ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ১৪ জুন ২০২৫, ৩০ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

মোগল থেকে বর্তমান – যশোরের ঐতিহাসিক পথচলা

মতিন গাজী, কন্ট্রিবিউটিং রিপোর্টার, যশোর।

প্রকাশিত: ১৫:০৬, ১১ জুন ২০২৫

মোগল থেকে বর্তমান – যশোরের ঐতিহাসিক পথচলা

বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের প্রাচীন জনপদ যশোর, ইতিহাস, ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির দিক থেকে এক অমূল্য রত্ন। প্রাচীন বাংলার বাণিজ্য, রাজনীতি এবং সাহিত্যচর্চার গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্রবিন্দু ছিল এই জেলা।

যশোর জেলার ইতিহাস সুপ্রাচীন। প্রাচীনকালে এটি ‘সতুরগাঁও’ ও পরে ‘যশোহর’ নামে পরিচিত ছিল বলে ধারণা করেন অনেক ঐতিহাসিক। নামের উৎপত্তি সম্পর্কে কিংবদন্তি রয়েছে—মোগল আমলে এখানে এক ‘যশ’ নামক জমিদার রাজস্ব পরিশোধে অনন্য কৃতিত্ব দেখিয়েছিলেন, তাঁর নাম অনুসারেই এই অঞ্চলের নাম হয় ‘যশোর’।

১৬০৯ খ্রিস্টাব্দে বাংলার সুবেদার ইসলাম খাঁর আমলে যশোর একটি প্রশাসনিক কেন্দ্র হিসেবে গড়ে ওঠে। ঐতিহাসিক মানচিত্র ও দলিলে দেখা যায়, এই অঞ্চল ছিল দক্ষিণ-পশ্চিম বাংলার রাজনৈতিক এবং কৌশলগত কেন্দ্র। মোগল, ব্রিটিশ ও পাকিস্তান আমলে যশোর সবসময়ই ছিল গুরুত্বপূর্ণ একটি প্রশাসনিক ইউনিট।

যশোর জেলার অন্যতম গর্ব—বাংলাদেশের প্রথম রেলপথ (১৮৬২ সালে, কলকাতা-যশোর) এখানেই স্থাপিত হয়। ১৯৪৭ সালে ভারত বিভাজনের পর এটি সীমান্তবর্তী জেলা হিসেবে আরও কৌশলগত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধে যশোর জেলার ভূমিকা ছিল অবিস্মরণীয়। পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে বীর মুক্তিযোদ্ধারা প্রাণপণ যুদ্ধ করে যশোরকে প্রথম মুক্ত জেলা হিসেবে প্রতিষ্ঠা করেন ৬ ডিসেম্বর ১৯৭১ সালে। তাই প্রতি বছর এই দিনটি “যশোর মুক্ত দিবস” হিসেবে উদ্‌যাপিত হয়।

এ জেলার ঐতিহ্যের বড় একটি অংশ হলো সাহিত্য ও সংস্কৃতি। প্রখ্যাত কবি মাইকেল মধুসূদন দত্তের জন্মস্থান কেশবপুর উপজেলার সাগরদাঁড়ি এই জেলার গর্ব। এখানেই স্থাপিত হয়েছে 'মধুপল্লী', যেখানে প্রতিবছর আয়োজন করা হয় ‘মধুমেলা’।

এ ছাড়া যশোরের ছাউনী মসজিদ, বারান্দীপাড়া দুর্গা মন্দির, গোয়ালহাটি মঠ, বেনাপোল স্থলবন্দর এবং খাজুরা জমিদারবাড়ি পর্যটকদের আকৃষ্ট করে থাকে। যশোর শিক্ষা বোর্ড প্রতিষ্ঠিত হয় ১৯৬৩ সালে, যা দেশের অন্যতম প্রাচীন শিক্ষা বোর্ড। বর্তমানে যশোরে একাধিক বিশ্ববিদ্যালয়, কারিগরি ও চিকিৎসা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, ইতিহাস, সংস্কৃতি ও আধুনিক উন্নয়নের অপূর্ব সংমিশ্রণ এই যশোর। আজও সে তার প্রাচীন ঐতিহ্যকে বুকে ধারণ করে এগিয়ে যাচ্ছে একটি সমৃদ্ধ ভবিষ্যতের পথে।

সজিব

×