
ছবি: জনকণ্ঠ
বর্ষা শুধু ধানের মৌসুম নয়, এটি বৃক্ষরোপণের সুবর্ণ সময়। এই মৌসুমেই আমরা গড়ে তুলতে পারি সবুজ বাংলাদেশ। প্রাকৃতিক ভারসাম্য রক্ষা, পরিবেশ সুরক্ষা, খাদ্য নিরাপত্তা ও অর্থনৈতিক উন্নয়নে গাছের গুরুত্ব অপরিসীম। বিশেষ করে বর্ষাকাল গাছ লাগানোর জন্য সবচেয়ে উপযুক্ত সময়। বৃষ্টির জলাভাব থাকে না, মাটিতে আর্দ্রতা থাকে, ফলে গাছ দ্রুত ও সুস্থভাবে বেড়ে ওঠে।
এই সময়ে বিভিন্ন ধরনের ফলজ, বনজ ও ঔষধি গাছ লাগিয়ে আমরা যেমন পরিবেশের উপকার করতে পারি, তেমনি ভবিষ্যতের জন্য পেতে পারি নানাবিধ উপকার।
ফলজ গাছ যেগুলো বর্ষায় লাগানো যায়:
১. আম – বর্ষার শুরুতেই আমের চারা রোপণ উত্তম। পরিচর্যায় কয়েক বছরের মধ্যেই ফল পাওয়া যায়।
২. কাঁঠাল – মাটির গভীরে শিকড় গাঁথে, দীর্ঘমেয়াদি ফলজ বৃক্ষ।
৩. লিচু – আর্দ্রতা ও বৃষ্টিপাত লিচুর চারা বাড়ার জন্য অনুকূল পরিবেশ তৈরি করে।
৪. নাসপতি / পেয়ারা – বর্ষায় রোপণ করলে দ্রুত বড় হয়।
৫. লেবু / কমলা – বর্ষার পানিতে এসব সাইট্রাস জাতীয় গাছের চারা ভালোভাবে বেড়ে ওঠে।
৬. আনারস – বর্ষাকালে মাটিতে আর্দ্রতা বেশি থাকায় চারা সহজে গড়ে ওঠে।
৭. জাম, জামরুল, তাল, খেজুর – গ্রামীণ পরিবেশে এসব গাছ খুব ভালোভাবে বেড়ে ওঠে।
বনজ গাছ যেগুলো বর্ষায় রোপণ উপযোগী:
১. আকাশমণি – দ্রুত বর্ধনশীল কাঠের গাছ।
২. শিরিষ – ছায়াদানকারী বনজ বৃক্ষ, বাতাস বিশুদ্ধ করে।
৩. সেগুন – মূল্যবান কাঠ উৎপাদনে সক্ষম।
৪. গামারি – আসবাবপত্র তৈরিতে উপযোগী।
৫. বাঁশ – বাঁশঝাড় গঠন করে পরিবেশ রক্ষা করে ও অর্থনৈতিকভাবে উপকারী।
৬. মেহগনি – উচ্চমূল্যের কাঠ উৎপন্ন হয়, বাণিজ্যিক চাষে জনপ্রিয়।
ঔষধি গাছ যেগুলো লাগানো যায় বর্ষায়:
১. তুলসী – সর্দি-কাশি ও রোগ প্রতিরোধে ব্যবহৃত হয়। সহজেই বেড়ে ওঠে।
২. নিম – জীবাণুনাশক, পোকা দমন ও ঔষধি গুণে ভরপুর।
৩. আলোকছায়া, বহেরা, হরীতকি, আমলকি – ত্রিফলার উপাদান, হজম ও রোগপ্রতিরোধে কার্যকর।
৪. চন্দন / গন্ধরাজ – সুগন্ধি ও হৃৎপিণ্ডজনিত রোগে উপকারী।
৫. আদা, হলুদ – মাটির নিচে জন্মানো এই উদ্ভিদগুলোও বর্ষায় লাগানো যায়।
৬. পুদিনা, অশ্বগন্ধা, বসাক – হোমিও-আয়ুর্বেদিক চিকিৎসায় বহুল ব্যবহৃত।
এছাড়াও সৌন্দর্য বর্ধন ও সুগন্ধির জন্য কিছু ফুলগাছ লাগানো যায়। যেমন : গোলাপ, জবা, নয়নতারা, রঙ্গন, কাঠগোলাপ, রেইন লিলি, কেয়া, বেলি, হাসনাহেনা, কামিনী, টগর, মাধবীলতা, শিউলি, কুঞ্জলতা, অপরাজিতা, বাগানবিলাস, কৃষ্ণচূড়া, সোনালু ইত্যাদি।
গাছ লাগানোর সময় কিছু করণীয়:
- ভালো ও স্বাস্থ্যবান চারা নির্বাচন করা।
- মাটির গর্তে প্রাকৃতিক সার (গোবর, ভার্মি কম্পোস্ট) ব্যবহার করা।
- গাছ লাগানোর পর হালকা বাঁশ বা খুঁটি দিয়ে বেঁধে রাখা।
- আগাছা পরিষ্কার রাখা ও প্রয়োজনমতো পানি দেওয়া।
- একাধিক প্রজাতির গাছ একসঙ্গে লাগালে পরিবেশ ভারসাম্যপূর্ণ হয়।
বর্ষাকাল আমাদের হাতে এনে দেয় এক অনন্য সুযোগ। প্রকৃতিকে আপন করে নেওয়ার। এই সময় লাগানো গাছ আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য সম্পদ হয়ে উঠবে। একেকটি গাছ মানে একটি অক্সিজেন কারখানা। আসুন, বর্ষায় আমরা সবাই মিলে অন্তত একটি করে ফলজ, বনজ ও ঔষধি গাছ রোপণ করি। তবেই গড়ে উঠবে সবুজ, স্বাস্থ্যবান ও টেকসই বাংলাদেশ।
শহীদ