
ছবি: জনকণ্ঠ
চট্টগ্রামের মিরসরাই বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আজিম উদ্দিন ভুইয়ার পদত্যাগ ও অপসারণের দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল ও মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেছে।
মঙ্গলবার (৩ জুন) সকাল ১০টায় মিরসরাই স্টেডিয়াম থেকে বিক্ষোভ মিছিলটি শুরু হয়ে মিরসরাই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়ের সামনে এসে শেষ হয়। এর আগে মিরসরাই মহাসড়কের পাশে মানববন্ধনের আয়োজন করেন শিক্ষার্থীরা।
মানববন্ধনে শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করে বলেন, প্রধান শিক্ষক আজিম উদ্দিন ভুইয়া শিক্ষার্থী ও অভিবাবকদের সাথে সব সময় খারাপ আচারন করেন। দরিদ্র শিক্ষার্থীদের তুচ্ছ তাচ্ছিল্য ও ভর্ৎসনা করে তাদের বিদ্যালয় থেকে তাড়িয়ে দেন। বিদ্যালয়ের ঝাড়ু ক্রয় থেকে শুরু করে বৈদ্যুতিক পাখা, লাইট, লাইব্রেরীর বই ক্রয়, বিজ্ঞানাগারের সরঞ্জাম ক্রয়, ডায়েরি ক্রয়, কাগজ, কলম, স্টপলার ও পিন ক্রয় সব কিছুতেই শিক্ষাথীদের কাছ থেকে অর্থ আদায় করেন। আবার এসব টাকা বিল বাউচার করে বিদ্যালয়ের কোষাগার থেকে উত্তোলন করে সেই টাকা আত্মসাৎ করেন।
এছাড়া শিক্ষক আজিম উদ্দিন ভুইয়া দরিদ্র শিক্ষার্থীদের প্রতিবন্ধী সাজিয়ে সরকারি একটি স্কীম থেকে বিভিন্ন খাতে ৫ লক্ষ টাকা আত্মসাৎ করেছেন। বিজ্ঞানাগার স্থাপন, ভবন উন্নয়ন, লাইব্রেরীর জন্য বই ক্রয়, শিক্ষক প্রনোদনার নামে বিদ্যালয় থেকে বিভিন্ন সময় উত্তোলন করে লক্ষ লক্ষ টাকা আত্মসাৎ করেছেন। গাইড় বইয়ের প্রকাশনা থেকে মোটা অংকের ঘুষ গ্রহন করে শিক্ষার্থীদের নিন্মমানের বই কিনতে বাধ্য করা তার বিরুদ্ধে অভিযোগ গুলোর অন্যতম। তার বিরুদ্ধে সবচাইতে স্পর্ষকাতর অভিযোগ উঠেছে তিনি দিনের বেলায় বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ভিড়িও কলে রেখে নিজের স্ত্রীর সাথে ফর্নোগ্রাফী তৈরি করে তা শিক্ষর্থীদের মোবাইলে পাঠান।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক শিক্ষার্থ অভিযোগ করে বলেন, ২০২৩ সালে এসএসপি টেষ্ট পরিক্ষায় রেজাল্ট খারাপ করায় প্রধান শিক্ষক আজিম উদ্দিন ভুইয়া চাঁদনি নামের একটি মেয়েকে খুব অকথ্য ভাষায় গালমন্ধ করেন। ফলে মেয়েটি অপমান সহ্য করতে না পেরে আত্মহত্যা করে।
সানজিদা নামে এক শিক্ষার্থী বলেন, আমি চোখে দেখি কিন্ত স্যার আমাকে অন্ধ দেখিয়ে সরকারি সহায়তার ১২ হাজার ৫শত টাকা উত্তোলন করে আত্মসাৎ করেন। কিন্তু আমার অর্থের অভাবে পড়ালেখা বন্ধ হয়ে যায়। অথচ টাকাটা পেলে আমার পড়ালিখা চালিয়ে যেতে পারতাম।
ডালিয়া আক্তার নামে এক শিক্ষাথী বলেন আমি কথা বলতে পারি। কিন্তু স্যার আমাকে বাক প্রতিবন্ধি দেখিয়ে আমার নামে টাকা তুলে আত্মসাৎ করেছেন। কিন্তু আমরা বিনা বেতনে অধ্যায়নের আবেদন করলেও সেটি তিনি গ্রহন করেন নাই। অথচ আমাদেকে দরিদ্র ও প্রতিবন্ধি শিক্ষার্থী দেখিয়ে আমাদেরকে আর্থিক সাহায্যের নামে নিজেই টাকা তুলে আত্মসাৎ করেছেন। এই রকম প্রায় ২৫ জন শিক্ষার্থীর নামে প্রায় ১ লক্ষ ২৫ হাজার টাকা আত্মসাৎ করেছেন ২০২৩সালে।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে মিরসরাই বালিকা বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আজিম উদ্দিন ভুইয়া, ভিড়িওটির সত্যতা স্বীরকার করে ভবিষ্যতে এমন ভুল হবেনা বলেও তিনি আশ্বস্থ করেন। দুর্নীতির ব্যাপারে তিনি বলেন বিদ্যালয়ের প্রয়োজনে বিভিন্ন সময় একদিকের তহবিল অন্যদিকে খরচ করেছেন যার বিল ভাউচার রক্ষিত আছে। কিন্তু সুস্থ শিক্ষাথীকে প্রতিবন্ধি সাজিয়ে সরকারি সহায়তার অর্থ আত্মসাতের বিষয়ে সঠিক কোন উত্তর দিতে পারেন নি।
মিরসরাই উপজেলা অতিরিক্ত দায়িত্বপ্রাপ্ত উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মুস্তফা আলম সরকার বলেন, একটি বালিকা বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে এমন জঘন্য অভিযোগ খুবই লজ্জার। ওই প্রধান শিক্ষককে আমি বলে দিয়েছি তিনি যেন পদত্যাগ করেন কারন তার বিরুদ্ধে যেই পর্ণগ্রাফির অভিযোগ উঠেছে এই অভিযোগের পরে তিনি কোন মুখে শিক্ষার্থীদের সামনে উপস্থিত হবেন। একজন প্রধান শিক্ষক হিসেবে নুন্যতম লজ্জাবোধ থাকা উচিত তার।
বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি সাবেক অধ্যক্ষ মোহাম্মদ আলি বলেন, তিনি নতুন সভাপতি নির্বাচিত হয়েছেন। পর্ণ ভিডিও যদি নিজের পরিবারের সাথে হয় সেটাও চিন্তার বিষয়। এছাড়া অর্থ আত্মসাতের বিষয়ে যাচাই করে দেখা হবে।
শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ ও মানববন্ধন শেষে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবরে একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করা হলে, লিখিত অভিযোগের ভিত্তিতে মিরসরাই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সোমাইয়া আক্তার শিক্ষার্থীদের নিবৃত করে প্রধান শিক্ষক আজিম উদ্দিন ভুইয়ার বিরুদ্ধে তদন্ত পূর্বক উপযুক্ত ব্যাবস্থা নিবেন বলে আশ্বস্ত করেন তিনি। বিষয়টি তদন্ত করে উপযুক্ত ব্যবস্থা নিতে তাৎক্ষণিক একটি অফিস আদেশ উপজেলা অতিরিক্ত দায়িত্বপ্রাপ্ত উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মুস্তফা আলম সরকার বরাবরে প্রেরণ করা হয়েছে।
চট্টগ্রাম উচ্চ মাধ্যমিক বোর্ড সচিব প্রফেসর ড.একেএম সামছুদ্দিন আজাদ বলেন, একজন প্রধান শিক্ষকের নৈতিক চরিত্রের এমন অধপতন হলে বালিকা বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের মতো স্পর্শকাতর স্থানে তাকে রাখা কোন প্রকারেই সমিচিন নয়। তবে অফিসিয়ালি সিদ্ধান্ত উপজেলা থেকে আসতে হবে। তথ্য উপাত্তের সত্যতা পেলে ওই প্রধান শিক্ষক কে অব্যহতির পাশাপাশি শাস্তির সম্মুখিন হতে হবে।
শিহাব