ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৯ মে ২০২৫, ১৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

আন্তর্জাতিক পুরস্কার বাড়িয়ে দিয়েছে বড়াল বিদ্যা নিকেতনের অগ্রগতি

হৃদয় হোসাইন, কন্ট্রিবিউটিং রিপোর্টার, পাবনা

প্রকাশিত: ১৬:৩১, ২৮ মে ২০২৫

আন্তর্জাতিক পুরস্কার বাড়িয়ে দিয়েছে বড়াল বিদ্যা নিকেতনের অগ্রগতি

ছবি : জনকণ্ঠ

সম্প্রতি গত বছর প্রত্যন্ত গ্রামের বড়াল বিদ্যা নিকেতন স্কুল নান্দনিকতা ও বুদ্ধিদীপ্ত স্থাপত্য নকশার জন্য আমেরিকান ইনস্টিটিউট অব আর্কিটেক্টস-এর পুরস্কার জিতেছে। পাবনা জেলার চাটমোহর উপজেলার বিলচলন ইউনিয়নের কুমারগাড়া গ্রামে ২০১৯ সালে প্রতিষ্ঠা করা হয় বড়াল বিদ্যা নিকেতন। ব্যক্তি মালিকানাধীন বেসরকারি বড়াল নদী পাড়ের স্কুলটি প্রতিষ্ঠার শুরুতেই বিভিন্ন আঙ্গিকে যাত্রা শুরু করে। এ যাত্রার মাত্র ৬ বছরের মাথায় স্থাপত্য নকশার জন্য আমেরিকান ইনস্টিটিউট অব আর্কিটেক্টস-এর পুরস্কার জিতেছে। এই প্রাপ্তি আরও ভালো কাজ করার দায়িত্ব বাড়িয়ে দিয়েছে। বিদ্যালয়ের শিক্ষায় এসেছে অগ্রগতি। প্রত্যন্ত এ গ্রামের বাসিন্দারা প্রতিনিয়ত দারিদ্র্যের সঙ্গে লড়াই করেই বাঁচে। তবে তাদের শিশুরা সুযোগ পেয়েছে পরিবেশবান্ধব স্কুলে শিক্ষা নিয়ে বেড়ে ওঠার। তাদের জন্য এ সুযোগ তৈরি করেছে ‘বড়াল বিদ্যা নিকেতন’। যার প্রধান শিক্ষিকার লক্ষ্য বছরে অন্তত পাঁচজন মানুষ এখান থেকে গড়ে তোলার। স্বল্প খরচে শুধু ব্যতিক্রমী পাঠদান নয়, এই বিদ্যালয়টি সাড়া ফেলেছে ঐতিহ্য আর আধুনিকতার নজরকাড়া স্থাপত্য শৈলীতেও। যার স্বীকৃতি হিসেবে শিশুদের এ স্কুলটি সম্প্রতি নান্দনিকতা ও বুদ্ধিদীপ্ত স্থাপত্য নকশার জন্য পুরস্কার জিতেছে। পুরস্কার পাওয়ার পর থেকে শিক্ষার্থীসহ স্কুলটির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সকলেই নিজেদের গর্বিত বলে মনে করছেন।

পরিবেশবান্ধব স্কুলটিতে ইট, কাঠ, বাঁশ ও মাটির তৈরি দোতলা ভবন রয়েছে। কাঠের কাজ, সঙ্গে আধুনিক প্রযুক্তি ও লোহার ব্যবহার, উন্নতমানের ইট, মাটি, বাঁশ—সবকিছুর সমন্বয়ে নির্মাণ করা হয়েছে স্কুলটি। মাটির ঘরে গড়ে তোলা হয়েছে পাঠাগার। শুধু নির্মাণশৈলীই নয়, সেখানে হাসি-আনন্দ, নাচ, গান আর খেলার মাধ্যমে শিশুরা শিখছে পড়াশোনা। দোতলা স্কুলের নিচতলায় খোলা বারান্দায় বাঁশের চাটাইয়ে ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে শিক্ষামূলক নানা চিত্রাঙ্কন। বিদ্যালয়ের উঠোন জুড়ে আছে শান্তিনিকেতনের আদলে তিনটি আমগাছ। আরও আছে গুপ্তধনের রহস্যময় গুহার মতো মাটির তৈরি আকর্ষণীয় এক লাইব্রেরি। শ্রেণিকক্ষ থেকেই রোদ, বৃষ্টি উপভোগের সুযোগ পাচ্ছে শিক্ষার্থীরা। বাইরে খোলামেলা ও পরিবেশবান্ধব আবহে ইটের গাঁথুনি ও দেয়ালের নকশায় রয়েছে পর্যাপ্ত আলো প্রবেশের ব্যবস্থা।

স্কুলটির স্থাপত্য নকশাকার স্থপতি ইকবাল হাবিব। সবশেষ স্থাপত্য নকশায় স্কুলটি দুটি বিভাগে আন্তর্জাতিক পুরস্কার অর্জন করে। স্বল্প বেতনের নান্দনিক স্থাপত্যে রূপ নেওয়া স্কুলে ব্যাপক আগ্রহ নিয়ে নিয়মিত আসে শিক্ষার্থীরা। গ্রামের পিছিয়ে পড়া অবহেলিত জনগোষ্ঠীর মাঝে স্কুলটি শিক্ষার আলো ছড়াচ্ছে। সচেতন ব্যক্তিদের মন্তব্য, স্কুলটি ওই এলাকায় শিক্ষা-পরিবেশ চেতনায় বৈপ্লবিক পরিবর্তন এনেছে। অবশ্যই অনেক প্রশংসার দাবিদার। অনগ্রসর শিশুদের জন্য এ ধরনের বিদ্যালয় দরকার।

স্কুলটির উদ্যোক্তা সমাজসেবক মিজানুর রহমান ও দিল আফরোজ দম্পতি। যারা দখল ও দূষণে মৃতপ্রায় বড়াল নদী রক্ষা আন্দোলনের অংশ হিসেবে শিশুদের পরিবেশ সচেতন করতে গিয়ে নিজ পরিবারের জমি ও অর্থায়নে স্কুলটি প্রতিষ্ঠা করেন। কিশোর বয়স থেকেই শিশুদের প্রকৃতিপ্রেমী ও পরিবেশবান্ধব হিসেবে গড়ে তোলার ভাবনা থেকেই এমন প্রচেষ্টা। পরিবেশবান্ধব ও মানবিক মানুষ তৈরির জন্য এটি প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে।

মিজানুর রহমান বলেন, বর্তমানে স্কুলে ৩৮০ জন শিক্ষার্থী রয়েছে। শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করার জন্য প্রতি শনিবার স্বাস্থ্যসেবা ক্যাম্প বসে। কার্ড করা আছে—এখানে তারা চিকিৎসা গ্রহণ করে। ২ জন মহিলা ডাক্তার আসেন চিকিৎসা দেওয়ার জন্য। একশত টাকার বিনিময়ে কার্ড করা হয়—যতদিন এ স্কুলের ছাত্র থাকবে, ততদিন চিকিৎসা পাবে। আমাদের আরও নতুন নতুন পরিকল্পনা রয়েছে, যা খুব তারাতারি বাস্তবায়িত হবে।

সানজানা

×