
ছবি: জনকণ্ঠ
রাজশাহী ও চাঁপাইনবাবগঞ্জ দেশের ‘আমের রাজধানী’ হিসেবে পরিচিত। গোপালভোগ, হিমসাগর, ল্যাংড়া কিংবা আম্রপালি—নানা জাতের আমের ঘ্রাণে মৌসুম জুড়েই মাতোয়ারা থাকেন ফলপ্রেমীরা। তবে আম কিনতে গিয়ে ক্রেতাদের মধ্যে সবচেয়ে বড় প্রশ্ন থেকেই যায়—এই আম ফরমালিনমুক্ত তো?
এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতেই সাহসী এক উদ্যোগ নিয়েছেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের তরুণ শিক্ষার্থী ফরহাদ হোসেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের ম্যানেজমেন্ট স্টাডিজ বিভাগের চতুর্থ বর্ষে অধ্যয়নরত এই শিক্ষার্থী চট্টগ্রামের মীরসরাই উপজেলার হাইকান্দি ইউনিয়নের তুলাবাড়িয়া গ্রামের বাসিন্দা।
বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার পর নিজের খরচ চালাতে হিমশিম খেতে হয় ফরহাদকে। অষ্টম শ্রেণি থেকেই টিউশনের আয়ে চললেও রাজশাহীতে এসে সেই সুযোগ কমে যায়। তবে থেমে যাননি। বাবার ব্যবসায় ছোটবেলা থেকেই জড়িত থাকায় ব্যবসায়িক ধারণা ছিল কিছুটা। সেখান থেকেই মাথায় আসে একটি ভাবনা—রাজশাহীর ফরমালিনমুক্ত আম অনলাইনের মাধ্যমে সারা দেশে সরবরাহ করলে কেমন হয়?
ফেসবুক পোস্ট (https://www.facebook.com/forhadhossain.forhadhossain.1291) দিয়ে শুরু হয় তার যাত্রা। শুভাকাঙ্ক্ষী, শিক্ষক, বন্ধু সবার উৎসাহে তিনি হাত দেন অনলাইন বিক্রির কাজে। শুরুতেই পান ব্যাপক সাড়া।
ফরহাদ বলেন, “প্রথম বছরেই বুঝেছি, মানুষ বিশুদ্ধ ও নির্ভরযোগ্য ফল চায়। আমরা বাগান থেকে বাছাইকৃত আম সংগ্রহ করে সরাসরি ক্রেতাদের হাতে পৌঁছে দিয়েছি। অনেক ক্রেতাই বারবার অর্ডার করেছেন।”
পরবর্তীতে শুধু আম নয়, তালিকায় যুক্ত হয় মৌসুমি লিচু ও জাম। যদিও ফলগুলো পরিবহনে সতর্কতা বেশি রাখতে হয়। ফরহাদ জানান, গত মৌসুমে প্রায় ৪০ হাজার টাকার লিচু ও ১০০ কেজির মতো জাম বিক্রি করেছেন।
ঢাকা, চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় কুরিয়ার ও বাসের মাধ্যমে সরবরাহ করেছেন রাজশাহীর আম। গত মৌসুমে তাঁর সরবরাহ করা আমের পরিমাণ ছিল প্রায় ২৫-২৬ হাজার কেজি।
নিজের খরচ মেটানোর পাশাপাশি এই উদ্যোগে যুক্ত করেছেন আরও তিনজনকে। দুইজন ডেলিভারি ম্যান ও একজন বাগান সহকারী কাজ করছেন তাঁর সঙ্গে।
এ বছরও অনলাইনে আম ও লিচুর অগ্রিম অর্ডার নিচ্ছেন ফরহাদ। তিনি জানান, আগামী ১০-১৫ দিনের মধ্যে আম ও লিচু পাকতে শুরু করবে। তখন থেকেই সরবরাহ কার্যক্রম শুরু করবেন।
তার ভাষায়, “এই ব্যবসায় শেখার অনেক কিছু আছে। নিয়মিত চেষ্টা করছি নিজেকে আপডেট রাখতে। ধৈর্য, পরিশ্রম আর ইচ্ছা থাকলে সফলতা আসবেই।”
ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা জানতে চাইলে ফরহাদ বলেন, “পণ্যের মান ধরে রেখে আরও বড় পরিসরে কাজ করতে চাই। পড়াশোনা শেষে পুরোপুরি এই ব্যবসায় যুক্ত থাকার ইচ্ছা আছে।
রবিউল হাসান