
ছবি: সংগৃহীত
খাগড়াছড়ি আধুনিক সদর হাসপাতালে চিকিৎসাসেবা ও পরিচ্ছন্নতা ব্যবস্থার মানোন্নয়নে নিয়মিত আয়োজন করা হচ্ছে ‘সাপ্তাহিক সমন্বয় সভা’। প্রতি মঙ্গলবার অনুষ্ঠিত এ সভায় হাসপাতালের সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করেন সংশ্লিষ্ট চিকিৎসক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা।
মঙ্গলবার (১৭ জুন) অনুষ্ঠিত সভায় সভাপতিত্ব করেন জেলার সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ ছাবের। উপস্থিত ছিলেন আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) ডা. রিপল বাপ্পী চাকমা, ডা. জয়া চাকমা, ডা. সুবল জ্যোতি চাকমা, ডা. ওমর ফারুকসহ হাসপাতালের চিকিৎসক ও কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।
সভায় পরিষেবা পরিবেশ, জনবল সংকট, রোগীর চাপ, নার্স ও ওয়ার্ডবয়দের আচরণ, অবকাঠামোগত দুর্বলতাসহ নানা সমস্যা নিয়ে আলোচনা হয়। বিশেষ করে নার্স ও ওয়ার্ডবয়দের আচরণ নিয়ে ওঠা অভিযোগের বিষয়ে সতর্কতা ও পেশাদারিত্ব বজায় রাখার পরামর্শ দেওয়া হয়।
বর্তমানে ১০০ শয্যার এ হাসপাতালে প্রতিদিন গড়ে ১৮৫-২০০ জন রোগী চিকিৎসাসেবা নিচ্ছেন। শয্যার তুলনায় রোগীর সংখ্যা অনেক বেশি হওয়ায় প্রতিনিয়ত তৈরি হচ্ছে রুম সংকট, সেবায় বিলম্ব ও কর্মীদের বাড়তি চাপ।
এই সংকট নিরসনে ২০১৯ সালে শুরু হয় ২৫০ শয্যার একটি ১০ তলা ভবনের নির্মাণকাজ। ২০২১ সালে শেষ হওয়ার কথা থাকলেও এখনো তা সম্পূর্ণ হয়নি। সংশ্লিষ্টদের মতে, নির্মাণ বিলম্ব চিকিৎসাসেবার গুণগত উন্নয়নে বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে।
এছাড়া হাসপাতালের সামনের প্রধান সড়কটি দীর্ঘদিন ধরে খারাপ অবস্থায় রয়েছে, যার কারণে জরুরি রোগী পরিবহনেও ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে।
করোনাকালে আলাদা আইসোলেশন কক্ষের প্রয়োজন থাকলেও জায়গার অভাবে একটি ছোট কক্ষে করোনা রোগীদের রাখার পরিকল্পনা নিয়েছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। এ নিয়ে চিকিৎসকদের মধ্যে উদ্বেগ বিরাজ করছে। একইসঙ্গে জেলার বিভিন্ন স্থানে ম্যালেরিয়া আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বাড়ছে, যার মধ্যে পাঁচ দিন আগে একজনের মৃত্যু হয়েছে।
দৈনিক জনকণ্ঠকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে আরএমও ডা. রিপল বাপ্পী চাকমা বলেন, “প্রতিদিন রোগীর চাপ বাড়ছে। সীমিত জনবল ও যন্ত্রপাতি নিয়ে সেবা দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। নিয়মিত সমন্বয় সভার মাধ্যমে আমরা সমস্যাগুলো চিহ্নিত করে সমাধানের চেষ্টা করছি। তবে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হলো নতুন ভবনের নির্মাণকাজ। এটি দ্রুত শেষ না হলে সংকট আরও বাড়বে।”
হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, খাগড়াছড়িতে ১০ বেডের একটি কিডনি ডায়ালাইসিস সেন্টারের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। তবে এটি বসানোর জন্য নির্ধারিত ভবনটি এখনো নির্মাণাধীন। ভবনটি প্রস্তুত না হলে সেন্টারটি চালু করা সম্ভব নয়।
হাসপাতালের সিনিয়র কনসালটেন্ট ডা. সুবল জ্যোতি চাকমা জানান, “ডায়ালাইসিস সেন্টারের অনুমোদন খাগড়াছড়ির জন্য বড় একটি অর্জন। তবে ভবন প্রস্তুত না থাকায় সেটি স্থাপন করা যাচ্ছে না। ইতোমধ্যে অনেক যন্ত্রপাতি এসে গেছে। যদি ১-২ বছরের মধ্যে ভবন চালু না হয়, তাহলে অনুমোদন বাতিল হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।”
সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, নতুন ভবনের নির্মাণ দ্রুত শেষ হলে খাগড়াছড়ির চিকিৎসাসেবায় গুণগত পরিবর্তন আসবে। এতে করে স্থানীয়রা আর বড় শহরে না গিয়ে নিজ জেলা থেকেই উন্নত সেবা গ্রহণ করতে পারবেন।
আসিফ