ঢাকার রাস্তায় ফুটপাথে ফুচকা, চটপটি, ঝালমুড়ি, পিঠা জাতীয় নানা স্বাদের মুখরোচক খাবারসহ রান্না করা বিভিন্ন খাবার বিক্রি হচ্ছে অবাধে। এসব খাবারের বেশিরভাগই সুস্বাদু কিন্তু স্বাস্থ্যসম্মত নয় তা অনেকের পক্ষেই বোঝা মুশকিল। অথচ বহু মানুষ এসব খাবার প্রতিনিয়ত খাচ্ছেন অনেকটা বাধ্য হয়ে। শুধু ঢাকার রাস্তায়ই নয়, দেশের বিভিন্ন স্থানে রাস্তার পাশে প্রচুর খাবারের দোকান দেখা যায়। কোথাও ছোট ছোট ভ্যান বা মাথায় ঝুড়ি নিয়ে বিক্রেতারা এ ধরনের খাবার বিক্রি করেন। রাস্তার এ খাবারের জনপ্রিয়তা অন্য দামী খাবারের চেয়ে কম নয়। অসংখ্য মানুষের জীবিকা নির্ভরশীল এ পেশার ওপর। অনেক সময় এসব খাবার খেয়ে ডায়রিয়া, টাইফয়েড ও জন্ডিসসহ নানা পানিবাহিত রোগ হয়ে থাকে।
সম্প্রতি রাজধানী ঢাকার রাস্তা-ফুটপাথে বিক্রি হওয়া খাবার নিয়ে জরিপ চালায় আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র বাংলাদেশ (আইসিডিডিআর,বি)। তাদের গবেষণায় দেখা যায়, এই মহানগরের বিভিন্ন পথের পাশে যেসব খাবার বিক্রি হয়, তার ৫৫ শতাংশেই জীবাণু থাকে। যারা এসব খাবার তৈরি ও বিক্রি করেন তাদের ৮৮ শতাংশেরই হাতে থাকে জীবাণু। এই পরিসংখ্যানই বলে দেয় প্রতিদিন বিপুলসংখ্যক মানুষ এসব খাবার খেয়ে স্বাস্থ্যঝুঁকিতে পড়ছেন। এতে কারও কারও মারাত্মক রোগ-ব্যাধির সম্ভাবনাও উড়িয়ে দেয়া যায় না। জানা গেছে, প্রায় ৮ হাজার খাবার বিক্রেতার কাছ থেকে নেয়া তথ্য এবং এসব তৈরি করা খাবারের নমুনা গবেষণাগারে পরীক্ষা করে গবেষকরা এসব খাবার দূষিত ও জীবাণুযুক্ত হওয়ার প্রক্রিয়া সম্পর্কে জেনেছেন। খাবারের উপাদান তৈরি, রান্না করা, সংরক্ষণ ও সরবরাহসহ পুরো প্রক্রিয়ার সব স্তরের খাবারেই এই দূষণ ঘটে থাকে। জীবাণুযুক্ত হওয়ার বড় কারণ হিসেবে ধরা হয়েছে অনিরাপদ পানির ব্যবহারকে। বিক্রেতাদের হাতে, তোয়ালে বা গামছায়, খাবারের প্লেট-গ্লাস এমনকি কাগজও জীবাণুযুক্ত থাকে। মাছিসহ অন্যান্য কীটপতঙ্গের কারণেও খাবারে দূষণ ঘটে। এমনকি ময়লা কাগুজে টাকাও তাদের নাড়াচাড়া করতে হয়। অনেক সময় রাস্তার ধূলাবালিও খাবারকে দূষণ করে।
অসচেতনতাই মূলত এই পথখাবারে জীবাণুর কারণ। এই জীবাণুযুক্ত খাবার বিক্রেতা এবং এসব খাবার যারা কেনে তাদের প্রত্যেকেরই সচেতনতার অভাব রয়েছে। উক্ত গবেষণায় বলা হয়েছে, শতভাগ নিরাপদ পানি ব্যবহার, হাতে গ্লাভস পরাসহ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার প্রাথমিক নিয়মগুলো মেনে চললে খাবার জীবাণুযুক্ত হওয়ার ঝুঁকি অনেকাংশে কমে আসবে। তাই ক্রেতা-বিক্রেতা উভয়ে যাতে নির্দিষ্ট কিছু নিয়ম মেনে চলেন কিংবা মানতে বাধ্য হন সে ধরনের প্রশিক্ষণ এবং ব্যবস্থা গ্রহণ জরুরী। এ ধরনের পরিস্থিতির উন্নতিসাধন যে সম্ভব নয় তা কিন্তু নয়। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এবং স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্টরা এ ব্যাপারে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারে। সরকারের পাশাপাশি বেসরকারী সংস্থা, বিভিন্ন মিডিয়া এ ব্যাপারে সচেতনতা সৃষ্টির কার্যক্রম গ্রহণ করতে পারেন। এ কথা সত্য যে, জীবনযাপনে মানুষের ব্যস্ততা বেড়েছে। তাই বহু মানুষকে রাস্তাঘাটে, ফুটপাতে খেতে হয়। তাই সর্বাগ্রে দরকার পরিচ্ছন্নতার ব্যাপারে সচেতনতা।