ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৯ মার্চ ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০

বায়ান্ন বাজার তিপ্পান্ন গলি

প্রকাশিত: ০৫:১৯, ১২ ডিসেম্বর ২০১৪

বায়ান্ন বাজার তিপ্পান্ন গলি

মোরসালিন মিজান ॥ গত কয়েকদিন ধরে বেশ তোড়জোড়। দৌড়ে রাস্তা পার অনেক হয়েছে। পথচারীদের অন্যায় এ সুযোগ আর দিতে চায় না ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ। সচেতন রাজধানীবাসীও নিজের নিরাপত্তার স্বার্থে এই চান। ফুটওভারব্রিজ ও আন্ডারপাস ব্যবহারে তাদের আপত্তি নেই কোন। কিন্তু সহসাই প্রশ্ন ওঠে, ফুটওভারব্রিজ ও আন্ডারপাসগুলো কী ব্যবহারের উপযোগী? কয়টা ব্যবহার করা যায়? বাস্তব অবস্থা বলছে, অধিকাংশের অবস্থা নাজুক। হয়ত তাই সংস্কারের দিকে নজর দিচ্ছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। বুধবার একটি ভাল সূচনাও হয়েছে। এদিন রাজধানীর গাবতলীতে পরিত্যক্ত প্রায় আন্ডারপাসটি নতুন করে চালু হয়েছে। শুধু চালু নয়, ঢাকা (উত্তর) সিটি কর্পোরেশনের উদ্যোগে নতুন চেহারা পেয়েছে এর ভেতরের অংশ। সৌন্দর্য বর্ধন করা হয়েছে। এখন এটি ঝকঝকে, তকতকে। দুই পাশের দেয়ালে শিল্পীত, সুন্দর। যেখানে চোখ যায়, কারুকাজ। ফলে আন্ডারপাস ব্যবহারকারীর সংখ্যা কয়েকগুণ বেড়েছে। জানা যায়, ৩৪ লাখ টাকা ব্যয়ে এই সংস্কার ও সৌন্দর্যবর্ধনের কাজ করা হয়েছে। তবে প্রশ্ন থেকেই যায়, কতদিন থাকবে এই সৌন্দর্য? নষ্ট হওয়ার জন্য এই সৌন্দর্য? নাকি গোটা রাজধানীতে ছড়িয়ে দেয়ার জন্য? এবার শীতের কথা। পৌষ মাসের এখনও বাকি। তার আগেই ষোলআনা শীত। কনকনে শীতে হাঁড় ঠক ঠক করে কাঁপছে। বায়ান্ন বাজার তেপ্পান্ন গলির শহর ঢাকা যেন নিজের নাক-মুখ ঢেকে নিয়েছে! শীতে জবুথবু শহরের চেহারা পুরোটা দেখা যায় না। গত কয়েকদিন ধরে এই আছে এই নেই সূয্যিমামা। সকাল থেকেই কুয়াশায় ঢাকা শহর। বৃহস্পতিবার সকালে মানিক মিয়া এভিনিউ থেকে এমনকি জাতীয় সংসদ ভবন দেখা যাচ্ছিল না। রাস্তা ও খোলা মাঠের মাঝখানটায় চাদর বিছিয়েছিল কুয়াশা। অনেকক্ষণ ধরে তাকিয়ে থাকলে সামান্য অনুমান করা যাচ্ছিল ভবনটির অস্তিত্ব! গাড়ি করে যাওয়ার সময় অনেকেই সেদিকে কৌতূহল নিয়ে দেখছিলেন। কুয়াশার পাশাপাশি যোগ হয়েছিল ঠা-া বাতাস। এত ঠা-া যে, জলের মতো গা ধুয়ে দিচ্ছিল। এ অবস্থায় ভোর বেলায় ঘুম থেকে ওঠে কর্মক্ষেত্রে যাওয়ার জন্য প্রস্তুত হওয়া দুরূহ কাজ। কিন্তু করতে তো হবেই। হয়ত তাই বাধ্য হয়ে অফিস, ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে যাচ্ছিলেন নগরবাসী। মতিঝিলে একটি বেসরকারী ব্যাংকে চাকরি করেন আবদুর রউফ। ফার্মগেটে ওভারব্রিজ দিয়ে রাস্তা পার হচ্ছিলেন তিনি। দেখতে যথেষ্ট স্মার্ট। স্যুটেট বুটেট। কিন্তু একি! ব্লেজারের ওপর এই ভদ্রলোক আবার চাদর জড়িয়েছেন! যথেষ্ট অভিনব তাঁকে দেখাচ্ছিল। কথা প্রসঙ্গে বললেন, অভিনব তো বটেই। তবে শীত থেকেও তো বাঁচতে হবে। সর্বোচ্চ চেষ্টা বলতে পারেন। জানালেন, অফিসে ঢোকার আগে চাদরটি ব্যাগে পুরে ফেলবেন। স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীদের অবস্থা আরও খারাপ। ভিকারুন নিসা নূন স্কুলের সামনে সকালে কিছু সময় দাঁড়ালে বাচ্চা বাচ্চা মেয়েগুলোর জন্য রীতিমতো মায়া হয়। এখানে সকাল সাড়ে ৭টায় শুরু হয়ে যায় প্রথম শিফটের ক্লাস। সঙ্গত কারণেই ৭টার পর থেকে আসতে শুরু করে শিক্ষার্থীরা। বুধবার রিজওয়ানা নামের এক শিক্ষার্থী বললো, শীতে ইউনিফর্মের ওপর আমরা হালকা সুয়েটার পরি। তাতে শীত তাড়ানো যাচ্ছে না। কথা বলতে সুয়েটারের হাতল টেনে আঙুল অবদি ঢাকার চেষ্টা করছিল সে। সব দেখে পরিষ্কার বোঝা যাচ্ছিল শীত উপভোগের পাশাপাশি দুর্ভোগও শুরু হয়ে গেছে।
×