ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ০৪ জুন ২০২৫, ২১ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

পশুরহাটে ভেটেরিনারি সেবা, কাগজে আছে, বাস্তবে নেই

ওবাইদুল আকবর রুবেল, ফটিকছড়ি, চট্টগ্রাম

প্রকাশিত: ২১:৫৯, ২ জুন ২০২৫

পশুরহাটে ভেটেরিনারি সেবা, কাগজে আছে, বাস্তবে নেই

ছ‌বি: জনকণ্ঠ

কথায় আছে, কাজীর গরু খাতায় আছে, গোয়ালে নেই। এমনটিই ঘটেছে চট্টগ্রামের ফটিকছড়ি উপজেলা প্রাণিসম্পদ দপ্তরের ঈদুল আজহার পশুর হাটে ভেটেরিনারি সেবা কার্যক্রমে। প্রতিবছর কোরবানির আগে নিরাপদ ও সুস্থ পশু বাজারে ক্রয়-বিক্রয় এবং পশুর বর্জ্য অপসারণে নির্দেশনা দেওয়া হয়। কিন্তু সবই যেন খাতায়— বাস্তবে কোনো কাজেই নেই তারা।

উপজেলা প্রাণিসম্পদ দপ্তর উপজেলায় স্থায়ী ও অস্থায়ী ২৯টি পশুর হাটে ৮টি মনিটরিং দল গঠন করে বাজার তদারকির কথা বললেও বাস্তবে তার কিছুই নেই। দল গঠন করলেও তা অনেকটাই কাগজে-কলমে সীমাবদ্ধ। বাস্তবে তার কোনো প্রতিফলন দেখা যায় না। ফলে পশুর স্বাস্থ্যসেবা কার্যক্রম প্রায় নেই বললেই চলে।

গত ৩১ মে উপজেলার নাজিরহাট বাজারে প্রাণিসম্পদ দপ্তরের কোনো সেবা কার্যক্রম দেখা যায়নি। ২ জুন উপজেলা সদরের বিবিরহাট বাজারেও তাদের কোনো কার্যক্রম ছিল না। অথচ রাত অবধি সেখানে প্রচুর পশু বেচাকেনা হয়েছে। একইভাবে ওই দিন চামারদিঘি অস্থায়ী বাজারে সরেজমিনে গিয়ে ভেটেরিনারি হাসপাতালের কোনো টিমের সদস্যকে দেখা যায়নি।

জানা গেছে, তারা কোথাও পশুর সেবা দিয়েছেন—এমন নজিরও পাওয়া যায়নি। অনেক সময় ফোন করলেও তাদের মোবাইল ফোন বন্ধ পাওয়া গেছে।

বিবিরহাট বাজারের গরু বিক্রেতা মো. সামির বলেন, “হঠাৎ একটি বিক্রির জন্য আনা গরু অসুস্থ হয়ে পড়লে আমি প্রাণিসম্পদ দপ্তরের কোনো ডাক্তারকে পাইনি। পরে একজন গ্রাম্য ডাক্তার দিয়ে অসুস্থ গরুটিকে সুস্থ করি। ততক্ষণে আরেকটি গরু রোগাক্রান্ত হয়ে পড়ে।”

নাজিরহাট বাজারের গরু বিক্রেতা মো. আকবর আলী বলেন, “ভেটেরিনারি হাসপাতালের টিমের কোনো কার্যক্রম বাজারে কোনো দিন দেখা যায়নি। খোঁজ নিয়ে জানতে পেরেছি, তারা মাঝে মাঝে এলেও ৫০০–১০০০ টাকা ফি নিয়ে নামমাত্র সেবা দেন। এভাবে চরম অবহেলায় আমাদের পশুর দিন কাটে।”

মনিটরিং দলের সদস্য মো. শফিকুর রহমান বলেন, “আমরা নিয়মিত বাজারে টহলে থাকি। তবে অনেকেই আমাদের চেনেন না বা বিষয়টি সম্পর্কে জানেন না। তবুও আমরা কাজের বিষয়ে সচেতন।”

উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো. আবদুল মমিন বলেন, “আমাদের দপ্তরে লোকবল কম। তারপরেও আমরা চেষ্টা করছি পশুর হাটে স্বাস্থ্যসেবা কার্যক্রম অব্যাহত রাখতে। গঠিত ৮টি দল তাদের সর্বোচ্চ সেবা দিয়ে যাচ্ছে। তবে কিছু ক্ষেত্রে মাঠকর্মীদের অবহেলার কথা শোনা যায়। তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. মোজাম্মেল হক চৌধুরী বলেন, “এটি চরম অন্যায়। সরকারের কোনো কর্মকর্তা-কর্মচারী এমনটি করতে পারেন না। আনীত অভিযোগের বিষয়ে খতিয়ে দেখে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

এম.কে.

×