ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ১১ মে ২০২৪, ২৭ বৈশাখ ১৪৩১

পেশোয়ারে বিশ্ববিদ্যালয়ে তালেবান জঙ্গীদের হামলা ॥ নিহত ২১

প্রকাশিত: ০৫:২২, ২১ জানুয়ারি ২০১৬

পেশোয়ারে বিশ্ববিদ্যালয়ে তালেবান জঙ্গীদের হামলা ॥ নিহত ২১

জনকণ্ঠ ডেস্ক ॥ পাকিস্তানের খাইবার পাখতুনখাওয়া প্রদেশে সন্দেহভাজন জঙ্গীদের নির্বিচার গুলিবর্ষণে কমপক্ষে ২১ নিহত এবং ৩০ জন আহত হয়েছে। গ্রেনেড ও এ্যাসল্ট রাইফেল হাতে একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে ঢুকে আবৃত্তি অনুষ্ঠানে জড়ো হওয়া শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের ওপর নির্বিচারে গুলি ও বোমা হামলা চালিয়ে এ হত্যাকা- ঘটানো হয়। হামলার পর শিক্ষার্থীদের মধ্যে ব্যাপক আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। বুধবার সকালে পেশোয়ার থেকে ৫০ কিলোমিটার দূরে চরসাড্ডা শহরের বাচা খান বিশ্ববিদ্যালয়ে এ ঘটনা ঘটে। নিষিদ্ধ জঙ্গী সংগঠন তেহরিক-ই-তালিবান পাকিস্তান এক ফেসবুক পোস্টে এ হামলার দায় স্বীকার করেছে বলে ডনের খবরে জানানো হয়েছে। খবর বিবিসি ও ডন অনলাইনের। হামলা শুরুর পর নিরাপত্তাবাহিনীর কর্মীরা ঘটনাস্থলে পৌঁছে কিছু শিক্ষার্থীকে সরিয়ে নিলেও প্রায় ঘণ্টা তিনেক সেখানে গোলাগুলি চলে। পাকিস্তান সেনাবাহিনীর মুখপাত্র অসিম বাজওয়া এক টুইটে জানান, সেনা সদস্যদের গুলিতে হামলাকারীদের অন্তত চারজন নিহত হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিটি ভবন ও ব্লকে তল্লাশি চালানো হয়েছে। আঞ্চলিক পুলিশ প্রধান সাইদ ওয়াজির বলেন, জঙ্গী হামলায় কমপক্ষে ২১ জন নিহত হয়েছে। এদের বেশিরভাগই বিশ্ববিদ্যালয় হোস্টেলের ছাত্র। অধিকাংশের মাথা ও বুকে গুলি করে হত্যা করা হয়। তিনি আরও বলেন, জঙ্গী হামলায় ছাত্র, কর্মচারী ও নিরাপত্তারক্ষীসহ কমপক্ষে আরও ৩০ জন মারাত্মক জখম হয়েছে। তিনি বলেন, জঙ্গীরা ঘন কুয়াশার সুবিধা কাজে লাগিয়েছে। কারণ মাত্র ১০ মিটার দূরের কোন বস্তুও দেখা যাচ্ছিল না। এএফপির একজন সংবাদদাতা বলেন, আমি ঘটনাস্থল ছাত্র হোস্টেলে রক্তের বন্যা এবং আসবাবপত্র তছনছ অবস্থায় দেখতে পাই। ডন জানায়, ২০১৪ সালের ডিসেম্বরে পেশোয়ারে সেনাবাহিনী পরিচালিত স্কুলে ঢুকে জঙ্গীরা যে কায়দায় ১৩২ শিক্ষার্থীসহ ১৪১ জনকে হত্যা করেছিল, বাচা খানের হামলাও হয়েছে একই কায়দায়। স্থানীয় সময় সকাল সাড়ে ৯টায় আবৃত্তির অনুষ্ঠান চলার সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের পেছন দিকের সীমানা প্রাচীর ডিঙিয়ে ভেতরে ঢোকে আট থেকে দশজন বন্দুকধারী। ভেতরে ঢুকেই তারা কয়েকটি বিস্ফোরণ ঘটায় এবং গুলি শুরু করে। পাখতুন প্রদেশের এক সময়ের জাতীয়তাবাদী নেতা বাচা খানের মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে ভেতরে তখন একটি আবৃত্তির অনুষ্ঠান চলছিল। তার নামেই এ বিশ্ববিদ্যালয়ের নামকরণ হয়েছে। বিবিসি জানায়, গুলি শুরুর পর শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও কর্মচারীরা নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে ছুটোছুটি শুরু করেন। অনেকে পরীক্ষার হল বা টয়লেটের ভেতরেও ঢুকে পড়েন। হামলার খবর পেয়ে সেনাবাহিনীর কমান্ডোরা ঘটনাস্থলে ছুটে আসেন। দুই পক্ষের গোলাগুলির মধ্যেই অধিকাংশ শিক্ষক-শিক্ষার্থীকে সরিয়ে নেন তারা। অনুষ্ঠান উপলক্ষে আসা শিক্ষার্থীদের অভিভাবকদের গোলাগুলি চলার সময় বাইরে সরিয়ে নেয়া হয়। বিপুলসংখ্যক সংবাদকর্মীও সেখানে ভিড় করেন। জরুরী পরিস্থিতির জন্য ২০টি এ্যাম্বুলেন্স এনে রাখা হয় সেখানে। বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থী ডনকে বলেন, হামলাকারীরা সবাই বয়সে তরুণ, আমাদের মতোই। তাদের হাতে আমি একে-৪৭ রাইফেল দেখেছি। সেনাবাহিনী যে ধরনের জ্যাকেট পরে, তেমন জ্যাকেট দেখেছি তাদের গায়ে। ওই শিক্ষার্থী জানান, বিশ্ববিদ্যালয়ে তিন হাজারের বেশি শিক্ষার্থী থাকলেও ছুটির কারণে বুধবার ক্লাস বন্ধ ছিল। ফলে হোস্টেলে শ’ তিনেক শিক্ষার্থী আর আবৃত্তির অনুষ্ঠানে জড়ো হওয়া লোকজন ছাড়া খুব বেশি ভিড় ছিল না। একজন সামরিক মুখপাত্র বলেন, চার হামলাকারী নিহত হয়েছে। তবে পুলিশের দেয়া ২১ জন নিহতের তালিকায় তারা আছে কি-না সেটা নিশ্চিত নয়। এদিকে এ হামলার দায় স্বীকার করেছে হাকিমুল্লাহ মেহসুদের তেহরিক-ই-তালিবান পাকিস্তানের (টিটিপি) একটি অংশের কমান্ডার ওমর মনসুর। তিনি বলেন, আমাদের চার আত্মঘাতী হামলকারী বাচা খান বিশ্ববিদ্যালয়ে আজ (বুধবার) এ হামলা চালিয়েছে। ২০১৪ সালে পেশোয়ারে আর্মি স্কুলে হামলার মূল পরিকল্পনাকারী ছিলেন এই মনুসর- ধারণা পাকিস্তান নিরাপত্তা বাহিনীর। তবে টিটিপির কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ এ ঘটনায় তাদের সম্পৃক্ততা অস্বীকার করেন। টিটিপির মুখপাত্র মুহাম্মদ খুরাসানি এক টুইটে বলেন, আজকের এ ঘটনার তীব্র নিন্দা জানাচ্ছে টিটিপি। এ ধরনের অনৈসলামিক কাজের সঙ্গে যুক্ত নয় টিটিপি। তিনি প্রত্যয় ব্যক্ত করে বলেন, এ হামলায় যারা জড়িত তাদের বিচারের আওতায় আনা হবে। এক জ্যেষ্ঠ নিরাপত্তা কর্মকর্তা বলেন, হামলাকারীদের চিহ্নিত করা হয়েছে এবং তাদের আঙুলের ছাপ নেয়া হয়েছে। তিনি বলেন, হামলাকারীদের দু’জন ছিল টিনএজ এবং অন্যদের বয়স ২০-এর কাছাকাছি। তাদের হাতে ছিল হ্যান্ড গ্রেনেড এবং কালাশনিকভ রাইফেল। সাহসী শিক্ষক ॥ বাচা খান বিশ্ববিদ্যালয়ে হামলা রুখে দাঁড়ানোর চেষ্টা করেছিলেন রসায়নের এক শিক্ষক। তাকে গুলি করে হত্যা করে জঙ্গীরা। ভূতত্ত্ব বিভাগের ছাত্র জহুর আহমেদ বলেন, হামলাকারীদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছিলেন রসায়নের শিক্ষক সৈয়দ হামিদ হোসেন। জহুর বলেন, যখন প্রথম গুলি ছোঁড়া হয়, তখন ওই শিক্ষক ভবনের বাইরে বের হতে নিষেধ করেন। এ সময় তাঁর হাতে একটি পিস্তল ছিল। এর একটু পরই তার বুকে একটি বুলেট এসে লাগে। দু’জন জঙ্গী তখন গুলি চালাচ্ছিল। আমি দৌড়ে ভেতরে চলে যাই। এরপর পেছনের দেয়াল টপকে পালিয়ে রক্ষা পাই। আরেক ছাত্র বলেন, যখন গোলাগুলি চলছিল, তখন আমি ক্লাসে ছিলাম। তিনি বলেন, আমরা দেখলাম তিন জঙ্গী ‘আল্লাহ মহান’ বলে চিৎকার করছিল এবং আমাদের বিভাগের সিঁড়ির দিকে দৌড়ে আসছিল। এ সময় এক ছাত্র ভয়ে জানালা দিয়ে লাফিয়ে পড়ে। তিনিও রসায়নের শিক্ষককে পিস্তল হাতে হামলাকারীদের দিকে গুলি ছুঁড়তে দেখেন। এ সময় একটি গুলি এসে তার বুকে লাগে এবং তিনি পরে যান। এরপর জঙ্গীরা রেজিস্ট্রারের কার্যালয়ের দিকে এলে আমরা পালিয়ে যাই। পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট মামনুন হোসেন শিক্ষক নিহতের খবর নিশ্চিত করেছেন। জরুরী সেবা বিভাগের মুখপাত্র বেলাল ফাইজি বলেন, অন্য ছাত্র এবং শিক্ষকরাও বন্দুকধারীদের দিকে গুলি ছুঁড়েছেন। আর এ কারণেই হামলাকারীরা সফল হতে পারেনি। বিরোধীদল নেতা ইমরান খান চরসাড্ডায় সংবাদমাধ্যকে বলেন, সাধারণ লোকজনও বন্দুক নিয়ে বাচা খান বিশ্বদ্যিালয়ের দিকে যায় এবং হামলাকারীদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের প্রস্তুতি নেয়।
×