ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ৩০ মে ২০২৫, ১৬ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

কর্তৃপক্ষের উদাসীনতায় স্বাস্থ্যসেবা থেকে বঞ্চিত এলাকাবাসী!

মোঃ সুজা উদ্দিন, কন্ট্রিবিউটিং রিপোর্টার, রংপুর

প্রকাশিত: ০৯:০০, ২৯ মে ২০২৫

কর্তৃপক্ষের উদাসীনতায় স্বাস্থ্যসেবা থেকে বঞ্চিত এলাকাবাসী!

ছবি: সংগৃহীত

রংপুরের মিঠাপুকুর উপজেলার যমুনেশ্বরী নদীর তীরবর্তী ১১নং বড়বালা ইউনিয়নের "বড়বালা উপ-স্বাস্থ্যকেন্দ্রটি" একসময় গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর স্বাস্থ্যসেবার ভরসাস্থল হওয়ার কথা থাকলেও, বর্তমানে তা মাদকসেবীদের আড্ডাখানা ও দখলদারদের আখড়ায় পরিণত হয়েছে। বিনামূল্যে স্বাস্থ্যসেবা, ওষুধ ও পরামর্শ দেওয়ার লক্ষ্যে ১০ শয্যাবিশিষ্ট এই হাসপাতালটি তৎকালীন সাংসদ শাহ মোঃ সোলায়মান আলম ফকির উদ্বোধন করেছিলেন। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য, এখানে কখনোই কোনো মূল চিকিৎসা কার্যক্রম পরিচালিত হয়নি।

চিকিৎসক-কর্মচারী আছে, সেবা নেই:
উপ-স্বাস্থ্যকেন্দ্রে চিকিৎসক, সহকারী ও ফার্মাসিস্ট নিয়োগ দেওয়া থাকলেও হাসপাতালের মূল ফটকে সবসময় তালা ঝুলে থাকে। ভাঙা জানালার ফাঁক দিয়ে উঁকি দিলে দেখা যায় ময়লার স্তূপ আর অব্যবহৃত আসবাবপত্র। স্থানীয়রা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, তারা এই স্বাস্থ্যকেন্দ্র থেকে কখনোই কোনো সেবা পাননি। চিকিৎসক ও অন্যান্য কর্মচারী নিয়োগ থাকার পরও স্বাস্থ্যসেবা কার্যক্রম বন্ধ থাকায় এলাকাবাসী চরম ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন।

মাদক সিন্ডিকেট ও মাদকসেবীদের আড্ডাখানা:
সেবা কার্যক্রম না থাকার সুযোগে স্বাস্থ্যকেন্দ্রটি এখন মাদক সিন্ডিকেট ও মাদকসেবীদের অবাধ বিচরণভূমিতে পরিণত হয়েছে। দিনের বেলায় যেমন, রাতের আঁধারেও এখানে মাদকের কারবার চলে এবং মাদকসেবীরা নিশ্চিন্তে আড্ডা জমায়। এতে এলাকার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি হচ্ছে এবং স্থানীয় বাসিন্দারা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন।

জমি দখল করে গড়ে উঠেছে দোকান ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান:
হাসপাতালের মূল্যবান জমি দখল করে গড়ে উঠেছে কিছু দোকানপাট ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। ফলে একসময়ের হাসপাতালটির অস্তিত্ব প্রায় বিলীন হওয়ার পথে। স্থানীয় সচেতন মহল বারবার অভিযোগ করলেও দখলদারদের বিরুদ্ধে কোনো কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।

এলাকাবাসীর দাবি:
বড়বালার সচেতন মহল ও এলাকাবাসী দ্রুত এই উপ-স্বাস্থ্যকেন্দ্রটি পুনরায় চালু করার জোর দাবি জানিয়েছেন। তাদের মূল দাবিগুলো:

  • হাসপাতালটি অতি দ্রুত চালু করা এবং ২৪ ঘণ্টা রোগীদের চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করা।

  • দখলদারদের হাত থেকে হাসপাতালের বেহাত হওয়া জমি উদ্ধার করা।

  • চিকিৎসক ও কর্মচারীদের নিয়মিত উপস্থিতি নিশ্চিত করা এবং তাদের জবাবদিহিতার আওতায় আনা।

  • মাদক সিন্ডিকেট ও মাদকসেবীদের দৌরাত্ম্য বন্ধে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া।

মিঠাপুকুরের উপ-স্বাস্থ্যকেন্দ্রের চিত্র:
মিঠাপুকুর উপজেলার ১৭টি ইউনিয়নের মধ্যে বর্তমানে মাত্র ১১টিতে উপ-স্বাস্থ্যকেন্দ্র চালু রয়েছে। বাকি ৬টি ইউনিয়নে অবকাঠামো না থাকলেও চিকিৎসক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। এটি স্বাস্থ্যসেবার ক্ষেত্রে গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর বঞ্চনার একটি স্পষ্ট চিত্র তুলে ধরে।

বড়বালা উপ-স্বাস্থ্যকেন্দ্রের এই করুণ দশা কর্তৃপক্ষের চরম উদাসীনতার ফল। অবিলম্বে এই স্বাস্থ্যকেন্দ্রটি পুনরায় চালু করে এলাকাবাসীর স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করা এবং দখলদারদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া এখন সময়ের দাবি। অন্যথায়, স্বাস্থ্যসেবার নামে সরকারি অর্থ অপচয় এবং জনগণের ভোগান্তি বাড়তেই থাকবে।

মুমু

×