ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ০৪ জুন ২০২৫, ২১ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

মাদ্রাসা শিক্ষকের বিরুদ্ধে শিক্ষার্থীকে নির্যাতনের অভিযোগ

নিজস্ব সংবাদদাতা, কোটালীপাড়া, গোপালগঞ্জ

প্রকাশিত: ২২:০৪, ২ জুন ২০২৫

মাদ্রাসা শিক্ষকের বিরুদ্ধে শিক্ষার্থীকে নির্যাতনের অভিযোগ

ছ‌বি: জনকণ্ঠ

পড়া না পারার কারণে বেত দিয়ে প্রহার করে হামিম শেখ (৮) নামের এক মাদ্রাসা ছাত্রের হাত ভেঙে দিয়েছেন এক শিক্ষক। ভাঙা হাত নিয়ে ওই ছাত্র এখন নানা বাড়িতে শয্যাশায়ী অবস্থায় রয়েছে। বর্তমানে বন্ধ রয়েছে তার লেখাপড়া। এ ঘটনায় মাদ্রাসাটির ছাত্র-অভিভাবকদের মাঝে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।

গতকাল রোববার গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়া উপজেলার তারাশী-পবনাড়পাড়া মদিনাতুল উলুম মাদ্রাসা ও এতিমখানায় এ ঘটনা ঘটে।

হামিম শেখ উপজেলার গোপালপুর গ্রামের রুহুল আমিন শেখের ছেলে।

জানা গেছে, ঘটনার দিন মাদ্রাসাটির শিক্ষক হাফেজ মো. ইব্রাহিম খলিলুর রহমান হেফজ বিভাগের শিক্ষার্থী হামিম শেখকে পড়া জিজ্ঞাসা করলে সে না পারায় শিক্ষক বেত দিয়ে বেদম প্রহার করেন। এই প্রহারে হামিম অসুস্থ হয়ে পড়লে তার নানি সোনাই বেগম দ্রুত কোটালীপাড়া উপজেলা স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়ে যান। পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর হামিমের হাত ভাঙা পাওয়া যায়।

শিক্ষার্থী হামিম শেখ বলেন, "ইব্রাহিম খলিল হুজুর আমার কাছে পড়া জিজ্ঞেস করলে আমি না পারায় উনি আমাকে বেত দিয়ে খুব মারেন এবং ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেন। এতে আমার হাত ভেঙে যায়। হুজুর এর আগেও আমাকে অনেকবার মেরেছেন। শুধু আমাকে না, পড়া না পারলে হুজুর সবাইকেই বেত দিয়ে মারেন। এই মারধরের কথা বাড়িতে বলতে নিষেধ করেন। এই জন্য আগেরবারগুলোতে মার খাওয়ার পরও আমি বাড়িতে কিছু বলিনি।"

সোনাই বেগম বলেন, "আমি হামিমের জন্য খাবার নিয়ে মাদ্রাসায় যাই। গিয়ে দেখি মাদ্রাসার এক কোণে শুয়ে সে কান্না করছে। তখন ইব্রাহিম খলিল হুজুরকে হামিমের কান্নার বিষয়ে জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন, পড়ে গিয়ে ব্যথা পেয়েছে। আমি হামিমকে বাড়ি নিয়ে এসে ওর জামা খুলে দেখি, সারা শরীরে বেত দিয়ে মারধরের দাগ। বাম হাতটি অনেক ফুলে গেছে। এরপর হামিমের কাছে জানতে চাইলে সে জানায়, ইব্রাহিম হুজুর বেত দিয়ে পিটিয়েছেন। পরে হামিমকে চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে নিয়ে গেলে ডাক্তাররা হাত ভাঙা দেখে প্লাস্টার করে ওষুধ দেন। আমরা থানায় অভিযোগ করেছি, কিন্তু এখনও তদন্ত করতে কেউ আসেনি।"

এ বিষয়ে জানতে মাদ্রাসায় গেলে অভিযুক্ত শিক্ষক হাফেজ মো. ইব্রাহিম খলিলকে পাওয়া যায়নি। তবে ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে মাদ্রাসার মোহতামিম হাফেজ মুফতি আব্দুল্লাহ আল হাফিজ বলেন, "হেফজ বিভাগের ছাত্র হামিমকে শাসন করতে গিয়ে ওস্তাদ অতিরিক্ত শাসন করেছেন, যা খুবই অন্যায় হয়েছে। এ বিষয়ে আগামীকাল সকালে মাদ্রাসা পরিচালনা কমিটির সভা ডেকে ওই শিক্ষকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।"

কোটালীপাড়া থানার অফিসার ইনচার্জ আবুল কালাম আজাদ বলেন, "এ বিষয়ে থানায় একটি অভিযোগ এসেছে। আমরা বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে দেখছি। তদন্তসাপেক্ষে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।"

এম.কে.

×