ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ১১ মে ২০২৪, ২৮ বৈশাখ ১৪৩১

কেবলই আশ্বাস, প্রাপ্তি নেই ;###;নতুন বাজার সৃষ্টি হচ্ছে না ;###;নানা উদ্যোগেও টার্গেট পূরণ হচ্ছে না

শ্রমবাজারে মন্দা

প্রকাশিত: ০৫:৩৫, ২২ জানুয়ারি ২০১৬

শ্রমবাজারে মন্দা

ফিরোজ মান্না ॥ শ্রমবাজার দিন দিন সঙ্কুচিত হচ্ছে। দেশের সবচেয়ে বড় শ্রমবাজার মধ্যপ্রাচ্য ও মালয়েশিয়ায় শ্রমশক্তি রফতানি হচ্ছেই না। এসব বাজারে কেবল আশ্বাস ছাড়া আর কিছু প্রাপ্তি নেই। অথচ প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় বলছে, বেশ কয়েকটি দেশে জনশক্তি রফতানির বাজার ভাল হচ্ছে। গত বছর এসব বাজারের প্রায় ৫ লাখের বেশি কর্মী চাকরি নিয়ে গেছেন। বাস্তবে বন্ধ শ্রমবাজার খুলতে দফায় দফায় প্রতিনিধিদল পাঠানোই ছিল একমাত্র কাজ। একইভাবে বিভিন্ন দেশ থেকে বাংলাদেশেও প্রতিনিধিদল এসে জনশক্তি নেয়ার আগ্রহ দেখান। এর বাইরে শ্রমবাজরে তেমন কোন উন্নয়ন ছিল না। এবার শ্রমবাজারের উন্নয়নে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় নানা কর্মসূচী হাতে নিয়েছে। দক্ষ জনশক্তি রফতানির টার্গেট ধরেছেন এ বছর ৭ লাখের বেশি। এ জন্য দেশের বিভিন্ন এলাকায় প্রশিক্ষণ কেন্দ্রগুলোর কারিকুলামে পরিবর্তমান আনা হয়েছে। মন্ত্রণালয়ের হিসাব অনুযায়ী গত বছরের জানুয়ারি থেকে ২২ ডিসেম্বর পর্যন্ত বাংলাদেশের শ্রমবাজারগুলোতে পাঁচ লাখ ৩৮ হাজার ছয় শ’ ৬৭ জন বাংলাদেশী চাকরি নিয়ে গেছেন। এই হিসাব ২০১৩ সালের তুলনায় ৩৫ শতাংশ বেশি। তবে ২০১৪ সালে বিদেশ চাকরি নিয়ে যাওয়ার পরিমাণ ছিল চার লাখ ২৫ হাজার ছয় শ’ ৮৪ জন কর্মী বিদেশে চাকরি নিয়ে গেছে বলে জানিয়েছে। আর গত বছরের ৩০ নবেম্বর পর্যন্ত ১৪ দশমিক শূন্য ৪ বিলিয়ন (এক হাজার চারশ’ চার কোটি) মার্কিন ডলার রেমিট্যান্স বাংলাদেশে এসেছে। অথচ বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের গুরুত্বপূর্ণ খাত জনশক্তি রফতানির বাজারে চরম মন্দা অবস্থা বিরাজ করছে। সাগর পথে আদম পাচারের ঘটনার কারণে এই খাতটি এখন মারাত্মক হুমকির মুখে পড়েছে। সরকারের হাতে নেয়া টার্গেট কোনভাবেই পূরণ করতে পারছে না। প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় মালয়েশিয়া ও সৌদি আরবের মাধ্যমে টার্গেট পূরণ করার টার্গেট নিয়েছিল। কিন্তু মালয়েশিয়ার বাজার ধরতে গেলে বন্ধই হযে গেছে। খোলা আছে সৌদি আরব। কিন্তু সৌদি আরবে এই মুহূর্তে মহিলা কর্মী নিয়োগ করতে আগ্রহী। বাংলাদেশ থেকে যে পরিমাণ মহিলা কর্মী নিতে আগ্রহ সেই পরিমাণ কর্মীও তারা পাচ্ছে না। সব মিলে জনশক্তির বাজারটির ভবিষ্যত অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। সূত্র জানিয়েছে, প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও সংশ্লিষ্ট দেশে বাংলাদেশ দূতাবাসের লোকজনের সমন্বয়হীনতা থাকার কারণে জনশক্তি রফতানির বাজার সৃষ্টি করতে পারছে না। মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে ৬ থেকে ৭ বছর ধরে বৈধপথে কর্মী নিয়োগ হচ্ছে না। মালয়েশিয়াতেও ৬ বছর ধরে বৈধভাবে কোন কর্মী যেতে পারছেন না। পরিস্থিতি এমন যে, কোন শ্রমবাজারেই বর্তমানে কর্মী নিয়োগ উল্লেখযোগ্য হারে নিয়োগ হচ্ছে না। মালয়েশিয়া ৫ লাখ কর্মী নিয়োগের ঘোষণা দিয়েই ঘোষণার মধ্যে সীমা বদ্ধ রযেছে। কার্যত কোন উদ্যোগ নেই। সৌদি আরব, বাহরাইন, কাতার, দুবাই, কুয়েতসহ মধ্যপ্রাচ্যের কোন দেশেই বর্তমানে কর্মী নিয়োগ হচ্ছে না। অন্যান্য শ্রমবাজারে নিজ নিজ উদ্যোগে কর্মীরা গেলেও তা সংখ্যায় অনেক কম। যদি প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় থেকে বলা হয় ১৬২টি দেশে বাংলাদেশের শ্রমবাজার রয়েছে। এই ১৬২ দেশের মধ্যে এমন এমন দেশে রয়েছে যে, গত কয়েক বছরে একজন কর্মীও চাকরি নিয়ে যেতে পারেননি। প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থানমন্ত্রী নূরুল ইসলাম বিএসসি সম্প্রতি জানিয়েছেন, নতুন বছরে জনশক্তির বাজার বাড়াতে নানা পরিকল্পনা হাতে নেয়া হয়েছে। কর্মীদের বিদেশী ভাষায় পারদর্শিতা, প্রশিক্ষণের মান উন্নয়নের জন্য আন্তর্জাতিক এ্যাক্রেডিটেশন প্রতিষ্ঠার সঙ্গে এ্যাফিলিয়েশন করা, প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠানে আধুনিক যন্ত্রপাতি সংযোজন এবং নিয়মিতভাবে প্রশিক্ষকদের দক্ষতা উন্নয়নমূলক প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা নেয়া, আন্তর্জাতিক শ্রম বাজারের চাহিদার আলোকে বিদ্যমান কোর্স কারিকুলামকে নিয়মিত আপগ্রেড করা, বেসরকারী প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠানগুলো পরিচালিত প্রশিক্ষণের মান গ্রহণযোগ্য পর্যায়ে রাখার জন্য নিয়মিতভাবে মনিটরিং ব্যবস্থা নিয়েছে মন্ত্রণালয়। কর্মীরা দক্ষতা অর্জন করলে বিভিন্ন দেশ বাংলাদেশ থেকেই কর্মী নেবে। তখন আর আমাদের জনশক্তি রফতানির ক্ষেত্রে কোন বেগ পেতে হবে না। অন্যদিকে, সৌদি আরবে বর্তমানে পুরুষ কর্মীদের নিয়োগ করা হচ্ছে না। সৌদি কর্তৃপক্ষ ১০ হাজার নারী কর্মী নিয়োগের জন্য গত বছর একটি চুক্তি করে। সেই চুক্তি অনুযায়ী তারা এ পর্যন্ত তিন হাজার নারী কর্মী নিয়েছে। বাকি ৭ হাজার কর্মী কবে নিয়োগ দেবে তার কোন সময়সীমা এখনও জানানো হয়নি। সৌদি কর্তৃপক্ষ নিজেরা এসেই কর্মীদের ইন্টারভিউ নেন এবং সেখান থেকে তারা কর্মী নিয়োগ করেন। এভাবেই চলছে নিয়োগ প্রক্রিয়া। বাংলাদেশের বড় শ্রমবাজার সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত, কুয়েত ও কাতারসহ মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে কূটনৈতিক তৎপরতা বৃদ্ধি করা হলেও কর্মী নিয়োগ হচ্ছে না। গত দুই বছর প্রধানমন্ত্রী নিজে কয়েকটি দেশ সফরে গিয়ে বন্ধ শ্রমবাজার খোলার বিষয়ে আলাপ-আলোচনা করেছেন। কূটনৈতিক তৎপরতা ও প্রধানমন্ত্রীর সফরের সময় কয়েকটি দেশ জনশক্তি নেয়ার আগ্রহ দেখালেও এর সুফল এখনও পাওয়া যায়নি। দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম শ্রমবাজার সংযুক্ত আরব আমিরাত। দেশটিতে ১০ লাখের মতো বাংলাদেশী কর্মরত রয়েছেন। ২০১১ সালে দেশটিতে ২ লাখ ৮২ হাজার ৭৩৯ জন বাংলাদেশী কর্মীর কর্মসংস্থান হয়েছে। ২০১২ সালের আগস্ট পর্যন্ত দেশটিতে কর্মী গেছেন ২ লাখ ১৫ হাজার ৪৫২ জন। কিন্তু ওই বছরেরই সেপ্টেম্বর থেকে বন্ধ হয়ে যায় দেশটির শ্রমবাজার। বাংলাদেশের তৃতীয় বৃহত্তম শ্রমবাজার ছিল মালয়েশিয়া। দেশটিতে ৬ লাখের বেশি বাংলাদেশী কর্মী কর্মরত রয়েছেন। ২০০৯ সাল থেকে বড় এ শ্রমবাজারটি বন্ধ হয়ে যায়। চার বছর পর ২০১২ সালের নবেম্বরে উভয় দেশের সরকারের সঙ্গে জি টু জি (সরকারীভাবে) পদ্ধতিত কর্মী প্রেরণে সমঝোতা হয়। ২০১৩ সালের মার্চ মাস থেকে এ পদ্ধতিতে মালয়েশিয়ায় কর্মী পাঠানো শুরু হয়। এই প্রক্রিয়ায় মাত্র সাড়ে ৩ হাজার কর্মী নিয়োগ হয়েছে। জি টু জিতে ১০ হাজারের বেশি কর্মী নিয়োগ দেয়ার কথা ছিল। ২০০৭ সাল থেকে বন্ধ রয়েছে মধ্যপ্রাচ্যের দেশ কুয়েতের শ্রমবাজার। দেশটিতে দুই লাখেরও বেশি বাংলাদেশী কর্মরত রয়েছেন। এখন পর্যন্ত বাজারটি উন্মুক্ত হয়নি। একই অবস্থা বাহরাইন, লেবানন, ওমান ও জর্দানেও। বিএমইটি সূত্রে জানা যায়, ২০০৮ সালে ৮ লাখ ৭৫ হাজার ৫৫ জন বাংলাদেশী কর্মী বিভিন্ন দেশে পাঠানো হয়। কিন্তু ২০০৯ সাল থেকে পর্যায়ক্রমে সৌদি আরব, মালয়েশিয়া ও সংযুক্ত আরব আমিরাতসহ বাংলাদেশের বৃহৎ শ্রমবাজারগুলো বন্ধ হওয়ার পর জনশক্তি রফতানির হারও কমে গেছে। ২০০৯ সালে ৪ লাখ ৭৫ হাজার ২৭৪ জন, ২০১০ সালে ৩ লাখ ৯০ হাজার ৭০২ জন, ২০১১ সালে ৫ লাখ ৬৮ হাজার ৬২ জন, ২০১২ সালে ৬ লাখ ৭ হাজার ৭৯৮ জন এবং ২০১৩ সালে ৪ লাখ ৯ হাজার ২৫৩ জন কর্মী বিদেশে গেছেন। সর্বশেষ ২০১৪ সালে ৩ লাখ ৮২ হাজার ২৯৮ জন কর্মী বিদেশে চাকরি নিয়ে গেছে। ২০১৫ সালে পাঁচ লাখ ৩৮ হাজার ছয় শ’ ৬৭ জন কর্মী বিদেশে চাকরি পেয়েছেন। নতুন বছরে ৭ লাখের বেশি কর্মী বিদেশ পাঠানোর টার্গেট নেয়া হয়েছে। নতুন পুরাতন বাজারে দক্ষ জনশক্তি নিয়োগের জন্য বেশ কয়েকটি দেশের সঙ্গে চুক্তি হওয়ার কথা রয়েছে। চুক্তিগুলো হলেই জনশক্তির বাজার সৃষ্টি হবে। বাংলাদেশ জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর (বিএমইটি) ডিজি সামছুন নাহার সম্প্রতি জানান, ১৯৭৬ সাল থেকে ২০১২ সাল পর্যন্ত ৮০ লাখ ৭৮ হাজার ৭৮৮ জন বাংলাদেশী কর্মী বিভিন্ন দেশে চাকরি নিয়ে গেছেন। এ বছর জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত ৩ লাখ ৭৪ হাজার ৪৩৭ জন কর্মী বিদেশ পাঠানো হয়েছে। টার্গেট নেয়া হয়েছে, ৫ লাখ কর্মী বিদেশে পাঠানোর। কিন্তু এ সংখ্যা আরও অনেক বেড়ে যাবে। কারণ এরমধ্যে জনশক্তি রফতানির তিনটি নতুন বাজার সৃষ্টি হয়েছে। এই বাজারগুলো হচ্ছে- হংকং, ম্যাকাউ, থাইল্যান্ড। প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, নিউজিল্যান্ড, রাশিয়া, অস্ট্রেলিয়া, কানাডা, সুদান, গ্রীস, লাইবেরিয়া, তানজানিয়া, এসতোনিয়, আজারবাইজান, নাইজেরিয়া, বোতসোয়ানা, সিয়েরালিয়ন, তাইওয়ান, স্পেন, পোল্যান্ড, দক্ষিণ আফ্রিকা, চেক রিপাবলিক, বেলজিয়াম, জার্মানি, জাপান, দক্ষিণ আফ্রিকাসহ পূর্ব ইউরোপের কয়েকটি দেশে শ্রমবাজার খোঁজা হচ্ছে। এসব দেশে কূটনৈতিক তৎপরতা বাড়ানো হয়েছে। প্রবাসী কল্যাণমন্ত্রীর নেতৃত্বে অনেক দেশ সফর করে ভাল সাড়া পাওয়া গেছে। বিএমইটির পক্ষ থেকে প্রতিনিধিদল নিয়ে জর্দান, নিউজিল্যান্ডসহ বেশ কয়েকটি দেশ সফর করে ভাল সাড়া পাওয়া গেছে। ওইসব দেশের কর্তৃপক্ষ বাংলাদেশ থেকে কর্মী নিতে আগ্রহ প্রকাশ করেছে। এসব দেশে কোন বাজারই তৈরি হয়নি। গত কয়েক বছর ধরে এসব দেশে মন্ত্রণালযের প্রতিনিধিরা কেবল আলাপ আলোচনাই করে গেছেন। একজন কর্মীও এসব বাজারে যেতে পারেনি। এখন পুরনো বাজারই ধরে রাখতে পারছে না বাংলাদেশ। এসব দেশে কূটনৈতিক তৎপরতা বাড়ানো হয়েছে। তাছাড়া এসব দেশে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধিদল ভ্রমণ করে একজন কর্মীও পাঠাতে পারেনি। মন্ত্রণালয়ের ৫ জন করে প্রতিনিধি বিশ্বের ৮০টির ওপরে দেশ সফর করে এলেও একজন কর্মীর বাজারও সৃষ্টি করতে পারেনি তারা। উল্টো সরকারের বিপুল পরিমাণ অর্থ অপচয় হয়েছে। এদিকে, প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয় থেকে অভিবাসন-ব্যয় কমাতে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর সঙ্গে সমন্বিতভাবে কাজ করার উদ্যোগ নিয়েছে বাংলাদেশ। এ লক্ষে নেপাল ও ভারতসহ শ্রমিক রফতানিকারক দেশগুলোর সঙ্গে শীঘ্রই ধারাবাহিক আলোচনা শুরু হয়েছে। আর এতে সফলতা পাওয়া গেলে পরবর্তী সময়ে শ্রমশক্তি আমদানিকারক দেশগুলোর সঙ্গেও অভিবাসন ব্যয় কমাতে আলোচনা করবে সরকার। পররাষ্ট্র ও প্রবাসীকল্যাণ মন্ত্রণালয় যৌথভাবে কাজটি করছে। সূত্র জানিয়েছে, গত কয়েক বছর ধরে অভিবাসন ব্যয় বেড়ে যাওয়ার কারণে সাধ থাকলেও সাধ্যের অভাবে অনেক কর্মী বিদেশে চাকরি নিয়ে যেতে পারছেন না। সরকার গত তিন বছরে দেশের অভ্যন্তরের অভিবাসন ব্যয় কমানোর জন্য নানা উদ্যোগ নিলেও সফল হয়নি। ফলে এবার অভিবাসন ব্যয় কমাতে সার্ক দেশগুলোর সঙ্গে একাট্টা হয়ে সম্মিলিতভাবে কাজ করার কথা ভাবা হচ্ছে।
×