
ছবি: দৈনিক জনকন্ঠ
ঢাকার নবাবগঞ্জ উপজেলায় আধুনিক কৃষি প্রযুক্তির ‘সমলয় পদ্ধতি’ কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করছে। এই পদ্ধতিতে যন্ত্রের ব্যবহার বাড়িয়ে সময়, শ্রম ও খরচ কমিয়ে উৎপাদন বাড়ানো সম্ভব হচ্ছে। যা স্থানীয় কৃষকদের জন্য নতুন আশার আলো নিয়ে এসেছে।
সমলয় পদ্ধতি বা একই দিনে মেশিনের মাধ্যমে ধানের চারা রোপণ করা হয়। ধান কাটা উপযোগী হলে, মেশিনের মাধ্যমে একই সাথে ধান কর্তন ও মাড়াই করার সহজ পদ্ধতি। এতে প্রচলিত পদ্ধতির তুলনায় জল, সার ও শ্রমিকের খরচ কম লাগে, আবার ফলনও বেশি হয়। বিশেষ করে ব্রি ধান-৮৯ (বোরো মৌসুমের জন্য উন্নত জাত) চাষে এই প্রযুক্তি কার্যকর ভূমিকা রাখছে বলে কৃষি অধিদপ্তর জানিয়েছে।
এ বছর নবাবগঞ্জের কৈলাইল তেলেঙ্গা চকে ৫০ একর জমিতে সমলয় পদ্ধতিতে ধানের আবাদ করা হয়। স্থানীয় কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করতে উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর ২০২৪-২৫ অর্থবছরে কৃষি পুনর্বাসন সহায়তায় রবি মৌসুমে আধুনিক প্রযুক্তির মাধ্যমে বোরো ধান (ব্রিধান-৮৯) এর চারা রোপণ করা হয়েছিল।
গত সোমবার কম্বাইন্ড হারভেস্টার মেশিনের মাধ্যমে সমলয়ের ধান কর্তন উদ্বোধন করা হয়। এ পদ্ধতির সহায়তা পেয়ে কৃষকরা উৎফুল্লতা প্রকাশ করেন। আধুনিক কৃষি যন্ত্রপাতির ব্যবহারে একই দিনে ৫০ একর জমির ধান ঘরে তুলে বেজায় খুশি কৃষকরা।
কৃষক সিরাজ উদ্দিন বলেন, “প্রথমে আমি আধুনিক কৃষি প্রযুক্তির ব্যবহার সম্পর্কে অবহিত ছিলাম না। সমলয় পদ্ধতি আমার শ্রম, সময় ও টাকা তিনটি বাঁচিয়েছে। একই দিনে ধান কাটা, মাড়াই আর ধান বাড়িতে নিতে পেরেছি খুব ভাল লাগছে। ধন্যবাদ কৃষি অধিদপ্তরকে।”
কৃষক আক্তার হোসেন বলেন, “ধানের উৎপাদন ভালো হয়েছে। আমি অত্যন্ত খুশি। কোন ঝামেলা ছাড়া ধান বাড়িতে নিতে পেরে। সরকারি সহায়তা পেলে আগামীতে নিজ উদ্যোগে স্থানীয় কৃষকদের নিয়ে সমলয় পদ্ধতিতে ধান আবাদ করতে চাই।”
নবাবগঞ্জ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আছমা জাহান জানান, “এ বছর উপজেলায় ১০ হাজার ৮শত ৮৭ হেক্টর জমিতে ধানের আবাদ করা হয়। এর মধ্যে ব্রি-ধান ২৯ ও ৮৯ এর আবাদ বেশি হয়েছে। এ বছর অনুকূল পরিবেশ ও সঠিক পরিচর্যায় আশানুরূপ ধানের উৎপাদন হয়েছে। সারা উপজেলায় সরকারি সরকার ভর্তুকি মূল্যে ৪টি ও ব্যক্তিগত ভাবে ৪টি কম্বাইন্ড হারভেস্টার মেশিনের মাধ্যমে এ বছর ধান কাটা হচ্ছে। ইতিমধ্যে উপজেলার ৫০ শতাংশ ধান কর্তন সম্পন্ন হয়েছে। আগামী ১০ দিনের মধ্যে বাকি ধান কর্তন সম্পন্ন হবে বলে আশা করছি।”
নবাবগঞ্জের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা দিলরুবা ইসলাম বলেন, “যান্ত্রিকীকরণ ছাড়া কৃষির উন্নয়ন সম্ভব নয়। সমলয় পদ্ধতি কৃষকদের আয় ও উৎপাদনশীলতা দুই-ই বাড়াবে।”
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের জেলা প্রশিক্ষণ কর্মকর্তা মো: শফিকুর রহমান বলেন, “জমি কমছে তাই আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করেই কৃষিকে টিকিয়ে রাখতে হবে।” তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন, সমলয় পদ্ধতি দেশের অন্যান্য অঞ্চলেও ছড়িয়ে পড়বে।
মিরাজ খান