ঢাকা, বাংলাদেশ   সোমবার ১৬ জুন ২০২৫, ৩ আষাঢ় ১৪৩২

একদিনে ঘুরে আসুন ঢাকার পাশে শতবর্ষী জমিদারবাড়ি!

সায়েম খান, কন্ট্রিবিউটিং রিপোর্টার, হরিরামপুর, মানিকগঞ্জ

প্রকাশিত: ১৮:৩০, ১০ জুন ২০২৫

একদিনে ঘুরে আসুন ঢাকার পাশে শতবর্ষী জমিদারবাড়ি!

ব্যস্ত জীবনের ফাঁকে একটু সুযোগ করে ঘুরে আসতে পারেন প্রাচীন স্থাপত্যশিল্পে নির্মিত মানিকগঞ্জ জেলার হরিরামপুর উপজেলার ঝিটকা পোদ্দারবাড়ি। প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ও প্রাচীন ঐতিহাসিক স্থাপনা নিয়ে মানুষের আগ্রহের শেষ নেই। আক্ষরিক অর্থে না হলেও সুদূর অতীতকে অনুভব করার এক চমৎকার উপায় হলো ঐতিহাসিক দর্শনীয় স্থানসমূহ। তেমনই এক ঐতিহাসিক নিদর্শন এই জমিদারবাড়িটি। বর্তমানে এটি জেলার অন্যতম একটি দর্শনীয় স্থান।

জানা যায়, উনিশ শতকের শুরুর দিকে এই অঞ্চলে ৭ একর জমির উপর দৃষ্টিনন্দন স্থাপনা তৈরি করেন তিন সহোদর ভাই। তারপর থেকেই ঝিটকা পোদ্দারবাড়ি নামে পরিচিতি লাভ করে এই জমিদারবাড়িটি।

উপজেলার ঝিটকা অঞ্চলের বাল্লা ইউনিয়নের তৎকালীন সময়ের ধনাঢ্য পরিবারখ্যাত পোদ্দারবাড়ির মূল কর্ণধার ছিলেন মহারাজ পোদ্দার। মহারাজ পোদ্দারের ছিল দুই সন্তান—রাম পোদ্দার ও আনন্দ মোহন পোদ্দার। এই আনন্দ মোহন পোদ্দারের ছিল তিন ছেলে—যোগেশ্বর পোদ্দার, সর্বেশ্বর পোদ্দার ও হরমোহন পোদ্দার। বাবার পৈত্রিক সূত্রে পাওয়া ৭ একর জমির ওপর উনিশ শতকের গোড়ার দিকে তিন সহোদর মিলেই গড়ে তোলেন দৃষ্টিনন্দন বিভিন্ন স্থাপনা।

বাড়িটিতে ঢুকতেই চোখে পড়বে সবুজ মাঠের দক্ষিণ পাশে পুকুরের দৃষ্টিনন্দন ঘাট। এর পাশে বিশাল চৌচালা ঘর। ঘরটির চাল টিনের হলেও চারপাশের দেয়াল কাঠের। চারপাশের বারান্দাও কাঠের তৈরি। এই ঘরেই বিচার-সালিস হতো। এর উত্তর পাশে পূর্ব-পশ্চিমে দৃষ্টিনন্দন বিশাল আধাপাকা ঘর। এর পেছনে অর্থাৎ উত্তর পাশে আছে দক্ষিণ, পশ্চিম ও পূর্বমুখী কারুকার্যখচিত তিনটি প্রাসাদ। একতলাবিশিষ্ট প্রতিটি প্রাসাদে চার থেকে পাঁচটি করে বিশালাকার কক্ষ রয়েছে। এই প্রাসাদেই থাকতেন পোদ্দারবাড়ির সদস্যরা। বাড়ির চারপাশে রয়েছে আম, নারকেল, কাঁঠালসহ বিভিন্ন গাছগাছালি।

১৯৪৭ সালে দেশভাগের সময় আনন্দ মোহন পোদ্দারের বংশধরেরা স্বপরিবারে ভারতে চলে যান। ১৯৬৫ সালে পাকিস্তান সরকার বাড়িটি অধিগ্রহণ করলেও ২ একর জমি বাড়ির বংশধরদের রয়ে যায়। বর্তমানে এই বাড়িটি উপজেলার অন্যতম এবং একমাত্র দর্শনীয় স্থান। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিও বহন করে বাড়িটি। ওই সময় এখানে মুক্তিবাহিনীর ক্যাম্প করা হয়। আগস্ট মাস থেকে ১৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত এই ক্যাম্প পরিচালিত হয়।

এই বাড়ি দেখতে প্রতিদিন জেলা ও জেলার বাইরে থেকেও আসেন দর্শনার্থীরা। রাজধানী ঢাকা থেকে ঝিটকা পোদ্দারবাড়িতে পৌঁছাতে সড়কপথে আড়াই থেকে তিন ঘণ্টা লাগে।

যেভাবে যাবেন

ঢাকা থেকে মানিকগঞ্জগামী বাসে গেলে মানিকগঞ্জ বাসস্ট্যান্ডে নামতে হবে। মানিকগঞ্জ বাসস্ট্যান্ড থেকে সিএনজি বা ইজিবাইকে সরাসরি চলে যেতে পারেন ঝিটকা বাজার। ঝিটকা বাজার থেকে রিকশা বা ইজিবাইক চালককে বললেই নিয়ে যাবে পোদ্দারবাড়ি।

মিমিয়া

×