ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ১৮ মে ২০২৫, ৪ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

শ্যামনগরের পথে পথে কৃষ্ণচূড়া, নীরবেই বলে যায় টিকে থাকার গল্প

এবিএম কাইয়ুম রাজ, শ্যামনগর, সাতক্ষীরা

প্রকাশিত: ১৫:৪৫, ১৬ মে ২০২৫

শ্যামনগরের পথে পথে কৃষ্ণচূড়া, নীরবেই বলে যায় টিকে থাকার গল্প

ছবি: দৈনিক জনকন্ঠ

বৈশাখের তপ্ত দুপুরে উপকূলের লবণাক্ত বাতাস যখন প্রকৃতিকে রুক্ষ করে তোলে, তখন শ্যামনগরের গাঁ-গঞ্জ, মাঠ-ঘাট জুড়ে কৃষ্ণচূড়ার লাল ফুল যেন এক রঙিন বিপ্লবের আভাস দেয়। এই লাল-কমলা রঙের আগুনঝরা ফুল শুধু গাছের সৌন্দর্য নয়, উপকূলবাসীর জন্য এক প্রাকৃতিক প্রতিরোধ ও আশাবাদের প্রতীক।

শ্যামনগর উপজেলার বিস্তীর্ণ এলাকাজুড়ে রয়েছে নদী, খাল-বিল ও জলাভূমি। কোথাও মিঠে পানি, কোথাও সম্পূর্ণ লোনা। লবণাক্ত কাদামাটির কারণে কৃষিকাজ কঠিন, তবুও প্রকৃতি এখানে থেমে নেই। বর্ষা-রোদের ছায়াছবিতে কৃষ্ণচূড়া তার ডালপালায় আঁকে জীবনের রঙিন ক্যানভাস। বৈশাখ-জ্যৈষ্ঠে এই গাছ ফুলে ফুলে ভরে ওঠে, নতুন চাষের প্রস্তুতির সময়ে আশাবাদের বার্তা নিয়ে আসে। স্থানীয়রা একে বলেন, ভালো সময়ের বার্তাবাহক।

রমজাননগর, মুন্সিগঞ্জ, কৈখালী, গাবুরা ও ইশ্বরীপুরের পথঘাটে ছড়িয়ে থাকা কৃষ্ণচূড়াগুলো গ্রামের নারীদের চোখে স্বপ্নের মতো লাগে। স্থানীয় শিক্ষক ও পরিবেশকর্মী মশিউর রহমান জানান, “এই অঞ্চলে অনেক গাছ টিকে না, কিন্তু কৃষ্ণচূড়া লোনা জল ও ঝড়ের মাঝেও বারবার ফিরে আসে। এটি প্রকৃতির সঙ্গে লড়াইয়ের এক নিঃশব্দ প্রতীক।”

সুন্দরবনের সান্নিধ্যে থাকা শ্যামনগরের প্রকৃতি বৈচিত্র্যময় হলেও শিল্পায়নের অভাব, নদীভাঙন ও জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে পরিবেশের ভারসাম্য হুমকির মুখে। এই বাস্তবতায় কৃষ্ণচূড়ার উপস্থিতি এক নীরব প্রতিরোধের বার্তা দেয়।

এ ফুল শুধু দৃষ্টিনন্দন নয়, মৌমাছি ও প্রজাপতির মতো পরাগবাহীদের আকৃষ্ট করে পরিবেশের জৈব বৈচিত্র্য রক্ষায় ভূমিকা রাখে। পরিবেশবিদরা মনে করেন, কৃষ্ণচূড়ার মতো সহনশীল গাছ উপকূলীয় অঞ্চলে পরিবেশ রক্ষায় কার্যকর হতে পারে।

লাল-কমলা এই ফুলের নিচে দাঁড়ালে রোদ, বাতাস আর জীবনসংগ্রামের বাস্তবতা যেন একসাথে অনুভূত হয়। শ্যামনগরের কৃষ্ণচূড়া তাই কেবল একটি ফুল নয়, বরং উপকূলের জীবনসংগ্রামের এক অনন্য রঙিন প্রতিচ্ছবি।

মিরাজ খান

×