ঢাকা, বাংলাদেশ   সোমবার ১৬ জুন ২০২৫, ৩ আষাঢ় ১৪৩২

ঐতিহ্যের সাথে তারুণ্যের মেলবন্ধন: নীলফামারীতে "কলাপাতায় পিকনিক"

রিপন ইসলাম শেখ, নীলফামারী

প্রকাশিত: ২৩:৪৮, ১০ জুন ২০২৫

ঐতিহ্যের সাথে তারুণ্যের মেলবন্ধন: নীলফামারীতে

ঈদ-উল-আযহার আনন্দকে আরও স্মরণীয় করে রাখতে নীলফামারী জেলার ডোমার ও ডিমলা উপজেলার বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থী এবং নানা পেশায় নিয়োজিত তরুণরা এক ব্যতিক্রমী মিলনমেলার আয়োজন করে। "কলাপাতায় পিকনিক" নামে দিনব্যাপী এই আয়োজন মঙ্গলবার (১০ জুন) সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত ডিমলা ফরেস্টের প্রাকৃতিক পরিবেশে অনুষ্ঠিত হয়, যা নিজস্ব অর্থায়ন, বন্ধুত্বপূর্ণ পরিবেশ এবং প্রাণবন্ত অংশগ্রহণে ভরপুর ছিল।

দিনটি শুরু হয় সকালের নাশতার মধ্য দিয়ে। এরপর পর্যায়ক্রমে খেলাধুলা, বিভিন্ন প্রতিযোগিতা, পুকুরে গোসল এবং গান সহ নানা বিনোদনমূলক কার্যক্রমে মুখরিত ছিল পিকনিকের প্রাঙ্গণ। দুপুরের খাবারে ছিল বাঙালিয়ানার ছোঁয়া—কলাপাতায় পরিবেশিত হয় সাদা ভাত, সবজি, মাংস এবং মিষ্টান্ন। এই ঐতিহ্যবাহী পরিবেশনা পিকনিকের অন্যতম আকর্ষণ ছিল, যা অংশগ্রহণকারীদের মাঝে ব্যাপক প্রশংসা কুড়ায়।

দুপুরের খাওয়া শেষে শুরু হয় পরিচিতিমূলক পর্ব। অংশগ্রহণকারীরা নিজেদের পরিচয় পর্বের পাশাপাশি বিভিন্ন বিষয়ে নিজেদের মতামত প্রকাশ করেন, স্মৃতিচারণ করেন এবং জীবনের নানা অভিজ্ঞতা ভাগাভাগি করেন। এই পর্বটি ছিল খোলামেলা আলোচনা ও পারস্পরিক বোঝাপড়ার এক চমৎকার সুযোগ। বিকেলে প্রকৃতির মাঝে ছবি তোলা, হাঁটাহাঁটি এবং কোল্ড ড্রিংক আড্ডায় পিকনিকের শেষ মুহূর্তগুলো জমে ওঠে।

ঢাকা কলেজের অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষার্থী নিয়াজ মোর্শেদ তুহাদ বলেন, "ঈদ-উল-আজহার আনন্দকে ভাগাভাগি করে নেওয়া, দলমত নির্বিশেষে আমাদের ভ্রাতৃত্বের বন্ধনকে অটুট রাখা এবং কালের আবর্তনে হারিয়ে যেতে বসা বাঙালির চিরায়ত ঐতিহ্যকে ধারণ করার লক্ষ্যেই তৃতীয়বারের মতো আয়োজন করা হয়েছে এই উৎসব। কলাপাতায় বাঙালীয়ানা খাবার পরিবেশন, খেলাধুলা, আড্ডা, খোশগল্পসহ নানা আয়োজনের মাধ্যমে দিনটিকে রাঙিয়ে তোলা হয়েছে প্রাণবন্তভাবে।"

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী আব্দুল বাতেন নয়ন আয়োজকদের ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, "আজকের আয়োজন ছিল অসাধারণ। দল-মত ভুলে সবাই মিলে ফুটবল খেলা, পুকুরে গোসল আর আড্ডায় দারুন সময় কেটেছে। সবচেয়ে ভালো লেগেছে কলাপাতায় খাবার পরিবেশন। এমন আয়োজন প্রতি বছর হোক—এই প্রত্যাশা করি।"

শিক্ষক মো. ওমর আলী বলেন, “প্রতিদিনের রুটিনের বাইরে এসে এভাবে নির্ভেজাল আনন্দ করা খুব দরকার। এই ধরনের আয়োজন আমাদের বন্ধনকে আরও দৃঢ় করে। এমন আয়োজনে অংশ নিতে পেরে খুব ভালো লাগছে।"

পিকনিকটির অন্যতম আয়োজক মো. ইছা আলী বলেন, "মানুষ যখন শতধা বিভক্ত, সামাজিকভাবে একে অপরের বন্ধু থেকে শত্রুতে পরিণত হচ্ছে তখন আমাদের প্রাচীন সামাজিক ঐতিহ্যের ভ্রাতৃত্ববোধকে জাগিয়ে তুলতে এক অঞ্চলের সাথে আরেক অঞ্চলের সেতুবন্ধরূপে তৈরি করবার জন্যই এই আয়োজন।"

সামাজিক বিভেদ ও দূরত্বের এই সময়ে এমন একটি আয়োজন নিঃসন্দেহে প্রশংসার দাবি রাখে। "কলাপাতায় পিকনিক" শুধু একটি বিনোদনমূলক অনুষ্ঠান ছিল না, এটি ছিল ভ্রাতৃত্বের বন্ধনকে সুদৃঢ় করার, ঐতিহ্যকে লালন করার এবং তারুণ্যের শক্তিকে ইতিবাচক কাজে লাগানোর এক অনন্য দৃষ্টান্ত।

 

রাজু

×