ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট

প্রকাশিত: ০৫:৫৩, ১৪ নভেম্বর ২০১৫

বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট

বাংলাদেশ এগিয়ে চলছে। শুধু অবকাঠামো ও অর্থনৈতিক উন্নয়নেই নয়, জ্ঞানে-বিজ্ঞানেও বাংলাদেশের অগ্রযাত্রা অব্যাহত রয়েছে। আধুনিক রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশের এই অগ্রসরতায় যুক্ত হলো ‘বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট’-এর বিষয়টি। প্রায়োগিক ও পরিবেশগত সুবিধা বাড়ানোর ব্যাপারে কৃত্রিম উপগ্রহ অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। প্রথমবারের মতো এই কৃত্রিম উপগ্রহ উৎক্ষেপণের মূল কাজের সূচনা হিসেবে চুক্তি সই দেশের জন্য ইতিবাচক সংবাদ। ২০১৭ সালের ১৬ ডিসেম্বরের মধ্যে মহাকাশে এ কৃত্রিম উপগ্রহ (স্যাটেলাইট) উৎক্ষেপণের লক্ষ্য ঠিক করা হয়েছে। বুধবার ফ্রান্সের থ্যালেস এলেনিয়া স্পেসের সঙ্গে এ চুক্তি সই করেছে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি)। এটি মূলত একটি সম্প্রচার এবং যোগাযোগ স্যাটেলাইট। বর্তমানে বাংলাদেশের টেলিভিশন চ্যানেলগুলো ১১২ কোটি টাকার ওপরে প্রতিবছর খরচ করছে। এই পুরো টাকাটাই বিদেশে চলে যায়। কিন্তু বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটের মাধ্যমে এসব সেবা দেয়া সম্ভব হবে। এ প্রকল্পের মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ২ হাজার ৯৬৭ কোটি টাকা। উপগ্রহ উৎক্ষেপণের মূল কাজ ‘স্যাটেলাইট সিস্টেম’ কেনার জন্য খরচ হবে ১ হাজার ৯৫১ কোটি ৭৫ লাখ টাকা। গত ২০ অক্টোবর সরকারী ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি স্যাটেলাইট সিস্টেম কেনার ক্রয় প্রস্তাবটির অনুমোদন দেয়। এর জন্য চলতি বছরের ১৫ জানুয়ারি রাশিয়ার ইন্টারস্পুৎনিকের কাছ থেকে ১১৯ দশমিক ১ ডিগ্রী পূর্ব দ্রাঘিমাংশে অরবিটাল সøট কেনে বাংলাদেশ। এ জন্য খরচ হয় ২১৮ কোটি ৯৬ লাখ টাকা। আধুনিক বিশ্ব তথ্য ও প্রযুক্তির অবাধ আদান-প্রদানের বিশ্ব। কৃত্রিম উপগ্রহ তথ্য ও প্রযুক্তিকে আরও সহজলভ্য করতে অভাবনীয় অবদান রেখে চলেছে। এগুলো মহাকাশে নির্দিষ্ট কক্ষপথে প্রতিনিয়ত অবস্থান করছে। কৃত্রিম উপগ্রহ হলো মহাকাশে উৎক্ষেপিত বৈজ্ঞানিক প্রক্রিয়ায় উদ্ভাবিত উপগ্রহ। এসব উপগ্রহ এমনভাবে পৃথিবীর চতুর্দিকে আবর্তিত হয়, যাতে এর গতির সেন্ট্রিফিউগাল বা বহির্মুখী শক্তি এটিকে বাইরের দিকে গতি প্রদান করে। কিন্তু মাধ্যাকর্ষণ শক্তি একে পৃথিবীর আওতার বাইরে যেতে দেয় না। কৃত্রিম উপগ্রহগুলো বৃত্তাকারে পরিক্রমণ করে না, তার গতি ডিম্বাকৃতির। টিভি ও বেতার সঙ্কেত প্রেরণ এবং আবহাওয়া পর্যবেক্ষণকারী কৃত্রিম উপগ্রহগুলো সাধারণত পৃথিবী থেকে ৩৬ হাজার কিলোমিটার দূরে অবস্থান করে। প্রথম কৃত্রিম উপগ্রহ উৎক্ষেপণের কৃতিত্ব সাবেক সাভিয়েত ইউনিয়নের। ১৯৫৭ সালের ৪ অক্টোবর উৎক্ষেপিত স্পুৎনিক ১ নামের কৃত্রিম উপগ্রহটির নক্সা করেছিলেন সের্গেই করোলিওভ নামের এক ইউক্রেনীয় বিজ্ঞানী। একই বছর সোভিয়েত ইউনিয়ন মহাকাশে দ্বিতীয় কৃত্রিম উপগ্রহ স্পুৎনিক-২ উৎক্ষেপণ করে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ১৯৪৫ সালে মহাকাশে কৃত্রিম উপগ্রহ পাঠানোর পরিকল্পনা করে। তাদের পরিকল্পনা সফল হয় ১৯৫৮ সালের ৩১ জানুয়ারি। তাদের প্রথম কৃত্রিম উপগ্রহ এক্সপ্লোরার-১ এদিন মহাকাশে উৎক্ষেপণ করা হয়। বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট উৎক্ষেপিত হলে দেশের সব মানুষকে যোগাযোগ ও সম্প্রচার সুবিধার আওতায় আনার সরকারের লক্ষ্য পূরণ হবে, বিষয়টি অত্যন্ত আনন্দদায়ক, গর্বের।
×