
দীর্ঘ প্রায় সাড়ে ১২ বছর পর শেরপুরে ডিবি হেফাজতে জেলা কৃষকদলের সহ-সভাপতি আবু বক্কর সিদ্দিকী ওরফে বাচ্চু মেকারকে হত্যার অভিযোগে তৎকালীন হুইপ ও মহিলা এমপি এবং পুলিশ সুপার, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার, ডিবির পরিদর্শকসহ ৩৪ জনের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা দায়ের করা হয়েছে।
মঙ্গলবার (১৭ জুন) দুপুরে ওই মামলার শুনানি শেষে শেরপুর সদর সি.আর. আমলী আদালতের বিচারক (সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট) সুলতান মাহমুদ মিলন মামলাটি তদন্তের জন্য জামালপুর পিবিআইয়ের পুলিশ সুপারকে নির্দেশ দেন। এর আগে, গত ১ জুন নিহতের ছেলে মোকারুল ইসলাম মোহন আদালতে মামলাটি দায়ের করেন।
বিষয়টি নিশ্চিত করে বাদীপক্ষের আইনজীবী আব্দুল আজিজ সজীব রানা বলেন, “নালিশি মামলাটি দায়েরের সময় আদালত একই ঘটনায় পূর্বে থানায় কোনো মামলা হয়েছে কিনা তা জানাতে ৩ কার্যদিবসের মধ্যে সদর থানার অফিসার ইনচার্জকে নির্দেশ দেন। সে অনুযায়ী থানার প্রতিবেদন আসার পর বিচারক মামলার বিষয়ে তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেন পিবিআই জামালপুর পুলিশ সুপারকে।”
মামলার আসামিদের মধ্যে রয়েছেন—শেরপুরের সাবেক পুলিশ সুপার ও বর্তমানে ডিআইজি মো. আনিছুর রহমান, সাবেক অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. মহিবুল ইসলাম খান, জেলা ডিবি পুলিশের সাবেক ওসি মো. নজরুল ইসলাম, সাবেক সেকেন্ড অফিসার মো. জহুরুল ইসলাম, সাবেক এসআই মো. রিয়াদ হোসেন, শহর ফাঁড়ির সাবেক এসআই মো. নজরুল ইসলাম, জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও শেরপুর-১ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য, সাবেক হুইপ মো. আতিউর রহমান আতিক, সংরক্ষিত আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ফাতেমাতুজ্জহুরা শ্যামলী, তার ছোট ভাই আওয়ামী লীগ নেতা মো. আরিফ রেজা ও মো. শুভ রেজা, আনোয়ারুল হাসান উৎপল, চন্দন সাহা, আমিরুল ইসলাম, বেলাল হোসেন, মো. আব্দুল হামিদ, হাজী মোশারফ, সাবেক মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান শামীম আরা বেগম, যুব মহিলা লীগ নেত্রী মাহবুবা রহমান শিমু, যুবলীগ নেতা তরিকুল ইসলাম রাজু, ব্যবসায়ী মোহাম্মদ আলী, মো. শহিদুর রহমান, জাহাঙ্গীর আলম, মো. আব্দুল আলিম, আশীষ কুমার সুর, শরিফুর রহমান শরিফ, মাসুদ রানা, মো. সাইদুল ইসলাম সাইদ, মনিরুজ্জামান মিলন তালুকদার, চানু মিয়া, সেতু দত্ত ও গোপাল দত্তসহ ৩৪ জনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। এ ছাড়া আরও কিছু অজ্ঞাতনামাও মামলায় অভিযুক্ত করা হয়েছে।
মামলার অভিযোগে বলা হয়, তৎকালীন হুইপ আতিউর রহমান আতিক ও সংরক্ষিত এমপি ফাতেমাতুজ্জহুরা শ্যামলীর পরিকল্পনা অনুযায়ী তৎকালীন পুলিশ সুপার আনিছুর রহমানের নির্দেশে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মহিবুল ইসলামের সহযোগিতায় ডিবি পুলিশ ২০১২ সালের ৩ ডিসেম্বর সোমবার রাত সাড়ে ১১টার দিকে শহরের সজবরখিলা মহল্লার বাড়ি থেকে বিএনপি নেতা আবু বক্কর সিদ্দিকী ওরফে বাচ্চু মেকারকে ডিবি অফিসে নিয়ে যায়। পরদিন ৪ ডিসেম্বর রাত আড়াইটার দিকে তার নিথর দেহটি বাড়িতে ফেলে রেখে যায় পুলিশ।
পরিবারের দাবি, বাচ্চু মেকার ডিশ ক্যাবলের ব্যবসার পাশাপাশি বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। তার নামে কোনো মামলা ছিল না। আওয়ামী লীগের নেতারা ও পুলিশের কিছু সদস্য পূর্বপরিকল্পিতভাবে তাকে ডিবি হেফাজতে নিয়ে পিটিয়ে হত্যা করেছে।
নিহতের ছেলে মোকারুল ইসলাম মোহন সাংবাদিকদের বলেন, “বাবাকে হত্যার পর পুলিশ পাহারায় জানাজা ও দাফন সম্পন্ন করা হয়। আমরা তখন মামলা করতে পারিনি। মামলা না করার জন্য পুলিশ আমাদের ভয়ভীতি দেখিয়েছে এবং আমাদের তিন ভাইকে বিভিন্ন মামলায় হয়রানি করেছে। আমি আমার বাবার হত্যার বিচার চাই।”
সজিব