ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৯ মার্চ ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০

আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে বৈঠকের পর সিইসি

সার্বিক পরিস্থিতি ভাল ॥ সেনা মোতায়েন বিষয়ে দু’একদিনেই সিদ্ধান্ত

প্রকাশিত: ০৬:০৭, ২০ এপ্রিল ২০১৫

সার্বিক পরিস্থিতি ভাল ॥ সেনা মোতায়েন বিষয়ে  দু’একদিনেই সিদ্ধান্ত

স্টাফ রিপোর্টার ॥ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে সার্বিক নিরাপত্তা পরিস্থিতিতে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী রকিবউদ্দিন আহমেদ। তিনি বলেন, নির্বাচনের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি এখন পর্যন্ত ভাল আছে। তবে নির্বাচনে সেনা মোতায়েন করা হবে কিনা তা আগামী দু’ একদিনের মধ্যে কমিশনের বৈঠকে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে বলে উল্লেখ করেন। সেনাবাহিনীকে প্রস্তুত থাকতে বলা হয়েছে। রবিবার আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে বৈঠক শেষে তিনি সাংবাদিকদের কাছে এ কথা জানান। তিন সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে সার্বিক আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে রাজধানীর আগারগাঁওয়ের এনইসির সম্মেলনে কক্ষে এক বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিভিন্ন সংস্থার উর্ধতন প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন। বৈঠক সূত্রে জানা গেছে বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার পক্ষ থেকে বর্তমান আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি শান্তিপূর্ণ বলে উল্লেখ করা হয়েছে। এছাড়া আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষ থেকে নির্বাচনের আগ পর্যন্ত বর্তমান অবস্থা বজায় রাখার আশ্বাস দেয়া হয়েছে। বলা হয়েছে, নির্বাচনী প্রচারে এখন পর্যন্ত কোথাও কোন বিশৃঙ্খলার কোন খবর পাওয়া যায়নি। প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীরা নির্বাচনে জয়ের বিষয়ে শতভাগ আশাবাদী। তাই নির্বাচনী পরিবেশ ঠিক রাখার জন্য কোন পক্ষ বিশৃঙ্খলায় জড়াচ্ছে না। তবে ইসির পক্ষ থেকে নির্বাচনের সময়, নির্বাচনের আগে ও নির্বাচনের পরে যাতে কোন প্রকার সহিংসতা না হয় সেদিকে খেয়াল রাখার আহ্বান জানানো হয়েছে। বিভিন্ন মহল থেকে নির্বাচনে সেনা মোতায়েনের দাবি করা হলেও বৈঠকের আলোচনায় সেনাবাহিনী মোতায়েনের বিষয়টি খুব একটা গুরুত্ব দিয়ে আলোচনায় আসেনি। সেনা মোতায়েনের বিষয়টি আলোচনার এজেন্ডায়ও ছিল না বলে জানা গেছে। শুধুমাত্র সেনাবাহিনীর প্রিন্সিপাল স্টাফ অফিসার বৈঠকে বলেন, কমিশন মনে করলে তারা দায়িত্ব পালনে প্রস্তুত আছে। এর বাইরে বৈঠকে সেনা মোতায়েনের আর কোন প্রসঙ্গ আসেনি বলে জানা গেছে। তবে বৈঠক থেকে বেরিয়ে এসে র‌্যাবের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (এডিজি) কর্নেল জিয়াউল আহসান বলেছেন, সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে সব প্রার্থীই জয়ের বিষয়ে আশাবাদী। তাই কেউ বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করবে না। সরকারী দল হোক আর বিরোধী দল হোক যারাই এ নির্বাচনে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করবে তারাই ধরা খাবে। তিনি বলেন, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতিও নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। সেনাবাহিনী নামানোর কোন প্রয়োজন নেই। বৈঠকে বেশিরভাগ সদস্যই সেনা নামানোর বিপক্ষে রয়েছে বলে উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, সেনাবাহিনীকে মানুষ নামে ভয় পায়। আর কাজে ভয় পায় র‌্যাবকে। তবে তিনি বলেন, নির্বাচনে সেনাবাহিনী মোতায়েন করা হবে কী না সেটা কমিশনের ব্যাপার। তবে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের জন্য পুলিশ ও র‌্যাব যথেষ্ট। এছাড়া বিজিবিও থাকবে। নির্বাচনে জ্বালাও পোড়াও, পেট্রোলবোমা নিয়ন্ত্রণ করতে পারলে নির্বাচন সুষ্ঠু হবে। অবশ্য প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী রকিবউদ্দিন আহমেদ কর্নেল জিয়ার এ মন্তব্যের বিরোধিতা করে সাংবাদিকদের বলেন, সেনা মোতায়েনের সিদ্ধান্ত র‌্যাবের বিবেচনার বিষয় নয়। এ সিদ্ধান্ত নেবে কমিশন। আমরা তাদের কাছ থেকে সার্বিক পরিস্থিতি বিষয়ে শুনেছি মাত্র। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বৈঠকে সবার সঙ্গে আলোচনা হয়েছে। এখন ইসির সঙ্গে বসে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। সিইসি বলেন, আসন্ন সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে যাতে কোন ধরনের সহিংসতা না হয় সে বিষয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয় ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে সতর্ক করা হয়েছে। কোন ধরনের ঘটনা ঘটলে ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে। ঢাকা উত্তর দক্ষিণ ও চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনকে গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করা হচ্ছে। সে কারণে সর্বোচ্চ নিরাপত্তা ব্যবস্থা করা হচ্ছে। যাতে সমস্ত ভোটার নির্বিঘেœ শান্তিপূর্ণ পরিবেশে ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারেন। ভোটকেন্দ্রে যদি কেউ বল প্রয়োগ করে তাহলে দ্বিগুণ বল প্রয়োগ করে তাদের প্রতিহত করা হবে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী মোতায়েনের বিষয়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর প্রতিনিধিরা কি মত দিয়েছেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, ওই রকমভাবে তো আলোচনা হয় না। তবে বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা ও আইনশৃঙ্খলার প্রতিনিধিরা বৈঠকে জানিয়েছেন এ পর্যন্ত সার্বিক অবস্থা সুষ্ঠু রয়েছে। তারপরও তাদের বলেছি, আপনারা খেয়াল রাখেন এ পরিবেশ ঝড়ের আগে থমথমে অবস্থা কিনা। আমরা কাউকে কোন চান্স দেব না। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সেনাবাহিনী মোতায়েন করা হয় কয়েকদিন আগে। আমাদের হাতে সময় আছে। কাল পরশু অথবা তার পর দিন সিদ্ধান্ত নেব। তিনি জানান, বৈঠকে তাদের বলে রাখা হয়েছে তারা যেন প্রস্তুত থাকে। নির্বাচনে আচরণবিধি লঙ্ঘনের বিষয়ে বলেন, আচরণবিধি লঙ্ঘনের ঢালাও অভিযোগ আমলে নেয়া হবে না। এজন্য রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে লিখিতভাবে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ জানাতে হবে। নির্বাচনী প্রচার কাজে মন্ত্রীর পদমর্যাদাসম্পন্ন প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ দূত ও জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান এইচএম এরশাদ এবং সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপির চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার অংশগ্রহণ আচরণবিধির লঙ্ঘন কি নাÑ এমন প্রশ্নের জবাবে সিইসি কাজী রকিবউদ্দীন আহমদ বলেন, ‘আচরণবিধিতে বাংলায় লেখা আছে মন্ত্রী, মন্ত্রিবর্গ বা তাঁদের পদমর্যাদায় যাঁরা, তাঁরা এর আওতায় পড়বেন।’ রাজধানীর শেরেবাংলা নগরে এনইসি সম্মেলন কক্ষে বেলা ১১টায় এ বৈঠক শুরু হয়। প্রধান নির্বাচন কমিশনারের সভাপতিত্বে বেলা আড়াইটা পর্যন্ত এ বৈঠক চলে। বৈঠকে কমিশনের সদস্য, রিটার্নিং কর্মকর্তা ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর উর্ধতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন চার নির্বাচন কমিশনার, ইসি সচিব, মহাপুলিশ পরিদর্শক, র‌্যাবের অতিরিক্ত মহাপরিচালক, আনসার-ভিডিপির মহাপরিচালক, সেনাবাহিনীর প্রিন্সিপাল স্টাফ অফিসার, কোস্টগার্ডের মহাপরিচালক, গোয়েন্দা সংস্থা ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধিসহ নির্বাচন কর্মকর্তারা।
×