ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ১৪ জুন ২০২৫, ৩০ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

কিশোরগঞ্জের তিন অগ্নিপুরুষ: বিপ্লবের আগুনে গড়া তিন যোদ্ধার গল্প

আবু সালেহ মোঃ হামিদুল্লাহ ,কন্ট্রিবিউটিং রিপোর্টার, কটিয়াদী, কিশোরগঞ্জ

প্রকাশিত: ২১:৪২, ১১ জুন ২০২৫

কিশোরগঞ্জের তিন অগ্নিপুরুষ: বিপ্লবের আগুনে গড়া তিন যোদ্ধার গল্প

বাংলার ইতিহাসে কিশোরগঞ্জ শুধুই একটি জেলা নয়—এটি একটি বিপ্লবের উৎসস্থল, যেখানে জন্ম নিয়েছিলেন তিনজন অতিমানবীয় সাহসী সন্তান: ত্রৈলোক্যনাথ চক্রবর্তী, রেবতী মোহন বর্মণ, এবং মোহনকিশোর নমোদাস। এঁরা সবাই ছিলেন ব্রিটিশ বিরোধী স্বাধীনতা আন্দোলনের একেকটি দীপ্তিমান আলোকস্তম্ভ, যাঁদের অবদান আজও অনেকাংশে উপেক্ষিত।

ত্রৈলোক্যনাথ চক্রবর্তী (১৮৮৯ – ১৯৭০)
জন্ম কিশোরগঞ্জের কুলিয়ারচর উপজেলার কাপাসাটিয়া গ্রামে। তিনি অনুশীলন সমিতির একনিষ্ঠ সদস্য ছিলেন। ব্রিটিশ শাসনামলে বিপ্লবী কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকার কারণে মোট ২৭ বছর কারাজীবন পার করেন—অন্দামান সেলুলার জেল থেকে শুরু করে বার্মার মান্দালয় জেল পর্যন্ত। স্বাধীনতার পরও তিনি পাকিস্তানে থেকে ১৯৫৪ সালের পূর্ব পাকিস্তান প্রাদেশিক পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হন। তাঁর জীবন ইতিহাসের জীবন্ত দলিল।

রেবতী মোহন বর্মণ (১৯০৫ – ১৯৫২)
জন্ম কিশোরগঞ্জ জেলার ভৈরবের শিমুলকান্দি গ্রামে। ছিলেন সাম্যবাদী চিন্তাধারার একজন সাহিত্যিক ও বিপ্লবী। যোগ দেন যুগান্তর দলে, বিপ্লবী কর্মকাণ্ডে যুক্ত হয়ে গ্রেপ্তার হন এবং (১৯৩০–৩৮) সাল পর্যন্ত বিনা বিচারে জেলে আটক থাকেন।
মুক্তির পর কলকাতায় “ন্যাশনাল বুক এজেন্সি” গড়ে তোলেন ও শ্রমিক শ্রেণির রজনৈতিক চেতনা জাগাতে বিপুল লেখালেখি করেন।

মোহনকিশোর নমোদাস (অজ্ঞাতনামা - ১৯৩৩) জন্ম কিশোরগঞ্জ জেলার বাজিতপুর উপজেলার সরারচর গ্রামে।দলিত পরিবারের সন্তান হয়েও ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনে যোগ দেন অনুশীলন দলের মাধ্যমে। ১৯৩২ সালে গ্রেপ্তার হয়ে আন্দামানের সেলুলার জেলে পাঠানো হয়।
১৯৩৩ সালে জেলবন্দিদের সঙ্গে অনশনে অংশ নিয়ে ব্রিটিশদের নির্মম জোরপূর্বক খাওয়ানোর নির্যাতনের সময় তার মৃত্যু হয়। তিনি ছিলেন অগ্নিযুগের এক অবহেলিত শহীদ।

তাদের সম্মানেই আমাদের মাথা নত হয়
এই তিন বিপ্লবীর জীবন কিশোরগঞ্জকে এক অনন্য মর্যাদায় পৌঁছে দিয়েছে। স্বাধীনতার জন্য তাঁদের আত্মত্যাগের চেতনা নতুন প্রজন্মের জন্য এক অমূল্য প্রেরণা।

Jahan

×