ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ০১ মে ২০২৫, ১৮ বৈশাখ ১৪৩২

ব্যক্তিগত চেম্বারে বাণিজ্য বাড়াতে ডাক্তারদের সিন্ডিকেট

যশোর হাসপাতালে বৈকালিক চিকিৎসা বন্ধের উপক্রম

স্টাফ রিপোর্টার, যশোর অফিস

প্রকাশিত: ২০:৪৪, ২০ এপ্রিল ২০২৫

যশোর হাসপাতালে বৈকালিক চিকিৎসা বন্ধের উপক্রম

যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে বৈকালিক চিকিৎসাসেবা কার্যক্রম বন্ধ হতে যাচ্ছে। অধিকাংশ ডাক্তার চেম্বারে ঠিকমতো আসছেন না। আবার কয়েকজন ডাক্তার বৈকালিক চিকিৎসাসেবা দিতে পারবেন না বলে সরাসরি জানিয়ে দিয়েছেন। অথচ সরকারি হাসপাতালে স্বল্পমূল্যে স্বাস্থ্যসেবা দিতে দুই বছর আগে বৈকালিক সেবা চালু করা হয়েছিল। ব্যক্তিগত চেম্বারে বাণিজ্য বাড়াতে ডাক্তাররা সিন্ডিকেট করে সেবা বন্ধ করায় অনেকে অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন। হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক বলছেন, মাসিক মিটিংয়ে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করা হলে প্রায় ডাক্তার বৈকালিক চিকিৎসাসেবা কার্যক্রমে অনাগ্রহ প্রকাশ করেছেন।
তবে ঘোষণা ছাড়াই হঠাৎ এ সেবা বন্ধ করে দিয়েছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। এতে বিপদে পড়েছেন রোগীরা। অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন কেউ কেউ। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বলছে, বৈকালিক সেবা চালু হলেও প্রচারের অভাবে সেবা নিতে আসে না মানুষ। এ ছাড়া জুলাই বিপ্লবের পর অধিকাংশ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে চিকিৎসকদের ঢাকায় আনা হয়েছে। ফলে চিকিৎসক সংকটের কারণে এমনিতেই সেবা বন্ধ হয়ে গেছে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলছেন, নতুন করে বৈকালিক সেবা চালু হচ্ছে না। তবে সারাদেশে রেফারেল পদ্ধতির মাধ্যমে সেবা দেওয়ার পরিকল্পনা করছে সরকার।
জানা গেছে, ২০২৩ সালের ১৩ জুন যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে বৈকালিক চিকিৎসাসেবা কার্যক্রমের উদ্বোধন করা হয়। বৈকালিক স্বাস্থ্যসেবায় রোগ নির্ণয়ের সুবিধাও যুক্ত করা হয়। প্রতিদিন বিকেল ৩টা থেকে সন্ধ্যা ৫টা পর্যন্ত সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানে চিকিৎসকদের পালাক্রমে রোগী দেখার কথা বলা হয়। বৈকালিক স্বাস্থ্যসেবায় নির্ধারিত ফি ধরা হয় ৫০০ টাকা। এ টাকার মধ্যে অধ্যাপক পাবেন ৪০০ টাকা, চিকিৎসাসেবায় সহযোগিতাকারী ৫০ এবং সার্ভিস চার্জ ৫০ টাকা ধরা হয়। এভাবে সহযোগী অধ্যাপক পাবেন ৩০০ টাকা, সহকারী অধ্যাপক ২০০ এবং এমবিবিএস বা বিডিএস ও সমমানের চিকিৎসকরা পাবেন ১৫০ টাকা। এক্ষেত্রে চিকিৎসাসেবায় সহযোগিতাকারীর জন্য ২৫ টাকা এবং সার্ভিস চার্জ ২৫ টাকা নির্ধারণ করা হয়। এরপর থেকে প্রতিদিন বিকেল ৩টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত পর্যায়ক্রমে ৪২ চিকিৎসক সরকার নির্ধারিত মূল্যে চিকিৎসা ও রোগীর পরীক্ষা-নিরীক্ষায় হাসপাতালের প্যাথলজি বিভাগ স্বল্পমূল্যে সেবা দিয়ে আসছিলেন। এরমধ্যে মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ছিলেন ছয়জন, নিউরোমেডিসিন বিশেষজ্ঞ একজন, নেফ্রোলজি বিশেষজ্ঞ একজন, কার্ডিওলজি বিশেষজ্ঞ তিনজন, রিওমাটোলজি বিশেষজ্ঞ একজন, সাইকিয়াটিু বিশেষজ্ঞ একজন, অর্থো-সার্জারি বিশেষজ্ঞ তিনজন, সার্জারি বিশেষজ্ঞ চারজন, নাক, কান ও গলা বিশেষজ্ঞ তিনজন, সাতজন গাইনি বিশেষজ্ঞ, শিশু বিশেষজ্ঞ ছয়জন এবং চর্ম ও যৌন বিশেষজ্ঞ ছয়জন চিকিৎসক ছিলেন। অল্প টাকায় পরামর্শ দিয়ে সাধারণ মানুষ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের সেবা গ্রহণ করছিলেন। কিন্তু বর্তমানে সেবাটি নেই বললেই চলে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত কয়েক মাস ধরে হাসপাতালে বৈকালিক চিকিৎসাসেবায় দায়িত্বরত চিকিৎসকরা ঠিকমতো চেম্বারে আসছেন না। দায় এড়াতে তাদের সহকারীদের চেম্বারে সামনে বসিয়ে রাখেন। বৈকালিক চিকিৎসাসেবার সুফল মিলছে না বলে খুব বেশি রোগীও আসেন না। কোনো রোগী আসলে তাদের বসিয়ে রেখে সহকারীরা চিকিৎসকদের মোবাইলে কল দেন। এরপর চিকিৎসক ইচ্ছা হলে সেবা দিতে আসেন। নতুবা রোগীদের ফিস-এর টাকা ফেরত দিতে বলা হয়। এতে বিরক্ত হচ্ছেন সেবাপ্রত্যাশীরা।
গত বুধবার মাগুরার শালিখা উপজেলার আড়পাড়া থেকে এসেছিলেন রোজিনা বেগম নামে এক নারী। তিনি জানালেন তার শিশু পুত্র ওবায়দুল্লাহকে ডাক্তার দেখানোর জন্য এসেছিলেন। কিন্তু ডাক্তার বসেননি। তাই ফিরে যেতে বাধ্য হচ্ছেন। সরকারি হাসপাতালে এসেছিলেন অল্প টাকায় বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের চিকিৎসাসেবার আশায়।
সরেজমিনে দেখা গেছে, বুধবার অধিকাংশ চিকিৎসকের চেম্বার ছিল ফাঁকা। বৈকালিক চিকিৎসাসেবা কার্যক্রমে কেউ অংশগ্রহণ করেননি। এদিন শিশু বিভাগে ডা. জসিম উদ্দিন, মেডিসিন বিভাগে ডা. মধুসূদন পাল, গাইনি বিভাগে ডা. মাসকিয়া, নাক কান গলা বিভাগে ডা. এখলাসুর রহমান ও চর্ম-যৌন রোগ বিভাগে ডা. কানিজ ফাতেমার দায়িত্ব পালনের কথা ছিল। কিন্তু তারা কেউই বৈকালিক চেম্বারে আসেননি।
অভিযোগ উঠেছে, বৈকালিক চিকিৎসাসেবা চালু থাকলে ডাক্তাররা বিকেল ৩টা থেকে ৫টা পর্যন্ত ব্যক্তিগত চেম্বারে রোগী দেখতে পারেন না। যে কারণে তাদের আয় কমে যায়। ব্যক্তিগত চেম্বারে বাণিজ্য বাড়াতে তারা সিন্ডিকেট করে বৈকালিক চিকিৎসাসেবায় চেম্বার করা বন্ধ করে দিচ্ছেন। ডাক্তাররা না আসায় রোগীও কমে গেছে। হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. হুসাইন শাফায়াত জানান, দায়িত্ব গ্রহণের পর মাসিক মিটিংয়ে বৈকালিক চিকিৎসাসেবা কার্যক্রম নিয়ে আলোচনা করেছিলাম। তখন অধিকাংশ চিকিৎসক দায়িত্ব পালনে অনাগ্রহ প্রকাশ করেন।
বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা চেম্বারে আসা বন্ধ করে দিয়েছেন। কেউ কেউ আসতে পারবেন না বলে দিয়েছেন। কিন্তু সরকারিভাবে নির্দেশনা না থাকায় তাদের বিরুদ্ধে প্রশাসনিকভাবে বল প্রয়োগ করা যাচ্ছে না। তবে তিনি সুপারিশ করেছেন, রোগীদের সুবিধার্থে সেবা কার্যক্রমটি চালু রাখার জন্য।

×

শীর্ষ সংবাদ:

যেই সরকার জনগণের ভোটে নির্বাচিত হবে তারা জনগণের কাছে দায়বদ্ধ থাকবে: আমীর খসরু
জামায়াত নেতারা রাজাকার হলে পাকিস্তানে গাড়ি বাড়ি থাকতো : শামীম সাঈদী
এনসিপির সঙ্গে আমার ব্যক্তিগত সম্পৃক্ততা নেই- উমামা ফাতেমা
‘বাংলাদেশি’ সন্দেহে আটকদের অধিকাংশই ভারতীয় মুসলমান
ইয়েমেনে হামলা চালিয়েই সাগরে ডুবে গেল মার্কিন সর্বাধুনিক যুদ্ধবিমান
জামিন পেলেননা তারেক রহমানের খালাতো ভাই তুহিন
লন্ডনে আজ আর্সেনাল পিএসজি মহারণ
১৭ অভিনয়শিল্পীর নামে মামলা, তালিকায় আছেন নুসরাত ফারিয়া-অপু বিশ্বাস-ভাবনাসহ অনেকেই
১০০ টাকা মূল্যমানের প্রাইজবন্ডের ১১৯তম ড্র অনুষ্ঠিত হবে আগামীকাল
স্বর্ণের দাম, রেকর্ড উচ্চতা থেকে পতনের পথে
কুমিল্লায় পুলিশ-সেনাবাহিনীর চাকরির নামে প্রতারণা: দালালসহ ১৩ জন গ্রেফতার
১২ বছর বয়সী ছেলে শিক্ষার্থীকে বলাৎকারের অভিযোগে ৩ মাদ্রাসা শিক্ষক গ্রেফতার