ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ৩১ মে ২০২৫, ১৭ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

বিদ্যালয়-শিক্ষক সবই আছে, নেই শিক্ষার্থী!

নিজস্ব সংবাদদাতা, ইসলামপুর জামালপুর

প্রকাশিত: ১২:৫৯, ৩০ মে ২০২৫

বিদ্যালয়-শিক্ষক সবই আছে, নেই শিক্ষার্থী!

ছবি : জনকণ্ঠ

বিদ্যালয়ের কাগজ-কলমে শিক্ষার্থী থাকলেও বাস্তবে নেই। প্রতিটি শ্রেণিকক্ষে শূন্য শিক্ষার্থী। তবুও ৬ জন শিক্ষক নিয়মিত বেতন-ভাতা তুলছেন। আর স্কুল মাঠ যেন গোচারণভূমিতে পরিণত হয়েছে।

এমনই চিত্র দেখা গেছে জামালপুরের ইসলামপুর উপজেলার গাইবান্ধা ইউনিয়নের চরদাদনা পূর্বপাড়া মিয়া উল্লা দেওয়ানী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। সরেজমিন বুধবার (২৮ মে) দুপুরে অনুসন্ধানে এমনই চিত্র উঠে আসে। স্কুলের শিক্ষক ও সংশ্লিষ্টদের উদাসীনতায় এমন চিত্র বলে অভিযোগ করেছেন অভিভাবক ও স্থানীয়রা।

এ সময় দেখা যায়, অফিস ও শ্রেণিকক্ষ অগোছালো ও অপরিষ্কার। প্রবেশ করেই দেখা গেল স্কুলে সুনসান নীরবতা। নেই শিক্ষার্থীদের কোনো কোলাহল। স্কুলসংলগ্ন প্রধান শিক্ষক ও সহকারী শিক্ষক ভাই-বোনদের বাড়ি হওয়ায় তিনজন তিনদিক থেকে ছুটে আসেন। স্কুলের ভেতরে প্রবেশ করে দেখা গেল তৃতীয়, চতুর্থ, পঞ্চম শ্রেণির ক্লাসরুম শূন্য।

তবে আমাদের উপস্থিতি বুঝতে পেরে স্কুলের শিক্ষকরা তাড়াহুড়া করে শিক্ষার্থী হাজিরা খাতায় উপস্থিতি লিখে দেন।

এলাকাবাসী জানান, বিদ্যালয়ে শিক্ষক ভাই-বোনদের প্রকাশ্যে হাতাহাতি হওয়ায় দীর্ঘদিন থেকে শিক্ষকদের মতবিনিময় ও কথাবার্তা হয় না। বিদ্যালয়ের প্রায় ২ লাখ টাকা মূল্যের গাছগুলো নষ্ট হচ্ছে—এর কোনো প্রতিকার শিক্ষকদের নেই। শিক্ষক ভাই-বোনদের দ্বারা প্রতিষ্ঠানটি মরুভূমিতে পরিণত হচ্ছে। শিক্ষকদের এলাকায় ছাত্রছাত্রীদের বিদ্যালয়ে ভর্তি করানোর আগ্রহ না থাকায় শিক্ষার্থীরা অন্য বিদ্যালয়ে ভর্তি হয়ে লেখাপড়া করছে।

এছাড়াও প্রতি বছর স্লিপের টাকা আত্মসাৎ ও দায়িত্বে অবহেলাসহ প্রতিষ্ঠানের নাজুক অবস্থার জন্য দায়িত্বপ্রাপ্ত সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তা আঃ গফুর প্রধানের অবহেলাকেও দায়ী করেন এলাকাবাসী।

বিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, ১৯৯২ সালে প্রতিষ্ঠিত বিদ্যালয়টি ২০১৩ সালে এমপিওভুক্ত হয়। প্রাক-প্রাথমিক থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত কাগজ-কলমে শিক্ষার্থী সংখ্যা ৫০ জন ও শিক্ষক ৬ জন। কিন্তু বাস্তবে এর চিত্র ভিন্ন। সকাল ৯টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত প্রাক-প্রাথমিক ও দ্বিতীয় শ্রেণির ক্লাস এবং ১২টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত তৃতীয়-পঞ্চম শ্রেণির ক্লাস হয়। স্কুল কাগজ-কলমে উপস্থিতি শতভাগ থাকলেও বাস্তবে উপস্থিতি শূন্য।

প্রধান শিক্ষক ও সহকারী শিক্ষক—তিন ভাই-বোনের দ্বারা পরিচালিত বিদ্যালয়ের পাশেই তাদের বসতবাড়ি হওয়ায় শিক্ষার্থী নেই অজুহাতে প্রায়ই স্কুলে অনুপস্থিত থাকেন।

প্রধান শিক্ষক হারুনূর রশিদ জনকণ্ঠকে বলেন, এক কিলোমিটারের মধ্যে তিনটি বিদ্যালয় ও কওমি মাদরাসা হওয়ায় ছাত্রছাত্রী কমে গেছে। এছাড়াও রাস্তাঘাট পাকা হওয়ায় অনেকেই সদরে কিন্ডারগার্টেনে লেখাপড়া করার কারণে এ বছর সমস্যাটা বেশি হয়েছে। তবে তিনি স্লিপের টাকার বিষয়ে কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি।

সহকারী উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা গফুর প্রধান জনকণ্ঠকে বলেন, আমাদের অফিসে লোকবল কম। দাপ্তরিক কাজসহ প্রায় ৯০টা স্কুল দেখতে হয়। এখনো ওই স্কুল পরিদর্শন করতে পারিনি।

উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা জাহানারা খাতুন জনকণ্ঠকে বলেন, বিষয়টি আপনার মাধ্যমে জানলাম। সরেজমিনে তদন্ত করে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করব।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. তৌহিদুর রহমান জনকণ্ঠকে বলেন, ওই বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের নানা অনিয়ম ও বিশৃঙ্খলার বিষয়টি জানলাম। ঘটনা সঠিক হলে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

সানজানা

×