
পিরোজপুরের নেছারাবাদ উপজেলার আটঘর-কুড়িয়ানার ঐতিহ্যবাহী ভাসমান নৌকার হাট বর্ষার পানিতে নতুন প্রাণ পেয়েছে। প্রতি বর্ষায় জমে ওঠা শতবর্ষী এই হাট খালজুড়ে ভেসে থাকা নৌকার সারি আর ডাঙায় বসা পসরা মিলিয়ে তৈরি করে এক অপূর্ব দৃশ্যপট, যা আকৃষ্ট করছে দেশ-বিদেশের পর্যটকদের।
সপ্তাহে দুই দিন—সোমবার ও শুক্রবার—প্রায় আধা কিলোমিটারজুড়ে বসে এই ব্যতিক্রমধর্মী হাট। সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত চলে বেচাকেনা। বিশেষ করে ঝালকাঠির ভীমরুলি, বরিশালের বানারীপাড়া ও আশপাশের এলাকা থেকে উৎপাদিত পেয়ারা ও আমড়া পরিবহনের বাহন হিসেবে ব্যবহৃত হয় ছোট ছোট ডিঙি নৌকা। ফলে চাষি, কারিগর ও ব্যবসায়ী—তিন পক্ষই উপকৃত হন।
স্থানীয়দের ভাষ্যমতে, বর্ষায় কৃষিকাজ, মাছ ধরা, গবাদি পশুর খাদ্য সংগ্রহ এবং যাতায়াতে নৌকার চাহিদা ব্যাপকভাবে বেড়ে যায়। এ হাটের প্রধান ক্রেতা সাধারণ মানুষ। এক ক্রেতা বলেন, "গ্রামে বর্ষায় নৌকা ছাড়া চলা যায় না। এ হাট থেকেই সস্তায় ভালো নৌকা পাওয়া যায়।"
এক ব্যবসায়ী বলেন, "ভোরে কারিগরদের কাছ থেকে নৌকা কিনে হাটে বিক্রি করি। দিনে ৫০–৬০টি পর্যন্ত বিক্রি হয়, প্রতিটি থেকে ৫০০–৮০০ টাকা লাভ হয়।"
নৌকা তৈরির কারিগরদের বক্তব্য, "আগে সুন্দরী কাঠে নৌকা তৈরি হতো, এখন কড়ই, চম্পা বা মেহগনি কাঠ ব্যবহার করতে হচ্ছে। খরচ বাড়লেও ঐতিহ্য ধরে রাখতেই এই কাজ করছি। তবে সংসার চালাতে কষ্ট হয়।"
নেছারাবাদ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. জাহিদুল ইসলাম বলেন, “এই ঐতিহ্যবাহী হাটে দেশ-বিদেশের অনেক পর্যটক আসেন। তাদের নিরাপত্তা ও সুবিধার কথা বিবেচনা করে টিউবওয়েল ও ওয়াশরুম স্থাপনসহ প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে।”
দক্ষিণাঞ্চলের সবচেয়ে বড় নৌকার হাট এখন শুধুই বাণিজ্যের জায়গা নয়, বর্ষায় মানুষের জীবন, সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের মিলনস্থলে পরিণত হয়েছে।
নুসরাত