
গাজীপুরের টঙ্গীতে বাঁশপট্রি এলাকায় আবাসন প্রকল্পের ভবন নির্মাণ করতে শত বছরের পুরনো মিনি খালের সংযোগ পথ বন্ধ করে দেওয়ায় গাজীপুর সিটি করপোরেশনের টঙ্গী অঞ্চলের ৩ টি ওয়ার্ডের ৩ লাখ বাসিন্দা জলবদ্ধতায় পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। সামান্য বৃষ্টি হলেই পানি সরতে না পারায় এখানকার সব বাড়ি ঘর রাস্তাঘাট পানির নিচে তলিয়ে থাকছে দিনের পর দিন। স্হানীয় বাসিন্দারা অবর্ননীয় দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন পানিবন্দি হয়ে।
গত ৫ আগষ্টের পর একটি আবাসন কোম্পানির লোকজন খালটি ভরাট করে পাইপের সংযোগে পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্হা করায় এ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। গাজীপুর সিটি করপোরেশনে মেয়র বা ওয়ার্ড কাউন্সিলর না থাকায় এ সমস্যার সমাধানও করতে পারছেন না কেউ। তবে আউচপাড়ার ৫৪ নং ওয়ার্ডের সাবেক কমিশনার বিএনপি নেতা শেখ মোহাম্মদ আলেক আবাসন কোম্পানির হাত থেকে নানা উদ্যোগ নিয়েছেন খালটি উদ্ধারে।
মিনি খালটি বন্ধ করে দেয়ায় গাজীপুর সিটি করপোরেশনের ৫১/৫৩/৫৪ নং ওয়ার্ডের আউচপাড়া, দেওড়া, সাতাইশ ও গাজীপুরা পশ্চিম এলাকার পানি এখন জলবদ্ধতায় রুপ নিয়েছে। ভুক্তভোগীরা বলছেন, শত বছরের পয়ঃনিষ্কাশন মিনি খালের ড্রেনটি বন্ধ করায় টঙ্গী পশ্চিম থানা এলাকার পয়ঃনিষ্কাশনের পানি আরসিসি ড্রেনের মাধ্যমে তামিরুল মিল্লাত মাদ্রাসার সামনে ঢাকা ময়মনসিংহ মহাসড়কের ভিতরে দিয়ে বিশাল বড় ড্রেনের মাধ্যমে হায়দ্রাবাদের খাল হয়ে টঙ্গী তুরগ নদীতে গিয়ে পড়তো। কিছু অসাধু ফ্ল্যাট ব্যবসায়ী নিজেদের স্বার্থে বাঁশপট্রির মিনি খালটিতে পাইপ বসিয়ে খালটি প্রায় বন্ধ করে দেয়া হয়েছে।
এতে আউচপাড়া দেওড়া সাতাইশ গাজীপুরার ৩ বর্গ কিলোমিটার এলাকার পানি নিষ্কাশন ব্যবস্হা অচল হয়ে পড়েছে। গত কয়েকদিনের বৃষ্টিতে পশ্চিম থানা এলাকার আউচপাড়া দেওড়া ও সাতাইশের প্রতিটি অলিগলির রাস্তায় হাঁটু কোমর সমান পানি জমে থাকতে দেখা গেছে। রাস্তায় চলাচলকারী সাধারণ মানুষ ও স্কুল কলেজের ছাত্র-ছাত্রীরা চরম বিরম্বনায় পড়েছেন। স্হানীয়রা জানান, আগে বৃষ্টি হলে রাস্তায় পানি জমলে অল্প কিছুক্ষণের মধ্যে পানি চলে যেতো গাজীপুরার বাঁশপট্টির মিনি খাল দিয়ে, কিন্তু এখন পানি জমে বাড়িঘর রাস্তাঘাট তলিয়ে যাচ্ছে।
ভুক্তভোগী এলাকাবাসীরা আরো জানান, শত বছরের পুরনো মিনি খালটি একটি রাজনৈতিক দলের নেতারা আবাসন ফ্ল্যাট নির্মাণ করতে কালভার্ট দিয়ে ড্রেন বন্ধ করে রাস্তা নির্মাণ করছেন। এতে টঙ্গী পশ্চিম থানা এলাকার খাঁ পাড়া, সাতাইশ, গাজীপুরা, তিলারগাতি, মুক্তার বাড়িরোড, সফিউদ্দিন রোড, কলেজ রোড, পৌরসভা রোড, সুরতরঙ্গ রোড, স্কুইব বেক্সিমকো রোডসহ বিভিন্ন জায়গায় হাটু সমান পানি জমে আছে। ড্রেন বন্ধ করায় পানি যেতে পারছে না।
রাস্তার পাশ্বে বিভিন্ন দোকান ও বাড়িঘরে পানি ঢুকে যাওয়ায় বড় ধরনের ক্ষয়ক্ষতিতে পড়েছেেন। বিএনপি নেতা হাতেম খান মাষ্টার জনকণ্ঠকে জানান, শত বছরের পুরনো মিনি খালটি দিয়ে টঙ্গী পশ্চিম থানা এলাকার সকল শাখা ড্রেনের পানি হায়দ্রাবাদ খাল হয়ে তুরাগ নদীতে নিষ্কাশন হতো। এটি বন্ধ হয়ে যাওয়ায় জনদুর্ভোগ চরমে পৌঁছেছে। মুস্টিমেয় কয়েক ফ্ল্যাট ব্যবসায়ী নিজেদের স্বার্থে মিনি খালটি স্হায়ী বন্ধ করার পায়তারা করছে।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কয়েক ভুক্তভোগী লিখেছেন, টঙ্গীবাসীর দৃষ্টি আকর্ষণ করছি শত শত বছরের পুরনো গাজীপুরা বাঁশপট্রি ড্রেনটি দূর্বৃত্তরা বন্ধ করে দেয়ায় ৫১,৫৩, ৫৪ নং ওয়ার্ডের লক্ষ লক্ষ লোক পানিবন্দী। গাজীপুরা বাঁশপট্টির সিটি কর্পোরেশন এর বিশাল একটি ড্রেন ছিলো ৫ ই আগষ্ট পরবর্তী সময়ে কিছু অসাধু ফ্লাট ব্যাবসায়ী, ভূমি দস্যুরা একটি রাজনৈতিক দলের প্রভাব খাটিয়ে ড্রেনটিতে একটি চুঙ্গি বসিয়ে দৃশ্যত ড্রেনটি বন্ধ করে দিয়েছে। এতে করে এই তিনটি ওয়ার্ডের ৫/৬ লক্ষ মানুষ এখানে গার্মেন্টস কর্মী থেকে শুরু করে অসহায় দরিদ্র মানুষ যারা দিনমজুর হিসেবে কাজ করে তাদের জীবনযাপন দুর্বিষহ হয়ে পড়েছে।
স্কুল কলেজ মাদ্রাসা পড়ুয়া ছোট ছোট ছেলে মেয়েরা যাতায়াত করতে পারছে না। স্কুল মাদরাসায় পড়ুয়া ছোট বাচ্চা ছেলে-মেয়ে এবং অসুস্থ মানুষ দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছে। একদিন বৃষ্টি হলে পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা না থাকায় মিনিমাম ১৫ দিন এই পানি জমাট বেঁধে থাকছে। এই দুর্বৃত্ত তাদের খুঁটির জোর কোথায়, তারা কোন অদৃশ্য শক্তির বলে এই পুরনো ড্রেনটি বন্ধ করে দিল আমরা জানতে চাই।
এ বিষয় গাজীপুর মহানগর জামায়াতে সূরা সদস্য ও ফ্ল্যাট ব্যবসায়ী ফারুক আহমেদ সাংবাদিকদের জানান, তাদের মালিকানা জায়গা দিয়ে ৪ টি ওয়ার্ডের ময়লা পানি প্রবাহিত হয়। এ ব্যাপারে যোগাযোগ করা হলে গাজীপুর সিটি করপোরেশনের টঙ্গী জোন (অঞ্চল-১)-এর আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তা ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ জহিরুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, আমরা সংশ্লিষ্টদের চিঠি দিয়েছি কিন্তু তারা কোন জবাব দেয়নি। নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগ করে আমরা সেটা শীঘ্রই ভেঙে দেবো।
রিফাত