
ছবি: দৈনিক জনকণ্ঠ।
ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার আকচা ইউনিয়নে দশ গ্রামের ২৫ হাজার মানুষের স্বপ্ন, জীবন ও জীবিকা আটকে আছে এলাকার টাঙ্গন নদীর ওপর শুধু একটি ব্রিজের অভাবে। বর্তমানে প্রতিদিন নিজেদের উদ্যোগে নির্মিত বাঁশের তৈরি ঝুঁকিপূর্ণ সাঁকো পেরিয়ে শিশুরা যাচ্ছে স্কুলে, রোগী যাচ্ছে হাসপাতালে, বাজারে যাচ্ছে কৃষিপণ্য। বছরের পর বছর নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিরা প্রতিশ্রুতির পর প্রতিশ্রুতি দিয়ে এলেও সেখানে হয়নি কোনো ব্রিজ।
সরেজমিনে আকচা ইউনিয়নের পালপাড়া ঘাটে গিয়ে দেখা যায়, বাঁশের তৈরি ঝুঁকিপূর্ণ সাঁকোর দুই ধারে মানুষের ভিড় লেগে আছে। কাঁধে ব্যাগ, হাতে বই, সন্তর্পণে পা ফেলে সাঁকো পার হচ্ছে কোমলমতি শিক্ষার্থীরা। কেউ সাইকেলে, কেউ মোটরসাইকেলে, সবারই চোখে-মুখে উৎকণ্ঠা। ভারী যানবাহনের কোনো সুযোগ নেই। বর্ষায় সেই সাঁকো ডুবে গেলে ভরসা হয় তখন শুধু নৌকা।
স্থানীয় কৃষক আজিজুল হক বলেন, ‘তাদের এলাকার জমিতে প্রচুর সবজি আবাদ হয় কিন্তু একটি ব্রিজের অভাবে সেইসব সবজি শহরে ঠিকমতো নিতে পারেন না। মাঝেমধ্যে নৌকা ভাড়া করেও পাঠানো হলেও লাভ তো দূরের কথা, ক্ষতিই হয় বেশি।’
অপর কৃষক জয়নাল আবেদিন বলেন, ‘নেতারা আসেন, ছবি তোলেন, বলেন এবার সেতু হবেই। কত ভোট চলে গেলো কাউকেই দেখি না প্রতিশ্রুতি রক্ষা করতে। কিন্তু এলাকাবাসীর যন্ত্রণাটা থেকেই যায়।’ শুধু কৃষক নয়, বিপাকে পড়ে স্কুলগামী শিক্ষার্থী, অসুস্থ রোগী ও গর্ভবতী নারীরা। সামান্য বৃষ্টিতেই সাঁকো ভয়ানক পিচ্ছিল হয়ে ওঠে।
৭১ বছরের বৃদ্ধা সুপর্না রায় জানালেন, ‘স্বাধীনতার পর থেকে এই বাঁশের সাঁকোই ভরসা। কত মানুষ সাঁকো থেকে পড়ে আহত হয়েছে, তার হিসাব নেই।’ এই একটি সাঁকোই একমাত্র যোগাযোগমাধ্যম আকচা ইউনিয়নের পালপাড়া, ঝাকুয়াপাড়া, বাগপুর, সিংপাড়া, সর্দারপাড়া, চরঙ্গী, উত্তর ও দক্ষিণ বঠিনা গ্রামের প্রায় ২৫ হাজার মানুষের।
স্বাধীনতার পর অসংখ্য বদলেছেন সংসদ সদস্য ও জনপ্রতিনিধি। প্রতিবারই হয়েছে পরিদর্শন, মাপযোপ, ছবি তোলা। কিন্তু ব্রিজের কাজ আর শুরু হয়নি।
আকচা ইউনিয়ন পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান শিমলা রাণী বলেন, ‘বাঁশের সাঁকো দিয়ে চলাচল করতে গিয়ে মানুষ যে দুর্ভোগে পড়ে, তা বলে বোঝানো যাবে না। ইউনিয়ন পরিষদ থেকে বারবার সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে দ্রুত এই সমস্যার সমাধানের জন্য। কিন্তু কোনো সারা মিলছে না।’
এ বিষয়ে জেলা এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ মামুন বিশ্বাস বলেন, ‘নদীর ঘাটটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ রির্পোট তৈরি করে ব্রিজ নির্মাণের জন্য একনেকে প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। অনুমোদন পেলেই কাজ শুরু হবে।’
মিরাজ খান