ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

প্রতিবন্ধীদের স্বপ্নের মৃত্যু!

প্রকাশিত: ০৫:৫৫, ২৩ জানুয়ারি ২০১৬

প্রতিবন্ধীদের স্বপ্নের মৃত্যু!

মানুষ সৃষ্টির শ্রেষ্ঠ জীব। ছোটবেলায় পিতামাতা আমাদের বলতেন, অন্ধকে অন্ধ, খোঁড়া লোককে খোঁড়া বলতে নেই। কেননা এতে তারা মনে কষ্ট পান। বাস্তবে একজন প্রতিবন্ধীকে জীবনে অনেক ঘাত-প্রতিঘাত পেরিয়ে সামনে এগিয়ে যেতে হয়। আমি যখন অনার্স চতুর্থ বর্ষে পড়ি তখন পর্যন্ত প্রতিবন্ধী সনদ নেয়ার বিষয়টি চিন্তা করিনি। কারণ এ বিষয়টি আমাকে কেউ মনে করিয়ে দিলে আমি মনে মনে খুবই কষ্ট পেতাম। আজ কেন যেন মনে হচ্ছে আমি সব লাজ-লজ্জার মাথা খেয়েছি, নিজে একজন শারীরিক প্রতিবন্ধী হিসেবে নিজের মৌলিক অধিকারের বিষয়ে লিখতে বা বলতে আমার আর কোন দ্বিধা নেই। সম্প্রতি গণমাধ্যমে প্রত্যক্ষ করলাম প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রতিবন্ধী জনগোষ্ঠীর প্রতি সংবেদনশীল হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন, প্রতিবন্ধীরা আজ সমাজে অবহেলিত নয়। তারাও আজকে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বাংলাদেশের সুনাম অর্জন করেছে। সবার প্রতিবন্ধীদের প্রতি দৃষ্টিভঙ্গি পাল্টাতে হবে। সবাইকে সংবেদনশীল হতে হবে এবং সহযোগিতার হাত বাড়াতে হবে। শুধু দৃষ্টি প্রতিবন্ধী নয়; শারীরিক প্রতিবন্ধী, শ্রবণ প্রতিবন্ধী, অটিস্টিক শিশুসহ সকলকে সমান দৃষ্টিতে দেখতে হবে। সরকার প্রতিবন্ধীদের সমাজের মূল স্রোতধারায় নিয়ে আসার জন্য ১৯/১২/২০১১ তারিখের মন্ত্রিসভার সিদ্ধান্ত মোতাবেক ১২/০১/২০১৫ জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে একটি আদেশ জারি করে, যাতে বলা হয়, বিসিএস ক্যাডারসহ অন্যান্য ১ম ও ২য় শ্রেণীর চাকরিতে প্রতিবন্ধী প্রার্থীদের জন্য ১ শতাংশ কোটা সংরক্ষণ করা হবে। অথচ ২৯ আগস্ট/২০১৫ ৩৪তম বিসিএস-এর প্রকাশিত ফলাফলে পিএসসি ২১৫৯ জন প্রার্থীকে চূড়ান্তভাবে নিয়োগের জন্য সুপারিশ করে; সে হিসেবে ২১জন প্রতিবন্ধী প্রার্থীকে সুপারিশ করার কথা থাকলেও পিএসসি মাত্র ৩ জন প্রার্থীকে সুপারিশ করে, যাদের সকলেই দৃষ্টি প্রতিবন্ধী। ফলাফাল দেখে মনে হচ্ছে পিএসসি শারীরিক প্রতিবন্ধীদের প্রতিবন্ধী হিসেবে গণ্যই করেনি। কেননা আমার জানা মতে, ৫-৬ জন শারীরিক প্রতিবন্ধী প্রার্থী যারা সকলেই নন-ক্যাডার নামক দুর্ভাগাদের দলভুক্ত হয়েছেন। এদের মধ্যে অন্তত ২ জন প্রার্থী রয়েছেন যারা শুধুই প্রফেশনাল ক্যাডারে ভাইভা দিয়েছিলেন। আমি নিজেও জেনারেল ও প্রফেশনাল (শিক্ষা) ক্যাডারে ভাইবা দিয়েছিলাম। আমার সাবজেক্ট রসায়নে ৪০ জন প্রার্থী নেয়ার কথা থাকলেও ৩২ জন নেয়া হয়েছে। বিসিএস-এর মতো প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় ভাইভা পর্যন্ত যাওয়া একজন প্রতিবন্ধী প্রার্থীর জন্য অনেক কষ্টের। প্রতিবন্ধীরা কারও অনুুকম্পা চান না, তারা শুধুই চান তাদের ন্যায্য অধিকারটুকুর পূর্ণ বাস্তবায়ন। তাই পিএসসি যাতে ৩৪তম বিসিএসে উত্তীর্ণ প্রতিবন্ধী প্রার্থীদের সরকার ঘোষিত ১% কোটায় শূন্য পদে নিয়োগদানের বিষয়টি পুনর্বিবেচনা করে এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর সু-দৃষ্টি কামনা করছি। আফজাল হোসেন কুড়িগ্রাম ধভলধষননং৮৭@মসধরষ.পড়স আপন করি শীতের পাখি জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বিশ্বের আওহাওয়ার মধ্যেও বেশ পরিবর্তন লক্ষ করা যাচ্ছে। গরমের সময় গরম উধাও, শীতের সময় শীতানুভূতি কম, বৃষ্টির মৌসুমে খরা, বর্ষার সময়ে মাঠ ফেটে চৌচির- এসবই এখন মোটা দাগে লক্ষ করা যাচ্ছে। বিলম্বে হলেও একটু-আধটু করে শীত পড়া শুরু করেছে। আর এই শীত পড়ার সঙ্গে সঙ্গে আগমন ঘটছে অতিথি পাখিদেরও। দেশের সব হাওড়-বাঁওড় জলাশয় অভয়ারণ্যÑ এখন অতিথি পাখিদের কলরবে মুখর! শীতের এসব হাজার হাজার অতিথি পাখি শীত মৌসুমে শীতের তীব্রতা থেকে বাঁচতে ও খাবারের সন্ধানে সুদূর সাইবেরিয়া, চীন, মঙ্গোলিয়া, নেপালসহ শীতপ্রধান বিভিন্ন দেশ থেকে হাজার হাজার মাইল পাড়ি দিয়ে শ্যামল মাটির দেশ বাংলাদেশে আসে। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি বাংলাদেশের প্রকৃতিকে অতিথি পাখিরা রূপবৈচিত্র্যে ভর তোলে। কিন্তু এক শ্রেণীর লোভী মানুষের লোলুভ দৃষ্টি থাকে এসব পাখির ওপর। তারা নানা ধরনের ফাঁদ পেতে পাখি ধরে। পাখি শিকারীদের কারণে এখন পাখিরা তাদের গন্তব্যপথ পাল্টে ফেলছে। কারণ হাজার হাজার মাইল দূর থেকে অতিথি পাখিরা একটু নিরাপদ আশ্রয় খোঁজে এদেশে। এক সময় বাংলাদেশ তাদের জন্য নিরাপদ ছিল। সময়ের কারণে কিছু কিছু দুষ্ট মানুষের জন্য পাখিরা আজ আতঙ্কিত। আমরা চাই সরকারের সংশ্লিষ্ট মহল দেশের হাওড়-বাঁওড়, জলাশয়, অভয়ারণ্যসহ যেসব জায়গায় শীতের পাখিরা আশ্রয় নেয় সেখানেই পাখিদের অবস্থানকালীন সর্বোচ্চ নিরাপত্তা প্রদান করবেন। পাখি-শিকারীদের দেখামাত্র গ্রেফতার ও জেল হাজতে প্রেরণ জরুরী। আহাদ রেজা শুক্রাবাদ, ঢাকা ধঃযধরৎরফযধ১৫@ুধযড়ড়.পড়স ভাসমান জীবনকথা জীবনের পদে পদে বিভিন্ন ঝুঁকি আর নানাবিধ সমস্যা নিয়ে প্রান্তিক জনপদ থেকে ভেসে আসে ঢাকা জনপদে। ক্ষণিক আশায় বুক বাঁধে ভাগ্যকে বদলে দিতে। ওরা আত্মপ্রকাশ করে ঢাকার ফুটপাথে, বসতি গড়ে বস্তিতে, জীবিকা হিসেবে বেছে নেয় কায়িক শ্রম। নিম্নমানের জীবনযাপনকারী এই শ্রেণীটির স্বাধীন বাংলার বাঙালী হওয়ার সুবাধে জীবন ও জীবিকার দায় মেটাতে হচ্ছে রিক্সা টেনে, বস্ত্র শ্রমিক হয়ে, পতিতা হয়ে, ভিক্ষাবৃত্তি করে, টোকাই হয়ে, মাদক রাজ্যের সেবক হয়ে, ভাড়াটিয়ে গু-া হয়ে। প্রাসাদবাসী আর বস্তিবাসীর যোজন যোজন ব্যবধানের এই সোনার বাংলায়Ñ ধনবৈষম্য, পুঁজিবাদী গণতন্ত্র এবং সিংহাসনভিত্তিক ভোটের রাজনীতির এটা হলো অধঃপতিত রূপ। রেললাইন, সদরঘাট, বাস টার্মিনালের ছাউনিকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে গ্রাম-গঞ্জ থেকে আসা দারিদ্র্যপীড়িত অক্ষর জ্ঞানহীন জনগোষ্ঠীর যাপিত জীবনের অবাঞ্ছিত সভ্যতা। লাঞ্ছনা-বঞ্ছনা- বিসর্জন, অভাব অভিযেগের কারণে এরা আজ নিজ দেশে উদ্বাস্তু। মৌলিক চাহিদাজনিত তীব্র সঙ্কটের মধ্যে কেটে যায় তাদের জীবনের সুবর্ণসময়। প্রতিনিয়ত আপোস করতে হয় অন্যায় অন্যায্যতার সঙ্গে। এই শ্রেণীটি কখনও পৌঁছতে পারে না সভ্যতা বলতে যা বোঝায় তার কোন অংশে। এই হতভাগারা ব্যবহৃত হয় জনসভাকে জনসমুদ্রে পরিপূর্ণ করতে। ব্যবহৃত হয় গার্মেন্টস শিল্পের চাকা সচল রাখতে। ব্যবহৃত হয় বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বাড়াতে। নিতান্তই বেঁচে থাকার তাগিদে, অর্থনৈতিক সচ্ছলতার জন্য মৃত্যু ঝুঁকি নিয়ে পাড়ি জমায় বিদেশে। সাত সমুদ্র তের নদী পার হতে গিয়ে অসংখ্য জীবন সমুদ্রের বুকে সমাধি হয়। অবার অনেকে গভীর অরণ্যে গণকবরে শায়িত হয় চিরনিদ্রায়। আর যারা কোন রকমে প্রাণটা নিয়ে পৌঁছতে পাড়ে স্বপ্নের দেশে, তাদের অনেককেই পালিয়ে বেড়াতে হয় শহরতলীর পথে পথে। এভাবে পথে পথে ঘুরে, পালিয়ে কঠিন ত্যাগ তিতিক্ষার মধ্যে উর্পাজিত বৈদেশিক মুদ্রা আসে স্বদেশে। এই হতভাগাদের মধ্যে একটি বড় অংশ নিজ দেশে হয় ক্রীতদাস। প্রবাসে ও নিজ দেশে অবস্থানরত ক্রীতদাস-দাসীদের শিকার হতে হয় হরেক রকম শোষণ ও পীড়নের। নারী ক্রীতদাসীদের শিকার হতে হয় বাড়তি শোষণের, তাদের নারীত্ব নিয়ে যৌন নিপীড়নের। অভিযোগের কোন জায়গা নেই। অনিশ্চয়তাই জীবন। নিরাপত্তাহীনতাই জীবন সংস্কৃতি। নির্মম নিষ্ঠুর নিয়তিই নিয়ন্ত্রণ করে জীবনকে শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত। এভাবে বশ্যতা ও বিষণœতায় বিপন্ন জীবনের ক্লান্তি নিয়ে কখনও ভেতরে ভেতরে ভাগ্যের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ায়। কখনও অভিজাতদের করুণার পানে হাত বাড়ায়। দীপ্তি ইসলাম ক্যান্টনমেন্ট, ঢাকা
×