ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ০১ মে ২০২৫, ১৮ বৈশাখ ১৪৩২

পেটের যুদ্ধে বিজয় নেই, মে দিবসেও ঘুরে রিকশার চাকা

আল জুবায়ের, সিটি রিপোর্টার

প্রকাশিত: ১৬:০৬, ১ মে ২০২৫

পেটের যুদ্ধে বিজয় নেই, মে দিবসেও ঘুরে রিকশার চাকা

ছবি: জনকণ্ঠ

আজ মে দিবস। বিশ্বব্যাপী মে দিবসকে শ্রমিকদের অধিকার ও মর্যাদা প্রতিষ্ঠার দিন হিসেবে উদযাপন করা হয়। এই দিনে শ্রমিকরা নিজেদের কাজের মূল্যায়ন ও অধিকারের জন্য সংগ্রাম করেন। তবে, আমাদের দেশে এমন অনেক শ্রমজীবী মানুষ আছেন যারা এই দিনটির অর্থ পুরোপুরি বুঝতে পারেন না। তারা মে দিবসের উদযাপনে অংশ নেন না, কারণ তাদের জীবনের প্রতিটি দিনই সংগ্রামের। বিশেষ করে যারা শহরের রিকশাচালক, সিএনজিচালক, দিনমজুর তারা। তাদের জন্য এ দিনটি নতুন কিছু নয় বরং অন্যান্য দিনের মতোই একটি কর্মদিবস। 

আজ বৃহস্পতিবার (১ মে) ঢাকার রাস্তায় সকাল থেকেই হাজারো রিকশাচালক সক্রিয়ভাবে চলাচল করছেন, কিন্তু তাদের চোখে কোনো উৎসবের চিহ্ন নেই। শহরের বিভিন্ন এলাকায় লাল পতাকা, স্লোগান, মিছিল আর সভা-সমাবেশ কিন্তু পাড়ার অলি- গলিতে, ট্রাফিক সিগন্যালে ঘাম ঝরাচ্ছেন হাজারো রিকশাচালক। কেননা তাদের কাছে আজকের দিনটা আর পাঁচটা দিনের চেয়ে আলাদা কিছু নয়।

নিউমার্কেট ২ নম্বর গেটে দেখা মিলল শাহিন মিয়ার (৪৫)। ভোর ৬টা থেকেই রিকশা চালাচ্ছেন। প্রশ্ন করলে মৃদু হেসে বললেন, "কিসের মে দিবস? ঘরে চাল না থাকলে কেউ এসে দিবে না, পেটে ক্ষুধা থাকলে কেউ খাবার দিবে না ভাই। পোলাপাইন চোখে তাকায়। ছুটি করলে চাল কিনব কেমনে?”

পাশেই দাঁড়িয়ে ছিলেন তরুণ রিকশাচালক রাসেল (২৮)। বলেন, "ফেসবুকে দেখি সবাই মে দিবস নিয়ে পোস্ট দেয়। কিন্তু আমরা যারা রাস্তায় থাকি, আমাদের জন্য কি কোনোদিন কিছু বদলাবে?"

আরেক রিকশাচালক মোবারক রহমান (৫৫) বলেন, "আমার জীবনে অনেক মে দিবস দেখছি। প্রতি বছর বলে শ্রমিকের অধিকার। কিন্তু হাসপাতাল গেলে দামি ওষুধ কেনার টাকা থাকে না। এসব অধিকার কাগজেই ভালো লাগে।"

আরেক সিএনজি চালক রবি মিয়া (৪৮) বলেন, "পরিবারের সদস্য ৬ জন। যদি ভাড়া না মারি তাহলে কেমনে চলমু মামা কন! আমাগো মতো মানুষ না খেয়ে মরে গেলেও খোঁজ লইবেনা কেউ। এসব দিবস বড়লোকগো আমাগো না।"

এসব মানুষেরা বলছেন, এই কথাগুলো শুধু তাদের নয় - এটি এ দেশের হাজারো খেটে-খাওয়া রিকশাচালক ও শ্রমজীবী মানুষের মনের কথা। এ দিবস তাদের জীবনে একটুকু ছায়াও ফেলতে পারে না, যদি না তার পাতে ভাত জোটে, ঘরে ওষুধ থাকে, সন্তানের পড়াশোনার খরচ উঠে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, রাষ্ট্রের নীতিনির্ধারকরা যদি মাঠের এই বাস্তবতা না বোঝেন, তাহলে মে দিবস কেবল একদিনের প্রতীক হয়ে থাকবে। এটি শ্রমজীবী মানুষের জীবনে কোনো পরিবর্তন আনবে না।

উল্লেখ্য, আন্তর্জাতিক মে দিবস, যেটিকে বিশ্ব শ্রমিক দিবস নামেও ডাকা হয়, প্রতিবছর ১ মে তারিখে বিশ্বের নানা দেশে পালন করা হয়। এটি মূলত শ্রমজীবী মানুষের অধিকার আদায়ের ঐতিহাসিক সংগ্রামের প্রতীক।

১৮৮৬ সালের ১ মে, যুক্তরাষ্ট্রের শিকাগো শহরে শ্রমিকরা ৮ ঘন্টা কর্মদিবস নিশ্চিত করার দাবিতে আন্দোলনে নামে। সেই আন্দোলনে পুলিশের গুলিতে বেশ কয়েকজন শ্রমিক নিহত হন। এই রক্তাক্ত ঘটনার স্মরণে ১৮৮৯ সালে দ্বিতীয় আন্তর্জাতিক সমাজতান্ত্রিক কংগ্রেস প্যারিসে সিদ্ধান্ত নেয়—১ মে দিনটিকে আন্তর্জাতিক শ্রমিক দিবস হিসেবে পালনের জন্য। এরপর থেকেই বিশ্বের বিভিন্ন দেশে শ্রমিক সংগঠন, ট্রেড ইউনিয়ন, এবং সাধারণ জনগণ মে দিবসকে শ্রমিকদের অধিকার, সুরক্ষা, ন্যায্য মজুরি ও কাজের সুষ্ঠু পরিবেশ নিশ্চিত করার দাবিতে পালন করে আসছে।

বাংলাদেশে মে দিবস সরকারি ছুটির দিন হিসেবে পালন করা হয়। নানা শ্রমিক সংগঠন র‍্যালি, আলোচনা সভা, ও স্মরণানুষ্ঠানের মাধ্যমে এ দিনটিকে গুরুত্ব দিয়ে পালন করে থাকেন।

আবীর

×

শীর্ষ সংবাদ:

যেই সরকার জনগণের ভোটে নির্বাচিত হবে তারা জনগণের কাছে দায়বদ্ধ থাকবে: আমীর খসরু
জামায়াত নেতারা রাজাকার হলে পাকিস্তানে গাড়ি বাড়ি থাকতো : শামীম সাঈদী
এনসিপির সঙ্গে আমার ব্যক্তিগত সম্পৃক্ততা নেই- উমামা ফাতেমা
‘বাংলাদেশি’ সন্দেহে আটকদের অধিকাংশই ভারতীয় মুসলমান
ইয়েমেনে হামলা চালিয়েই সাগরে ডুবে গেল মার্কিন সর্বাধুনিক যুদ্ধবিমান
জামিন পেলেননা তারেক রহমানের খালাতো ভাই তুহিন
লন্ডনে আজ আর্সেনাল পিএসজি মহারণ
১৭ অভিনয়শিল্পীর নামে মামলা, তালিকায় আছেন নুসরাত ফারিয়া-অপু বিশ্বাস-ভাবনাসহ অনেকেই
১০০ টাকা মূল্যমানের প্রাইজবন্ডের ১১৯তম ড্র অনুষ্ঠিত হবে আগামীকাল
স্বর্ণের দাম, রেকর্ড উচ্চতা থেকে পতনের পথে
কুমিল্লায় পুলিশ-সেনাবাহিনীর চাকরির নামে প্রতারণা: দালালসহ ১৩ জন গ্রেফতার
১২ বছর বয়সী ছেলে শিক্ষার্থীকে বলাৎকারের অভিযোগে ৩ মাদ্রাসা শিক্ষক গ্রেফতার