
ছবি: সংগৃহীত
আমতলী উপজেলা ভ্রাম্যমাণ আদালতের বিচারক সহকারী কমিশনার (ভুমি) তারেক হাসান ও সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা তন্ময় কুমার দাশের বিরুদ্ধে অবৈধভাবে পায়রা নদীর ইলিশ মাছ জব্দ করে আত্মসাত করেছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। তালতলীর তেতুঁলবাড়িয়া এলাকার ব্যবসায়ী সেলিম মাতুব্বর বরগুনা জেলা প্রশাসকের কাছে এমন অভিযোগ দিয়েছেন।
এর আগে বুধবার রাত সাড়ে ১১ টার দিকে আমতলী বটতলা বাস স্ট্যান্ড থেকে মিজান ও ইসলাম নামের দুই পরিবহন বাস থেকে ১৫ মণ সামদ্রিক মাছ ভ্রাম্যমাণ আদালতের নির্বাহী ম্যাজিষ্টেট তারেক হাসান জব্দ করেন। পরে তিনি পরিবহনের দুই সুপার ভাইজার জাহিদ মীর ও মনির গাজীকে ৬ হাজার টাকা অর্থদন্ড করেছেন এবং জব্দকৃত মাছ এতিমখানার বিতরণ করে দেন। জানা গেছে, ১৫ এপ্রিল থেকে ১১ জুন ৫৮ দিন সাগরে সকল ধরনের মাছ শিকার, পর্হিন ও সংরক্ষণ নিষিদ্ধ করেছেন সরকার। কিন্তু সরকারী নির্দেশনা উপেক্ষা করে তালতলী উপজেলার ফকিরহাট এলাকার অসাধু ব্যবসায়ী ও জেলেরা উপজেলার মৎস্য বিভাগকে ম্যানেজ করে সাগরে মাছ শিকার করে আসছেন।
বুধবার রাতে ফকিরহাটের জেলেদের শিকার করা সামদ্রিক মাছ মিজান ও ইসলাম নামের দুটি পরিবহনে ঢাকায় নিয়ে যাচ্ছিল। খবর পেয়ে আমতলী উপজেলা ভ্রাম্যমাণ আদালতের নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট সহকারী কমিশনার (ভুমি) তারেক হাসান ও সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা তন্ময় কুমার দাশ, মেরিন ফিসারিজ অফিসার অলিউল রহমান ওই পরিবহন বাস দুটি আমতলী বাসস্ট্যান্ডে আটক করে এবং বাসে থাকা ১৫ মণ সামদ্রিক মাছ তারা জব্দ করেন। পরে আমতলী উপজেলা ভ্রাম্যমাণ আদালতের নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট তারেক হাসান পরিবহন বাস দুটির সুপার ভাইজার জাহিদ মীর ও মনির গাজীকে ৩ হাজার টাকা করে ছয় হাজার টাকা অর্থদণ্ড করেছেন। একই সঙ্গে তিনি জব্দকৃত মাছ উপজেলা মৎস্য অফিসে এনে ৩৭ টি এতিম খানায় বিতরন করে দেন। অভিযোগ রয়েছে ভ্রাম্যমাণ আদালতের নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট চলে যাওয়ার পরে উপজেলা মৎস্য অফিসে লুকিয়ে রাখা মাছ পৌর বিএনপি’র যুগ্ম আহবায়ক রুহুল আমিন টিপুসহ বিএনপি’র কিছু নেতা-কর্মী নিয়ে গেছেন এমন অভিযোগ প্রত্যক্ষদর্শীদের। মাছ নিয়ে লুকোচুরির একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে।
এদিকে তালতলীর তেতুঁলবাড়িয়া এলাকার সেলিম মাতুব্বর নামের এক ব্যবসায়ী অভিযোগ করেছেন বৈধভাবে পায়রা নদীর আহরণকৃত ইলিশ মাছ পরিবহন গাড়ী থেকে আমতলী উপজেলা ভ্রাম্যমাণ আদালতের বিচারক সহকারী কমিশনার (ভুমি) তারেক হাসান এবং উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা তন্ময় কুমার দাশ জব্দ করেছেন। খবর পেয়ে ব্যবসায়ীরা ঘটনাস্থলে গেলে সহকারী কমিশনারের পক্ষ নিয়ে কিছু দুষ্কৃতিকারী তাদের ওপর হামলা চালায় এবং জসিম উদ্দিন নামের এক ব্যবসায়ীর পকেটে থাকা নগদ ২০ হাজার টাকা এবং ২৫ হাজার টাকা দামের মোবাইল ফোন নিয়ে যায়।
ব্যবসায়ী সেলিম আরো অভিযোগ করেন, লোক দেখানো কিছু মাছ বিতরন করলেও বাকী মাছ তারা আত্মসাৎ করেছেন। ব্যবসায়ী সেলিম ক্ষতিপুরণ দাবী করে বৃহস্পতিবার বিকেলে বরগুনা জেলা প্রশাসকের কাছে অভিযোগ দিয়েছেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন বলেন, ভ্রাম্যমাণ আদালতের নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট চলে যাওয়ার পর পৌর বিএনপির যুগ্ম আহবায়ক রুহুল আমিন টিপুসহ বেশ কয়েকজন বিএনপির নেতা ও মৎস্য অফিসের লোকজন লুকিয়ে রাখা ইলিশ মাছসহ বিভিন্ন প্রজাতির মাছ নিয়ে গেছেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক নারী বলেন, মাছের কথা শুনে মৎস্য অফিসে এসেছিলাম এবং অফিসে রাখা ইলিশ ও অন্যান্য মাছ আমি চেয়েছিলাম কিন্তু আমাকে দেয়নি। বিএনপির নেতা ও অফিসের লোকজন নিয়ে গেছে।
ব্যবসায়ী জসিম উদ্দিন বলেন, গাড়ী থেকে পায়রা নদীর আহরণকৃত ইলিশ মাছ জব্দ করা হয়েছে। আমি এর প্রতিবাদ করলে কয়েজকন এসে আমাকে মারধর করে এবং আমার পকেটে থাকা নগদ ২০ হাজার টাকা ও ২৫ হাজার টাকা দামের মোবাইল ফোন নিয়ে যায়। আমি এদের কাউকে চিনি না। আমতলী পৌর বিএপির যুগ্ম আহবায়ক রুহুল আমিন টিপুর মুঠোফোনে বারবার যোগাযোগ করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেনি।
আমতলী উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা তন্ময় কুমার দাশ বলেন, উপজেলা ভ্রাম্যমাণ আদালতের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট তারেক হাসান উপস্থিত থেকে মাছ ৩৭ টি এতিম খানার বিতরন করেছেন। এখানো কোন ধরনের অনিয়মের অভিযোগ আনার সুযোগ নেই। আমতলী উপজেলা ভ্রাম্যমাণ আদালতের নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট সহকারী কমিশনার তারেক হাসান বলেন, ব্যবসায়ীদের আনিত সকল অভিযোগ মিথ্যা। যথাযথ আইনী প্রক্রিয়া মেনেই মিজান ও ইসলাম নামের দুটি পরিবহন গাড়ীর সুপার ভাইজারের স্বীকারোক্তি মতে তিন হাজার টাকা করে ছয় হাজার টাকা অর্থদন্ড করা হয়েছে। তাদের স্বীকারোক্তি মোতাবেক সাগরের মাছ জব্দ করা হয়েছে এবং নদীর মাছ গাড়ীতে রেখে দেয়া হয়েছে। তিনি আরো বলেন, আমি উপস্থিত থেকে জব্দকৃত সামদ্রিক সমুদয় মাছ ৩৭ টি এতিম খানার বিতরন করে দিয়েছি। বরগুনা জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সফিউল আলম বলেন, এমন কোন অভিযোগ পাইনি। অভিযোগ পেলে তদন্ত করে দেখা হবে।
আসিফ