ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

কঠোর শাস্তি কাম্য

প্রকাশিত: ০৫:৪৮, ১৮ জানুয়ারি ২০১৬

কঠোর শাস্তি কাম্য

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় দু’দিনব্যাপী সহিংস মৌলবাদী তা-বে যা ঘটেছে, তার নিন্দা জানানোর ভাষা আমাদের জানা নেই। একটি তুচ্ছ বিষয়কে কেন্দ্র করে ঘটনার সূত্রপাত। শহরের টিএ রোডে মোবাইল ফোন নিয়ে বাগ্বিত-ার জের ধরে স্থানীয় ব্যবসায়ী, ছাত্রলীগ ও কওমী মাদ্রাসার শিক্ষার্থীদের সঙ্গে ত্রিমুখী সংঘর্ষ হয়। ঘটনায় আহত এক মাদ্রাসা ছাত্রের মৃত্যু হয় হাসপাতালে। প্রতিবাদে ‘তৌহিদী জনতা’র নামে ডাকা হয় হরতাল। একই কারণে শহরে বিক্ষোভ মিছিল এবং সড়ক ও রেলপথ অবরোধ করে কওমী মাদ্রাসার ছাত্ররা। ঘটনার এখানেই সমাপ্তি হতে পারত। তবে তা হয়নি। বিভিন্ন টিভিতে প্রচারিত এবং জাতীয় দৈনিকগুলোতে প্রদর্শিত ফুটেজ ও ছবিতে দেখা যায়, কওমী মাদ্রাসার ছাত্রদের বিক্ষোভ মিছিল সহিংস, উত্তাল ও অনিয়ন্ত্রিত হয়ে ওঠে। এদের সবার হাতেই ছিল বড় বড় বাঁশের লাঠিসোটা এবং ছাত্রদের সঙ্গে এক শ্রেণীর শিক্ষকও ছিলেন। নিঃসন্দেহে বলা যায়, মাদ্রাসার ছাত্র ও শিক্ষকরা পরিকল্পিতভাবে হামলা চালায় ও অগ্নিসংযোগ করে রেলস্টেশন, স্থানীয় আওয়ামী লীগ অফিস, মুক্তিযোদ্ধা সংসদ, শিল্পকলা একাডেমি, প্রশিকা মানবিক উন্নয়ন কেন্দ্র সর্বোপরি উপমহাদেশের কিংবদন্তি তুল্য সুরসম্রাট ও সঙ্গীতজ্ঞ ওস্তাদ আলাউদ্দীন খাঁ সঙ্গীতালয়ে। বিশেষ করে রেলপথ ও স্টেশনের ক্ষয়ক্ষতি ছিল অবর্ণনীয়, যার জের চলছে এখনও। ব্রাহ্মণবাড়িয়া রেলস্টেশনে অটো সিগন্যাল চালু করা সম্ভব হয়নি। টিকেট ইস্যু করা হচ্ছে হাতে লিখে। এই ঘটনার সঙ্গে মাদ্রাসার ছাত্র ও শিক্ষকদের কোন সম্পর্ক নেই বলে দাবি করে মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ। বাস্তবতা হলো, বিভিন্ন টিভি চ্যানেলে ধারণকৃত ও সম্প্রচারিত ভিডিও ফুটেজে কে বা কারা সশস্ত্র ও সহিংস হামলা চালিয়েছে এবং অগ্নিসংযোগ করেছে, সেসব সবাই দেখেছে। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ঘটনায় পুলিশ প্রশাসন ও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে এ পর্যন্ত ১১টি মামলা দায়ের করা হয়েছে, যাতে আসামি করা হয়েছে অজ্ঞাতনামা কয়েক হাজার ব্যক্তিকে। স্থানীয় পুলিশের দু’জন উর্ধতন কর্মকর্তাকে প্রত্যাহার করা হয়েছে এবং চট্টগ্রাম রেঞ্জের অতিরিক্ত ডিআইজির অধীনে গঠন করা হয়েছে তদন্ত কমিটি। স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দ, মুক্তিযোদ্ধা সংসদ, প্রশিকা মানবিক উন্নয়ন কেন্দ্র, সঙ্গীতাঙ্গন সর্বোপরি ব্রাহ্মণবাড়িয়ার প্রগতিশীল সংগঠন ও প্রতিষ্ঠানের নেতারা ঘটনার জন্য স্বাধীনতাবিরোধী ও মুক্তিযুদ্ধবিরোধী মৌলবাদীদের দায়ী করেছেন। তদন্ত কমিটি ঘটনার পূর্বাপর পর্যালোচনা ও ভিডিও ফুটেজ বিশ্লেষণ করে দায়ী ও জড়িত ব্যক্তিদের খুব দ্রুতই শনাক্ত করতে সক্ষম হবে বলে সবার প্রত্যাশা। এর পাশাপাশি দোষী ব্যক্তিদের যথাযথ তদন্তসাপেক্ষে আইনের আওতায় আনারও বিকল্প নেই। ব্রিটিশ আমল এবং তারও অনেক আগে থেকেই তিতাস নদী বিধৌত ব্রাহ্মণবাড়িয়া ছিল একটি সমৃদ্ধ ও প্রগতিশীল জনপদ। শিল্প-সাহিত্য-সং¯ৃ‹তি ও সঙ্গীতের পীঠস্থান বলে উপমহাদেশে ব্যাপক পরিচিতি ছিল ব্রাহ্মণবাড়িয়ার। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধেও এ জেলার অবদান অস্বীকার করা যাবে না। সে অবস্থায় প্রত্যাশা, পুনরায় মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতার চেতনায় একতাবদ্ধ থেকে এবং সোচ্চার কণ্ঠ হয়ে ঐক্যবদ্ধ প্রতিরোধ গড়ে তোলা দরকার। সেই সঙ্গে জড়িতদের কঠোর শাস্তি কাম্য।
×