
ছবিঃ সংগৃহীত
মাদারীপুরে দেশীয় পদ্ধতিতে কোরবানীর গরু মোটাতাজাকরণ চলছে। তাই শেষ মুহূর্তে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন খামারিরা। জেলার চাহিদা পূরণ করে বিভিন্ন জেলায়ও বিক্রির স্বপ্ন দেখছেন গ্রামীণ জনপদের খামারিরা। ভারত থেকে গরু আমদানি বন্ধ ও চোরাচালান ঠেকানো গেলে ভাললাভের আশাও করছেন তারা। পশু বিক্রির হাটগুলো ঘিরে গঠন করা হয়েছে ১৬টি মেডিকেল টিম। পশুর রোগ-বালাই রোধে মাঠ পর্যায়ে কাজ করছেন জেলা প্রাণিসম্পদ বিভাগ।
জানা গেছে, সদর উপজেলার গননপুর এলাকার বাসিন্দা অ্যাডভোকেট সোহাগ খান জানান, আদালতের আইনজীবি হলেও নিজ বাড়িতে ২০১৮ সালে ১৫টি গবাদিপশু দিয়ে শুরু করেন মুর্শিদা এ্যাগ্রো ফার্ম নামের একটি প্রতিষ্ঠান। ছয় বছরের মাথায় তার ফার্মে এখন ৩০টি পশু রয়েছে। সম্পূর্ণ দেশীয় পদ্ধতিতে পরম যত্নে মোটাতাজা করেছেন। তাকে সহযোগিতা করছেন পরিবারের অন্য সদস্যরাও। কোরবানীর ঈদে সবগুলো গরু বিক্রির আশা তার। যদিও নায্য দাম পাওয়া নিয়ে শঙ্কায় তিনি।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, জেলার সরকারি নিবন্ধিত ৪৩৫টি খামারসহ মোট ৭ হাজার ৮০০ খামারে দিনরাত গরুগুলোকে কোন ইনজেকশন ও ওষুধ ছাড়া দানাদার খাবার দেয়া হচ্ছে। পাম্পের পানি দিয়ে গোসল করিয়ে রাখা হচ্ছে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন। এতে কৃত্রিম উপায়ে বেড়ে উঠছে গবাদিপশু। ভাল দাম না পাওয়া গেলে আগামীতে গবাদিপশু লালনপালনে খামারিরা আগ্রহ হারাতে পারেন। খামারিদের লাভবান করতে মাঠ পর্যায়ে পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছে জেলার প্রাণিসম্পদ অধিদফতর। জেলার ৫ উপজেলায় অনুমোদিত হাটের সংখ্যা ২৬টি। জেলার ৬৭ হাজার ৮৭৬ পশু চাহিদার বিপরীতে খামারে রয়েছে ৭৪ হাজার ৬৫০ পশু। কোরবানীর হাট ধরতে শেষ সময়ে খামারিগুলোতে ব্যস্ততা বেড়েছে। খামারিরা প্রত্যাশা করছেন এবার হাটে গরুর নায্য দাম পাওয়া গেলে বিগত দিনের লোকসান উঠে আসবে। এজন্য গরুর চোরাচালান বন্ধে সীমান্তে কঠোর নজরদারি প্রয়োজন।
খামারি অ্যাডভোকেট সোহাগ খান বলেন, “স্বপ্ন আর আশা নিয়ে প্রতিবছর অপেক্ষায় থাকি। কিন্তু গরু বিক্রি করে লোকসান গুনতে হয়। এর অন্যতম কারণ হলো খাবার সংগ্রহ করতে অনেক বেশি খরচ হয়। আর বাইরে থেকে গরু আসায় জেলার খামারিদের পশুর চাহিদা কমে যায়। তাই লোকসান গুনতে হয়। তবে এবার প্রাণিসম্পদ অধিদফতর আশার আলো জানিয়েছে। তারা বলেছেন, ভারত বা বার্মা থেকে কোন গরু আসবে না। তাই বুকে স্বপ্ন বেঁধে রেখেছি।”
আরেক খামারি রহিম তালুকদার বলেন, “আমার খামারে ৩৫টি গরু রয়েছে। সারাবছর ৪-৬ জন মিলে পশুগুলোকে পরম যত্নে বড় করে তুলেছি। এবার নায্য দাম না পেলে পথে বসে যেতে হবে। ব্যাংক ঋণে গরু খামার করেছি। আশা করছি, এবার সব দেনা পরিশোধ করতে পারবো।”
মাদারীপুর জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. সুবোধ কুমার দাস জানান, “জেলা ও উপজেলার কর্মকর্তারা খামারিদের সার্বক্ষণিক পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছেন যাতে প্রাকৃতিক উপায়ে পশুগুলো বেড়ে উঠতে পারে। পুষ্টিকর দানাদার খাবার খাওয়ার কারণে কোন ওষুধ বা ইনজেকশনের প্রয়োজন হচ্ছে না। আশা করা হচ্ছে এবারের হাটে খামারিরা তাদের কাঙ্খিত দাম পাবেন।”
মারিয়া