ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ১৭ মে ২০২৫, ৩ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

‘বিচারব্যবস্থাকে ধর্মের মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে দেওয়া হয়েছে’

প্রকাশিত: ২২:০৭, ১৬ মে ২০২৫

‘বিচারব্যবস্থাকে ধর্মের মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে দেওয়া হয়েছে’

বিচারব্যবস্থাকে ধর্মের মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে দেওয়া হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন গবেষক ও লেখক ইফতেখার জামিল।

বৃহস্পতিবার (১৫ মে) রাজধানীর বাংলামটরে বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রে সিটিজেন ইনিশিয়েটিভ আয়োজিত “নারীনীতিঃ সেকুলারিজম, পুরুষতন্ত্র এবং অন্যান্য” শীর্ষক এক সেমিনার তিনি এ মন্তব্য করেন।

ইফতেখার জামিল বলেন, হিন্দু, বৌদ্ধ ও মুসলিম ধর্মাবলম্বীদের নিজস্ব ওয়ার্ল্ডভিউ অনুযায়ী সিদ্ধান্ত নেওয়ার সুযোগ থাকা উচিত। তিনি প্রশ্ন তোলেন, “নারীনীতি কি সিঙ্গুলার সিস্টেমে থাকবে, নাকি বহুবিধ ধর্মীয় আইনের সম্মিলিত প্লুরাল সিস্টেমে?” পাশাপাশি তিনি মালয়েশিয়ার শরীয়াহ আদালতের উদাহরণ তুলে ধরেন এবং বাংলাদেশে তার প্রাসঙ্গিকতা নিয়ে ভাবনার আহ্বান জানান।

নারী সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদন সমালোচনা করে লেখক ও শিক্ষাবিদ ড. নাসিমা খাতুন বলেন, “পুরুষের ক্ষমতা ভেঙে গড়ো সমতা” ও “শরীর আমার, সিদ্ধান্ত আমার”—এই ধরনের স্লোগান নারী-পুরুষকে পরস্পরের প্রতিপক্ষ হিসেবে দাঁড় করায়। বিশেষ করে স্লোগানের সাথে গর্ভপাতের সম্পর্ক রয়েছে যা সমাজের ধর্মীয় ও নৈতিক মূল্যবোধের সাথে সাংঘর্ষিক বলেও তিনি মত প্রকাশ করেন।

বাংলাদেশ নারীমুক্তি কেন্দ্রের সভাপতি সীমা দত্ত বলেন, “হিন্দু নারীরা সম্পত্তিতে বঞ্চিত হন, মুসলিম নারীরাও আংশিক অধিকার পান—তাই মানবিক অধিকারের ভিত্তিতে একটি ঐচ্ছিক অভিন্ন পারিবারিক আইন জরুরি।”

তিনি বলেন, যারা ধর্মীয় আইন মানতে চান না, তারা এই আইন অনুসরণ করতে পারবেন। ধর্মীয় গণ্ডি পেরিয়ে আলোচনার মাধ্যমে সমস্যাগুলোর সমাধান হওয়া উচিত বলে তিনি মত দেন।

তিনি আরও বলেন, “নারী সমাজে দুইভাবে শোষিত—একদিকে পুঁজিবাদী কাঠামো, অন্যদিকে নারী হিসেবে।” এছাড়া, তিনি ধর্মীয় নেতা কর্তৃক নারীদের অবমাননাকর মন্তব্যের প্রতিবাদ জানান।

কাতারের হামাদ বিন খলিফা ইউনিভার্সিটির গ্র্যাজুয়েট স্টুডেন্ট মোহাম্মদ ইশরাক বলেন, “অভিন্ন পারিবারিক আইনকে ঐচ্ছিক রাখা হয়েছে, কিন্তু এতে দুই ভাই-বোনের মধ্যে সম্পত্তি ভাগাভাগি নিয়ে দ্বন্দ্ব তৈরি হতে পারে, যেহেতু একজন বলতে পারে মুসলিম লয়ের কথা আবার অন্যজন সেকুলার লয়ের কথা।”

তিনি বলেন, দেনমোহর বিয়ের আগেই পরিশোধের প্রস্তাব ধর্মীয় আইনে হস্তক্ষেপের শামিল এবং সেকুলার রাষ্ট্রে এ ধরনের হস্তক্ষেপ প্রশ্নবিদ্ধ। সন্তানের লালন-পালনে মান নিয়ন্ত্রনে ব্যর্থ হলে রাষ্ট্রের হস্তক্ষেপকে তিনি ব্যক্তি স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ হিসেবে চিহ্নিত করেন। 

তিনি আরও বলেন, “পর্দানশীল নারীরা নিজেরা প্রকাশ্যে না আসতে চান না, বরং তাদের দাবি পুরুষদের মাধ্যমেই তুলে ধরতে চান—এটি নারীবাদের আলোকে নতুনভাবে বিশ্লেষণ করা প্রয়োজন।”

অনুষ্ঠানে অন্যান্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ নারী মুক্তি কেন্দ্রের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট নিলুফার ইয়াসমিন শিল্পী ও সিটিজেন ইনিশিয়েটিভের কো-ফাউন্ডার মো. তালহা ।

সেমিনারটির ধারনাপত্র পাঠ ও পরিচালনা করেন ইনডিপেন্ডেন্ট ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশের অর্থনীতি বিভাগের সিনিয়র লেকচারার ও নারী অধিকারকর্মী নূরেন নির্ভানা বৃষ্টি।

সেমিনারটি ধর্ম, আইনি সংস্কার ও নারীর সামাজিক অবস্থান নিয়ে নতুন বিতর্ক ও আলোচনার ক্ষেত্র উন্মোচন করেছে।

সম্প্রতি প্রকাশিত নারী সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদন ঘিরে আয়োজিত এই আলোচনা সভায় সমাজের বিভিন্ন ধারার বিশেষজ্ঞ ও নারী অধিকার কর্মীরা অংশগ্রহণ করেন।

সজিব

×