ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ১১ মে ২০২৪, ২৮ বৈশাখ ১৪৩১

যশোরে গুড় মেলা ॥ ফিরে আসুক খেজুর বাগান

প্রকাশিত: ০৬:৫৮, ১৭ জানুয়ারি ২০১৬

যশোরে গুড় মেলা ॥ ফিরে আসুক খেজুর বাগান

সাজেদ রহমান, যশোর ॥ ‘ফিরে এসো খেজুর বাগান’ প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে যশোরে দ্বিতীয়বারের মতো খেজুর গুড় শিল্পমেলা অনুষ্ঠিত হলো শনিবার। চারুপীঠ আর্ট রিসার্চ ইনস্টিটিউটে সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত চলে এ মেলা। দিনব্যাপী এ মেলায় ছিল খেজুর রস, গুড়, পাটালি, গুড়ের পিঠা-পায়েস মিষ্টান্নের প্রদর্শনী ও বিপণন, শিশুদের অংকন প্রতিযোগিতা, আলোকচিত্র প্রদর্শনী, বাউলগান ও আলোচনা সভা। আবারও আমাদের জীবন নলেনগুড়ের সৌরভে, স্বাদে ভরে উঠুক- এই আকাক্সক্ষাকে সামনে রেখে এবার আয়োজন করা হয়। আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন সাবেক শিক্ষা সচিব নজরুল ইসলাম খান। বিশেষ অতিথি ছিলেন কৃষি বিজ্ঞানী ড. সিরাজুল ইসলাম ও স্থপতি কাজী আনিস উদ্দিন ইকবাল। সভাপতিত্ব করেন জেলা প্রশাসক ড. হুমায়ুন কবীর। যশোরের প্রধানতম ঐতিহ্য খেজুর রস, গুড়, পাটালি। যা চিরকাল বাঙালীর রসনার অঙ্গ হয়ে পিঠা, পায়েস, মিষ্টান্নে আমাদের কৃষ্টিকে মধুময় করেছে। এক সময় বৃহত্তর যশোরের প্রায় সবখানেই খেজুর গাছের বন ছিল। ব্রিটিশ আমলে খেজুর গুড় থেকে চিনি তৈরির শত শত কারখানা প্রতিষ্ঠা পায় এবং বিশ্ববাজারে চিনির যোগানদাতা হয় যশোর। আজও সারাদেশের ও বিদেশের খেজুর গুড়ের প্রধান অংশের যোগানদাতার ভূমিকাতেও যশোর। তাই খেজুর রসের পাটালি এখনও যশোরের যশ হিসাবে খ্যাত। যে কারণে যশোর জেলার প্রতীক খেজুরগাছ। খেজুরের রসে তৈরি গুড় ও পাটালির স্বাদ ও বৈচিত্র বিস্ময়কর। গবেষণা ও প্রচেষ্টা থাকলে এই শিল্পের বিশ্বায়ন সম্ভব। পৌষ এলেই সমগ্র যশোরের মাঠ-প্রান্তর-গ্রাম-গঞ্জে খেজুর রসের মৌ মৌ গন্ধ ছড়িয়ে পড়ে। গাছ কাটুনি, রসের হাঁড়ি পোড়ানো, রস জ্বাল দেয়ার ধুম পড়ে যায়। পিঠা পায়েসের পার্বণ চলতে থাকে ঘরে ঘরে। বাঙালীর জীবনে খেজুর গুড়ের চাহিদা কখনোই ম্লান হওয়ার নয়। ২০১২ সাল পর্যন্ত যশোরের বাজারে খাঁটি খেজুর গুড় পাওয়া যাচ্ছিল। ২০১৩ থেকেই যশোরের প্রধানতম ঐতিহ্য খাজুরার পাটালিসহ সব ধরনের গুড় পাটালির ঐতিহ্য ধ্বংস হতে চলেছে। চারুপীঠ আয়োজিত প্রথম খেজুর গুড় মেলা ২০১৫ এর সেমিনারে উঠে আসে যুগের পরিবর্তনে আজ গুড়চাষের সকল ব্যবস্থাপনাকে নতুন বাস্তবতার আলোকে পুনর্গঠন ও আধুনিকায়নের অপরিহার্যতা। খেজুর, তাল, পামের জন্য যশোরের মাটিই শ্রেষ্ঠ। এখানে নতুন করে সুপরিকল্পিত উন্নত চাষ ব্যবস্থা গড়ে তোলা যাবে। তাই যশোর কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটে খেজুর, তাল, পাম গবেষণা কার্যক্রমে অগ্রাধিকার দেয়া প্রয়োজন বলে প্রস্তাবনা রেখেছেন কৃষিবিজ্ঞানীগণ। এই প্রকল্পটি উন্নত প্রজাতি নির্ধারণ করে পরিকল্পিতভাবে বৃক্ষরোপণ, গাছের যতœ, গুড়চাষীদের রস আহরণ ও গুড় তৈরিতে উন্নত প্রশিক্ষণ ও গবেষণার মাধ্যমে উন্নত চাষ পদ্ধতি কার্যকর করে তুলবে। নতুন করে কীভাবে খেজুর গাছ রোপণ করা যায় এটাই সবার প্রধান চিন্তা হওয়া উচিত। হাইওয়ে ও গ্রামের রাস্তার দু’ধার ঘেঁষে লাখ লাখ খেজুর গাছ রোপণ সম্ভব। নদীর পাড়, বাঁওড় ও খালের পাড় সব জায়গাতেই খেজুরবাগান হতে পারে। যশোর ক্যান্টনমেন্ট, বিজিবি ক্যাম্পসহ নানা প্রতিষ্ঠান ও অঙ্গনে পরিকল্পিত খেজুরবাগান করা সম্ভব। যখন পরিকল্পিতভাবে রোপণ করা নতুন চারা বেড়ে উঠবে, বেড়ে ওঠা লাখ লাখ গাছ লিজ নিয়ে ছোট-বড় ফার্ম হাউজ গড়ে উঠতে পারে। তাদের অনেক ফার্ম আধুনিক ব্যবস্থার মাধ্যমে রস উৎপাদন করবে, অনেক ফার্ম হবে গুড় তৈরির অত্যাধুনিক ফ্যাক্টরি। এভাবে উন্নতমানের ও ব্যাপক পরিমাণে গুড় উৎপাদন ও বিপণনে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক বাজার প্রতিষ্ঠা পাবে। গুড় শিল্পের নতুন নতুন ব্যবহারের উদ্ভাবন ঘটবে। এটাই আগামীর বাস্তব ছবির সামান্য নমুনা।
×