
কয়েক যুগ ধরে গ্রীষ্মকাল বৈশাখ-জ্যৈষ্ঠ মাসে বিভিন্ন উপকরণ দিয়ে ঝাঁজালো কাসুন্দি তৈরি করা হয়। পাবনার বেড়া পৌরসভার মৈত্রবাঁধা ও শেখপাড়া মহল্লার নারীরা বাণিজ্যিক ভিত্তিতে তৈরি করে রসনাবিলাসী কাসুন্দি। কাসুন্দি বানিয়ে অনেক নারী স্বাবলম্বী হয়েছেন।
কাসুন্দি বিক্রি করে প্রায় ২০০ নারী তাদের সংসারে এনেছেন সচ্ছলতা। তবে বাড়ির পুরুষরা এতে সহযোগিতা করেন। পুরুষদের পাশাপাশি কাসুন্দি তৈরি ও বিক্রিতে নারীদের ভূমিকা বেশি। সাঁথিয়া উপজেলার গৌরীগ্রাম, ইকরজনা, ভদ্রকোলা, ঘোনাপাড়া সোনাতলা এবং বেড়ার পৌর এলাকার মৈত্রবাঁধা,শেখপাড়াসহ আমিনপুর, নগরবাড়ি গ্রামের বেশকিছু পরিবার কাসুন্দি তৈরির সঙ্গে জড়িত। সারা বছর ধরে তাঁরা কাসুন্দি মৌসুমের জন্য অপেক্ষায় থাকেন৷ এ মৌসুমে তাঁরা যা আয় করেন, তাতে তাঁদের অভাব অনেকটাই দূর হয়৷
হাট-বাজারে বেড়া,সাঁথিয়ার হাতে তৈরি এ কাসুন্দির বিশেষ কদর রয়েছে। কাঁচা-পাকা আম,আমড়া,কামরাঙা, জলপাই,পেয়ারা, চালতার মতো টক ফলের স্বাদ বহু গুণ বাড়িয়ে দেয় কাসুন্দি। এর কদর সারাবছর একটু কম থাকলেও আমের মৌসুমে চাহিদা বহুগুন বেড়ে যায়। ভরা মৌসুমে মৈত্রবাঁধা ও শেখপাড়া এলাকায় গেলে কানে ভেসে আসে ঢেঁকির শব্দ,চোখে পড়ে দুয়ারে দুয়ারে কাসুন্দি তৈরি দৃশ্য। কোনো বাড়িতে রোদে শুকোনো হচ্ছে কাসুন্দি তৈরির নানা উপকরণ। হয়তো ঢেঁকিতে গুঁড়া করা হচ্ছে রাই-সরিষাসহ বিভিন্ন রকমের মসলা। কোথাও সেসব মসলা ও রাই-সরিষার গুঁড়া গরম পানিতে গুলিয়ে তৈরি হচ্ছে কাসুন্দি। কাসুন্দি তৈরি হওয়া বাড়ি গুলোতে,দেখা যায় পাইকারিও খুচরা ক্রেতার ভিড়। ক্রেতার বেশির ভাগই নারী। আশপাশের গ্রামে তাদের বাড়ি। পাইকারি দরে কলস অথবা ডেকচিভর্তি কাসুন্দি কিনে তারা বিক্রির জন্য বেরিয়ে পড়েন কাছে বা দূরের হাটে কিংবা বিভিন্ন গ্রামে। এর সাথে সংশ্লিষ্ট কয়েকজন বলেন,অনেক আগে থেকে এ এলাকা খাঁটি কাসুন্দি তৈরিতে বিখ্যাত। আমাদের কাসুন্দির সুনাম জেলার সব জায়গায়। এ কাসুন্দির ঝাঁঝ জেলা ছাড়িয়ে আশপাশের জেলায়ও। আমাদের পূর্বে যারা কাসুন্দি তৈরি করতো তাদের কাছ থেকে তৈরির কলাকৌশল জানা।
কাসুন্দি তৈরিতে রাই-সরিষা, জিরা, হলুদ, শুকনামরিচ, জাউন, সলুপ, ধনিয়া, তেজপাতাসহ বিভিন্ন ধরনের মশলা। দীর্ঘ সময় ধরে ফুটানো গরম পানির সঙ্গে প্রথমে সরিষার গুঁড়া মেশাতে হয়। পরে তাতে লবণসহ গুঁড়া করা মসলাগুলো পরিমাণমতো মিশিয়ে নিলেই তৈরি হয় সুস্বাদু কাসুন্দি। মসলা সহ সব জিনিসের দাম বাড়তি,আগের তুলনায় বর্তমানে লাভ কম। আবার লাভ কম হওয়ায় এ পেশা থেকে অনেক সরে যাচ্ছে। বিভিন্ন নামী-দামী কোম্পানির বোতল কাসুন্দি বাজারে আসায় হাতে তৈরি কাসুন্দি কদর বেড়েছে,কিন্তু সে তুলনায় লাভ কম। প্রতি কেজি কাসুন্দি বিক্রি হয় ১৯০ থেকে ২০০ টাকায়। মৌসুমে খরচ বাদে আয় হয় ৩০ থেকে ৩৫ হাজার টাকা। এ পেশার সঙ্গে জড়িতরা পাচ্ছেন বাড়তি সচ্ছলতা।
মুমু