
ছবি: দৈনিক জনকন্ঠ।
মুসলিম উম্মাহর জন্য কুরবানি করা মহান আল্লাহর নির্দেশ ও গুরুত্বপূর্ণ ধর্মীয় উৎসব বা আত্মত্যাগের অনন্য ইবাদত পবিত্র ঈদুল আযহা। আত্মত্যাগ ও মানবতার বার্তা নিয়ে প্রতিবছরই মুসলিম উম্মাহর সামনে হাজির হয় এ উৎসব।
ধর্মীয় এ উৎসবকে কেন্দ্র করে চাটমোহরের কামারশালাগুলোতে টুং টাং শব্দেই যেন জানান দিচ্ছে আর কদিন পরেই ঈদুল আযহা। কোরবানির পশু জবাই ও মাংস তৈরি করতে ছুরি, চাপাতি, দা, বঁটি অত্যাবশ্যকীয়। সেগুলো সংগ্রহ ও প্রস্তুত রাখতে এখন সবাই ব্যস্ত। আর এর উপকরণ তৈরি ও শান বা লবণপানি দেয়াড় কাজে প্রয়োজন কামারদের।
নির্মাণ শিল্পের প্রসারের কারণে লোহার ব্যবহার বৃদ্ধি পাওয়ায় বেড়ে গেছে কামারের প্রধান কাঁচামাল লোহার দাম। তা ছাড়া কয়লাও আর সচরাচর নেই, বেড়েছে শ্রমের মজুরি ও জীবনযাপনের ব্যয়। সব মিলিয়ে লোহার সরঞ্জাম তৈরি ও মেরামতের মজুরিও গেছে বেড়ে। অপর দিকে বাহারি ডিজাইনের কারখানায় তৈরি যন্ত্রের প্রভাব পড়েছে স্থানীয় বাজারে। ফলে ঈদকে সামনের রেখে মাসাধিককালের ব্যস্ততাই কামার শিল্পীদের সারা বছরের প্রধান অবলম্বন। ঐতিহ্যবাহী কামার শিল্প প্রয়োজনীয় উপকরণের অভাব, আর্থিক সংকটসহ নানা কারণে হারিয়ে যেতে বসেছে এ শিল্প বলে জানান কামাররা।
পশু কোরবানির দা, ছুরি ও চাপাতিসহ প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম কিনতে এখন থেকেই মানুষ কামারপাড়ায় ভিড় জমাচ্ছে। আবার কেউ কেউ পুরানো সরঞ্জাম মেরামত অথবা শান দিয়ে নিচ্ছেন।
শান দেয়া নতুন দা, বঁটি, ছুরি ও চাকু সাজিয়ে রাখা হয়েছে দোকানের সামনে, কাজ চলছে ভিতরে। দোকানের জ্বলন্ত আগুনের তাপে শরীর থেকে ঝরছে অবিরাম ঘাম। চোখে-মুখে প্রচণ্ড ক্লান্তির ছাপ, তবু থেমে নেই তারা। প্রতিদিন সকাল থেকে রাত অবধি চলছে কাজের ব্যস্ততা।
হান্ডিয়াল বাজারের কামার সুলতান মাহমুদ বলেন, “এটা আমাদের পৈতৃক পেশা, আমি ছোটকাল থেকেই এই কাজ করছি। ঈদকে সামনে রেখে পাইকারি দোকানদার ও খুচরা ক্রেতাদের কাছে এই সময়ে আমাদের কদর বেশ ভালোই থাকে। তবে অন্যান্য বছরের চেয়ে কাজের চাপ একটু বেশি, কারণ এখন এলাকায় ধান কাটা মৌসুম চলছে। কৃষকের কাঁচি বানানো, ধারকাটা নিয়েও ব্যস্ত আছি। তারপর চলছে কুরবানির ঈদ মৌসুম। দিন যতই যাচ্ছে কাজের চাহিদা ততই বাড়ছে।”
উপজেলার সমাজ বাজারের লালন মিয়া জানান, বছরের অন্য দিনগুলোতে তেমন কাজ থাকে না। কিন্তু কোরবানির ঈদ এলে কাজের চাপ বেড়ে যায়। ঈদের সামনে দিন-রাত কাজ করেও অবসর পাওয়া যায় না।
কারিগররা আরো জানান, কাঁচা-পাকা লোহা দিয়ে তৈরি করা হয় ধাতব যন্ত্রপাতি। তবে পাকা লোহার দা-ছুরির চাহিদা সবসময়ই বেশি থাকে এবং বেশি দামে বিক্রি হয়ে থাকে। দা আকৃতি ও লোহাভেদে ২০০ থেকে ৫০০ টাকা, ছুরি ১০০ থেকে ৫০০ টাকা, চাকু প্রতিটি সর্বোচ্চ ১০০ থেকে ১৫০ টাকা, হাড় কোপানোর চাপাতি প্রতিটি ৫০০ থেকে ১০০০ টাকা এবং পুরানো দা, বটি, ছুড়ি শান দিতে বা লবণপানি দিতে ৫০ টাকা থেকে ১০০ টাকা পর্যন্ত নেয়া হয়।
এ পেশার মানুষ সারাবছর কমবেশি লোহার কাজ করলেও ঈদুল আযহা সামনে রেখে বৃদ্ধি পায় তাদের কর্ম ব্যস্ততা। ভোর থেকে শুরু করে রাত অবধি চলছে তাদের রকমারি কর্মযজ্ঞ।
ঈদুল-আযহা সামনে রেখে চাটমোহর উপজেলার কামার দোকানগুলিতে ব্যস্ত সময় পার করছে কামাররা। এ উপজেলায় ১টি পৌরসভাসহ ১১টি ইউনিয়ন রয়েছে। এলাকার প্রতিটি বাজারেই আছে কামারের দোকান।
মিরাজ খান