিডিয়াম সদস্য এবং প্রথম মহাসচিব বাদে সকল মহাসচিবই কোন না কোন সময়ে এই ধারাবলে দায়িত্ব লাভ করেছেন। তখন কিন্তু এই প্রক্রিয়া নিয়ে কোন প্রশ্ন আসেনি।” রওশনকে লেখা চিঠিতে আরও বলা হয়, ‘আপনি আমাদের সাংগঠনিক কাঠামো সম্পর্কে অবগত আছেন যে, সংসদীয় কমিটি দলীয় নীতিনির্ধারণের কোন শাখা নয়। একমাত্র প্রেসিডিয়ামেরই পার্টির নীতিনির্ধারণের এবং কোন সিদ্ধান্ত গ্রহণ বা অনুমোদনের এখতিয়ার রয়েছে। সুতরাং দলীয় কোন সিদ্ধান্ত গ্রহণ বা বাস্তবায়নের ব্যাপারে প্রেসিডিয়াম বাদে অন্য কোন শাখার মতামত গ্রহণের প্রয়োজনীয়তা নেই। তাছাড়া আপনি পার্টির একজন শীর্ষ নেতা এবং সিনিয়র প্রেসিডিয়াম সদস্য হিসেবে পার্টির চেয়ারম্যানের কাছে কোন বিষয়ে আবেদন, নিবেদন কিংবা বিবেচনার আহ্বান জানাতেই পারেন। সেটা আপনার সাংগঠনিক অধিকার। তবে পার্টির স্বার্থে বিবৃতিতে উল্লিখিত আপনার প্রস্তাবটি বিবেচনা করতে পারলাম না বলে দুঃখিত। আশা করি আপনিও পার্টির সার্বিক অবস্থা বিবেচনা করবেন।’ চিঠিতে আরও বলা হয়, ‘আমি আপনাকে আশ্বস্ত করতে চাই যে, পার্টির মধ্যে কোন বিভেদ বা অনৈক্য থাকবে না। আমরা ঐক্যবদ্ধভাবে পার্টিকে এগিয়ে নিতে সক্ষম হব। আপনি সংসদীয় দলের নেতৃত্বে আছেন, আমি পার্টির নেতৃত্বে আছি। আমাদের উভয়ের মিলিত প্রচেষ্টায় জাতীয় পার্টি আগামী দিনে এগিয়ে যাবে ইনশা আল্লাহ।’ গত ১৭ জানুয়ারি রংপুরে এক কর্মিসভায় ছোট ভাই জিএম কাদেরকে পার্টির কো-চেয়ারম্যান এবং ভবিষ্যত নেতা হিসেবে ঘোষণা দেন এরশাদ। একই সঙ্গে কাউন্সিলের জন্য জিএম কাদেরকে আহ্বায়ক ও সাবেক মহাসচিব রুহুল আমিন হাওলাদারকে সদস্য সচিব করে কমিটি ঘোষণা করেন। এতে ক্ষোভ প্রকাশ করেন রওশনপন্থীরা। পরদিন ১৮ জানুয়ারি বিকেলে প্রেসিডিয়াম ও পার্লামেন্টারি কমিটির বিশেষ বৈঠকে রওশন এরশাদকে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ঘোষণা করেন জিয়াউদ্দিন বাবলু। তৃতীয় দিন ১৯ জানুয়ারি দুপুরে রংপুর থেকে ফিরে জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলুকে সরিয়ে এবিএম রুহুল আমিন হাওলাদারকে মহাসচিব নিযুক্ত করেন এরশাদ। পদত্যাগের বিষয়ে একমত দু’জনেইÑজিএম কাদের ॥ জাতীয় পার্টির কো-চেয়ারম্যান জিএম কাদের বলেছেন, মন্ত্রিপরিষদ ও বিশেষ দূতের পদ থেকে পদত্যাগের বিষয়ে দলের চেয়ারম্যান ও বিরোধীদলীয় নেতা একমত হয়েছেন। তবে এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে পরামর্শ নেয়া হবে। তিনি যেভাবে বলেন সেভাবেই সিদ্ধান্ত হবে। বরিবার বনানী কার্যালয়ে এক অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন তিনি। তিনি বলেন, মন্ত্রিপরিষদে থাকা পার্টির নেতাদের এবং প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ দূত পদ ছাড়ার বিষয়টি নিয়ে আমরা প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা করব। আলোচনা করেই এসব পদ থেকে সরতে চাই। এ বিষয়ে পার্টির চেয়ারম্যান ও বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদও একমত।
×