ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

জঙ্গীর পুনরুত্থান

প্রকাশিত: ০৫:৪৮, ১৮ জানুয়ারি ২০১৬

জঙ্গীর পুনরুত্থান

জঙ্গীবাদকে চাপা দিয়ে রাখলেই তার বিনাশ যে ঘটে না তার জলজ্যান্ত উদাহরণ হিসেবে প্রতিভাত হলো জাকার্তায় জঙ্গী হামলায়। অতীতে এক সময় নিজেরাই সন্ত্রাসবাদকে লালন করেছে দেশটিতে। কত মানুষ যে হতাহত হয়েছে তার ইয়ত্তা নেই। বিশ্বের সবচেয়ে বড় মুসলিম জনসংখ্যার দেশ ইন্দোনেশিয়া গত বছরখানেক ধরেই জঙ্গী হামলার হুমকি পেয়ে আসছিল। ইসলামী খেলাফত প্রতিষ্ঠার নামে ব্যাপক হত্যা-সন্ত্রাস চালিয়ে আসা আইএস ইন্দোনেশিয়াকেই তাদের এশিয়ায় অবতরণের প্রথম বন্দর বানাতে আগ্রহী। অবশ্য ইন্দোনেশিয়ায় জঙ্গীবাদী সংগঠনগুলোর উৎপাত এবং নাশকতা নতুন নয়। সরকারের তৎপরতার কারণে যদিও অনেক দিন ধরেই দেশটি সবচেয়ে ভয়ঙ্কর নেটওয়ার্কগুলো নিষ্ক্রিয় ছিল। বিশেষ করে ২০০২ সালের আলোচিত বালি হামলায় জড়িত জেমাআ ইসলামিয়ার মতো জঙ্গী সংগঠনের বেশিরভাগ নেতা নিহত বা কারাবন্দী হওয়ায় অন্তত গত ছয় বছর পরিস্থিতি মোটামুটি শান্ত ছিল। সাম্প্রতিক সময়ে জঙ্গীগোষ্ঠী আইএসের সঙ্গে সম্পৃক্ত অনেককে গ্রেফতার করা হলেও মধ্যপ্রাচ্যের যুদ্ধক্ষেত্র ফেরত ইন্দোনেশীয়রা স্বদেশে হামলা চালাতে পারে, এমন আশঙ্কা করা হচ্ছিল। অবশেষে সেই আশঙ্কাই সত্যে পরিণত হলো। বোমা আর বন্দুক-বারুদের গর্জনে কেঁপে উঠেছিল রাজধানী জাকার্তা। ঘটনার পর পরই দায় স্বীকার করেছে আইএস। গত নবেম্বরে প্যারিসে এক সঙ্গে কয়েকটি স্থানে সমন্বিত হামলার পর ইন্দোনেশিয়ার জঙ্গী বুদ্ধিজীবী খ্যাত বাহারুল নাঈম একটি ব্লগে তার অনুসারীদের বিশ্লেষণ করে দেখান, কিভাবে ইন্দোনেশিয়ার নিরক্ষীয় জঙ্গলে গেরিলাযুদ্ধ থেকে ‘জিহাদ’কে সহজেই শহরে নিয়ে যাওয়া যায় এবং ইন্দোনেশিয়ার ‘এ্যাকশনে’ যাবার জন্য যথেষ্ট আইএস সমর্থক রয়েছে বলে উল্লেখ করে জানান, তারা কেবল অপেক্ষা করছেন সঠিক সুযোগের জন্য। প্যারিস ঘটনার পর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নজর রেখে ইন্দোনেশিয়ার গোয়েন্দারা হামলার আশঙ্কা করেন। এরপর জাভার জঙ্গলে অভিযান চালিয়ে কয়েকজন জঙ্গীকে গ্রেফতার এবং তাদের কাছ থেকে বোমা বানানোর সরঞ্জাম, সুইসাইড ভেস্ট আর জিহাদের নির্দেশিকা পুস্তকাদি উদ্ধার করে। প্যারিস হামলার ধরন অনুসরণ করে একই সময়ে জাকার্তার ছয়টি স্থানে বিস্ফোরণ ও গোলাগুলি হয়। তবে ঘটনায় হতাহতের সংখ্যা তুলনামূলকভাবে কম। ধারণা করা হচ্ছে, হামলাকারীদের অস্ত্র ও প্রশিক্ষণের অভাব এর কারণ। তবে এরা সবাই লিবিয়ায় প্রশিক্ষিত। আত্মঘাতী এ হামলা সামনে আরও হামলার ইঙ্গিত রেখে গেছে। এ অঞ্চলে আইএসের তৎপরতা শুরুর এক অশনি সঙ্কেতও এই ঘটনা। ২০০২ সালে বালি হামলার দুই শতাধিক মানুষের মৃত্যুর পর প্রায় অভ্যন্তরীণ সন্ত্রাসবাদবিরোধী লড়াইয়ের পাশাপাশি দেড় দশক ধরে ইন্দোনেশিয়া তার আন্তর্জাতিক ইমেজ পুনরুদ্ধারে যে ধারাবাহিক চেষ্টা চালিয়ে গেছে, তাতে বড় ধরনের এক আঘাত হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে ১৪ জানুয়ারির এই হামলাকে। ইন্দোনেশিয়ার সন্ত্রাসবাদের পুনর্জন্মে বাংলাদেশসহ এই অঞ্চলের বিশেষ করে মুসলিম অধ্যুষিত সব দেশের আরও বেশি সতর্ক হওয়ার সময় এসেছে। অন্য দেশগুলোর জন্য জাকার্তা হামলা আরও বেশি জেগে ওঠার ডাক দিয়ে গেলেও ইন্দোনেশিয়ার জন্য তা জীবন মরণ সমস্যা হয়ে দেখা দিয়েছে এখন। বিশেষ করে যখন অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারের চেষ্টায় নিয়োজিত সরকার, তখন এ হামলা সে দেশের বহুল প্রত্যাশিত নয়া বিনিয়োগে বড় ধরনের হোঁচট খাবে। ইন্দোনেশিয়ার জঙ্গীবাদের পুনর্জন্মের ঘোষণাই দেয়া হয়েছে এই হামলার মাধ্যমে। ২৫ কোটি মানুষের দেশটি জঙ্গী নির্মূলে অতীতে অনেক প্রচেষ্টা চালালেও তাতে কার্যকর ফল আসেনি। কারণ জঙ্গীরা সিরিয়া, ইরাকে প্রশিক্ষণ নিয়ে আসা। জাকার্তার ঘটনা বাংলাদেশসহ এই উপমহাদেশকে সতর্ক হওয়ার নির্দেশেই দেয়। বাংলাদেশকে প্রস্তুতি নিতে হবে জঙ্গী হামলা প্রতিরোধ ও জঙ্গীবাদ নির্মূলে। এই জন্য সর্বাগ্রে প্রয়োজন জনগণকে সতর্ক করা।
×