ছবিঃ সংগৃহীত
নোয়াখালীর বিচ্ছিন্ন দ্বীপ উপজেলা হাতিয়ায় ভরা মৌসুমেও ইলিশের আকাল চলছে। এই সময়ে জেলেরা সাধারণত ইলিশ শিকারে ব্যস্ত সময় পার করেন। প্রতি বছরের মতো এবারও দ্বীপ উপজেলা হাতিয়ার জেলেরা নদীতে মাছ ধরায় ব্যস্ত সময় পার করছেন। উপজেলার নিঝুমদ্বীপ, বন্দরটিলা, সুইজের ঘাট, মোক্তারিয়া, দানারদোল, সূর্যমুখী, কাজিরবাজার, বাংলাবাজার ও চেয়ারম্যানঘাটসহ দ্বীপের বড় ২০টি ঘাট থেকে ছোট-বড় প্রায় ১০ হাজার জেলের নৌকা নদীতে বিচরণ করছে।
কিন্তু হতাশার বিষয় হলো—জেলেদের জালে মিলছে না কাঙ্ক্ষিত ইলিশ। প্রতিদিনই অনেককে প্রায় খালি হাতে ঘাটে ফিরতে হচ্ছে। মৌসুমের বেশির ভাগ সময় পেরিয়ে গেলেও এখনো তারা লাভের মুখ দেখেননি। অন্যদিকে নদীতে যাতায়াতে প্রতিদিনই যে ব্যয় হচ্ছে, তা তাদের আর্থিক দেনা বাড়িয়ে দিচ্ছে।
অনেকে সংসারের দৈনন্দিন ব্যয় চালাতে হিমশিম খাচ্ছেন। ঘাটগুলোতে নেই আগের মতো হাঁকডাক, বরং নেমে এসেছে নিস্তব্ধতা ও হতাশা।
সূর্যমুখী মাছঘাটের এক শ্রমিক নেতা জানান, তার অধীনে এই ঘাটে শ্রমিকরা কাজ করেন। খালে কোনো নৌকা বা ট্রলার এলে তারা টুরকিতে করে সেই মাছ ডাকের বাক্সে নিয়ে আসেন। প্রতিদিন যা আয় হয়, তা ভাগ করে নেন শ্রমিকরা। এই বছর শুরু থেকেই নদীতে মাছ নেই। প্রতিদিন কাজ শেষে ভাগে ৫০–৫৫ টাকা করে পাচ্ছেন শ্রমিকরা, যা দিয়ে চা-নাস্তার খরচও হয় না। সংসার চালাতে হচ্ছে ধার-দেনা করে।
সূর্যমুখী ঘাটের মাছ ব্যবসায়ী সমিতির নেতৃবৃন্দ জানান, তারা প্রায় ৩২ বছর ধরে মাছ ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত, কিন্তু এই বছরের মতো এত খারাপ অবস্থা আর কখনো দেখেননি। হাতিয়ার ১১টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভায় প্রায় ৭ লাখ ৫০ হাজার মানুষের বসবাস। এখানকার প্রায় এক লাখ মানুষ জেলে পেশার সঙ্গে জড়িত। সরকারিভাবে নিবন্ধিত জেলের সংখ্যা ২৫ হাজার ৯৯৫ জন।
উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ভরা মৌসুমেও ইলিশ না পাওয়ার কারণ হিসেবে তারা জাটকা নিধন, মা-ইলিশ ধরা, ডুবোচর, জলবায়ু পরিবর্তনের পাশাপাশি উপকূলীয় এলাকায় কলকারখানার বর্জ্য নদীতে পড়ার বিষয়গুলোকে দায়ী করেছেন। এতে মাছের বিচরণ অনিরাপদ হয়ে উঠছে, যার ফলে কাঙ্ক্ষিত ইলিশ পাওয়া যাচ্ছে না। তবে তারা আশা প্রকাশ করেছেন যে, মৌসুমের পরবর্তী সময়ে আশানুরূপ ইলিশ পাওয়া যেতে পারে।
মারিয়া
