
দৈনিক জনকণ্ঠ
মানিকগঞ্জের সাটুরিয়া উপজেলা সদর ইউনিয়নের সাটুরিয়া বাজারের সিনেমা হল সড়ক থেকে কুষ্টিয়া এলাকা পর্যন্ত প্রায় দুই কিলোমিটার দীর্ঘ খালের ওপর একের পর এক বাঁধ নির্মাণ করে দখলের মহোৎসব চলছে।
শতবর্ষী এ খালটির প্রাকৃতিক প্রবাহ বন্ধ করে স্থাপনা গড়ে তুলেছেন প্রভাবশালী স্থানীয়রা। প্রশাসনের নাকের ডগায় ঘটলেও এখনও কোনো কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। ফলে পানিপ্রবাহ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় হাজারো কৃষক পড়েছেন পানি নিষ্কাশন সমস্যায়, আর খালের জমা পানি পচে দুর্গন্ধ ছড়িয়ে পরিবেশ দূষণ ঘটাচ্ছে।
স্থানীয়রা জানান, খালটি সাটুরিয়া বাজার থেকে শুরু হয়ে উত্তর কাওন্নারা হয়ে পূর্ব কুষ্টিয়া গ্রামের আরেকটি খালে গিয়ে মিশেছে। একসময় এই খালই ছিল পণ্য পরিবহণ ও কৃষির প্রধান ভরসা। বর্ষায় পালতোলা নৌকায় মানুষ যাতায়াত ও পণ্য পরিবহণ করত। বর্তমানে খাল দখল ও ভরাট হওয়ায় হারিয়েছে এর প্রাকৃতিক গতি ও উপকারিতা।
জোয়ার আমতা গ্রামের মোহাম্মদ জুলহাস বলেন, “আগে বর্ষায় খালপথে হাটে যেতাম, এখন সেই খাল নেই। দখল করে মেরে ফেলা হয়েছে।”
পূর্ব কুষ্টিয়া গ্রামের সোহেল রানা বলেন, “এই খাল একসময় নৌচলাচলের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ ছিল। কৃষিপণ্যও এই পথেই আসত। এখন তা বিলীন।”
জানা গেছে, সিনেমা হল সড়কের পাশে অবস্থিত খালের দুই পাশে একসময় বাঁশের সাঁকো ছিল। পরে কিছু বাসিন্দা প্রশাসনের চোখ ফাঁকি দিয়ে খালের ওপর মাটি ফেলে ভরাট করেন। বর্তমানে পুরো খালজুড়ে প্রায় ২০-৩০টি বাঁধ দেওয়া হয়েছে। কোথাও কোথাও ময়লার ভাগাড়ে পরিণত হয়েছে খালটি, ফলে পানির দুর্গন্ধে পরিবেশও হুমকির মুখে।
কাওন্নারা গ্রামের আক্কাছ আলী অভিযোগ করে বলেন, “প্রশাসনের চোখের সামনেই দখল হচ্ছে খালটি। মৌখিক অভিযোগ করেও ফল পাওয়া যায়নি। ভূমি অফিসের কিছু অসাধু কর্মকর্তা এতে সুবিধাভোগী বলেও অভিযোগ আছে।”
স্থানীয় কৃষকরা জানান, এই খালের মাধ্যমে বালিয়াটি, হাজীপুর, কুষ্টিয়া, কাওন্নারা ও সাটুরিয়া এলাকার কৃষকরা পানি নিষ্কাশন করতেন। দীর্ঘ দুই দশক ধরে খালটি অকেজো থাকায় কৃষিতে ক্ষতির মুখে পড়েছেন তারা। তারা খাল উদ্ধার করে খননের দাবি জানান।
কৃষক দেলোয়ার হোসেন অভিযোগ করেন, “সামাদ মিয়া খাল দখল করে বাড়ি করেছেন, মোকাদছ আলী, শাহ আলম ও তানি আলমরা বাধ দিয়ে পানি আটকে রেখেছেন। এতে জমা পানিতে মশার উপদ্রব ও রোগবালাই বেড়েছে।”
তবে অভিযুক্ত সামাদ মিয়া দাবি করেন, “খালের পানি একসময় জমি ভাঙত, তাই জায়গা ভরাট করে বাড়ি করেছি। এছাড়া, বাড়ি যাতায়াতের জন্য নিজ খরচে অস্থায়ী বাঁধ দিয়েছি।”
সাটুরিয়া ইউনিয়ন পরিষদের ইউপি সদস্য শহর আলী বলেন, বাঁধ দেওয়ার বিষয়ে সাটুরিয়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও সহকারী কমিশনারকে (ভূমি) একাধিকবার চিঠি ও মৌখিকভাবে বলেছি। এর পরও কোনো কাজ হয়নি। কোন ব্যবস্থাগ্রহণ না করায় দখলদাররা দখল করেই চলেছে।
এ বিষয়ে সাটুরিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইকবাল হোসেন বলেন, খালের ওপর অবৈধ বাঁধ নির্মাণ করে থাকলে সেটা অপরাধ। এ বিষয়ে আমার দপ্তরে কেউ অভিযোগ করেনি। অভিযোগ পেলে বিষয়টি তদন্ত করে সত্যতা পেলে তা উচ্ছেদ করা হবে বলে জানান তিনি।
হ্যাপী